হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর গ্রেপ্তার
লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নূর মোহাম্মদ ওরফে শামীমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার মাহফুজুল আলম রাসেল গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর মোহাম্মদ ওরফে শামীম বিদেশ থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ২০০৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার পর নূর মোহাম্মদ তিন বছর নওগাঁয় আত্মগোপনে ছিলেন। পরে তিনি ভিন্ন নামে পাসপোর্ট করে ২০০৮ সালে সৌদি আরবে চলে যান।
এর আগে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চার জঙ্গি হলেন- মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগনে শহীদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ ওরফে শামীম।
চারজনের মধ্যে জেএমবির শুরা সদস্য মিজানুর ও আনোয়ারুল কারাগারে আছেন। সালেহীন ও নূর মোহাম্মদ পলাতক ছিলেন।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় পরদিন তাঁর ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর একই বছরের ১২ আগস্ট জার্মানিতে মারা যান অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। এরপর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
মামলাটি তিন বছর তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৪ জানুয়ারি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়।
মামলার নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই। এই দুই জঙ্গি নেতার নির্দেশে আতাউর রহমান সানির নেতৃত্বে মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ, আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগনে শহীদ, নূর মোহাম্মদ ওরফে শামীম, হাফিজ মাহমুদসহ অন্যরা হুমায়ুন আজাদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন।
মামলার নথি, অভিযোগপত্র ও দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে এ তথ্য জানা যায়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া দুই আসামি হলেন মিজানুর ও আনোয়ারুল।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মিজানুর বলেছিলেন, ‘আমরা জানতে পারি, বইমেলা থেকে প্রতিদিন রাত ৮টা বা সাড়ে ৮টার দিকে হুমায়ুন আজাদ হেঁটে বাসায় যান। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সেদিন আমিসহ অন্যরা বাংলা একাডেমিতে যাই। রাত সোয়া ৯টায় হুমায়ুন আজাদ যখন বইমেলা শেষে বাসায় ফিরছিলেন, তখন আমরা তাঁর পিছু নিই।’
জবানবন্দিতে মিজানুর আরো বলেছিলেন, ‘হুমায়ুন আজাদকে আমি ও নূর মোহাম্মদ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করি। তখন দূরে থাকা লোকজন ছুটে এলে আনোয়ারুল একটা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। তখন লোকজন বিক্ষিপ্তভাবে পালাতে থাকে। আমরাও পালিয়ে যাই। রাত ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে শায়খ আবদুর রহমানকে এ ঘটনা জানাই।’
২০০৪ সালে অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি বিরোধী অভিযান জোরদার করলে নুর মোহাম্মদ দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।