পর্যটকের অপেক্ষায় গোয়াইনঘাটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

নদী, পাহাড়, চা বাগান আর পাহাড়ি ঝর্ণার সমন্বয়ে অপূর্ব রূপলাবণ্যে ভরা গোয়াইনঘাটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। নয়নাভিরাম এসব সৌন্দর্য অবলোকন করতে ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের প্রকৃতিকন্যা জাফলং, পান্তুমাই ঝর্ণা, সোয়াম ফরেস্ট, রাতারগুল ও জল-পাথরের বিছনাকান্দিতে।

ঈদ-পরবর্তী ছুটির দিনগুলোতে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মূখর হয়ে ওঠে এসব পর্যটন কেন্দ্র। তাই প্রকৃতির আপন মহিমায় গড়ে ওঠা এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে আগত পর্যটকদের বরণ করে নিতে। ঈদকে সামনে রেখে পর্যটন কেন্দ্রের আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন কসমেটিকস ও উপহার সামগ্রীর দোকানগুলো সাজানো হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আমেজে।

গোয়াইনঘাটের চারটি পর্যটন কেন্দ্রের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভিড় করেন প্রকৃতিকন্যা জাফলং ও জল-পাথরের বিছনাকান্দিতে। জাফলংয়ের মায়াবী ঝর্ণা, পিয়াইন নদীতে বহমান স্বচ্ছ জলের স্রোতধারা, ওপারে ডাউকি নদীর ওপর ঝুলন্ত ব্রিজ, সমতল ভূমিতে জাফলং চা বাগান, তামাবিল জিরো পয়েন্ট ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের খাসিয়া পল্লী- এসবের সব কিছুই খুব সহজেই আকৃষ্ট করে আগত পর্যটকদের। এ ছাড়াও বিজিবির সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ি এলাকায় রয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড নির্মিত দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি ও জাফলং চা বাগান সংলগ্ন এলাকায় পিয়াইন নদীর ওপর জাফলং সেতু। যে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে একই সঙ্গে দেখা যায় সমতল ভূমির চা বাগান, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলের স্রোতধারা ও ভারতের মেঘালায়ের সবুজ পাহাড়।

অন্যদিকে বিছনাকান্দিতে রয়েছে জল আর পাথরের মিতালীতে জল-পাথরের বিছানা। যেখানে জলকেলি ও হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন পর্যটকরা। তবে অনেক সময় আনন্দ ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অসচেতনতা পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে। তখন আনন্দ ভ্রমণ পরিণত হয় বিষাদে। বিষয়টি লক্ষ্য রেখে জাফলং ও বিছনাকান্দির আকর্ষণীয় স্থানগুলো পর্যটকবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থানে সতর্কতামূলক নির্দেশনা সংবলিত সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ পর্যটন সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীদেরও এ বিষয়ে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি তারা যেন পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকেন।

বৃহত্তর জাফলং পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ভ্রমণে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের নির্ভেজাল খাবার পরিবেশন এবং ন্যায্য মূল্যে সেবা প্রদানে আমরা বদ্ধপরিকর। পর্যটকরা আমাদের ব্যবসার মূল চালিকাশক্তি। তাদেরকে সম্মানের সহিত পরিদশনসহ সেবার মানসিকতা প্রদর্শন করলেও অত্রাঞ্চলের পর্যটন স্পটে পর্যটকের উপস্থিতি আরও বাড়বে। সে লক্ষ্যেই আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

গ্রিন রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী বাবলু বখত বলেন, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে ঢল নামে পর্যটক দর্শনার্থীদের। এবারো পর্যটকদের আনাগোনা আগেকার মতো অথবা বেশি হতে পারে। এরই লক্ষ্যে আমাদের কাস্টমারদের কথা বিবেচনা করে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাব জোনের ইন্সপেক্টর রতন শেখ বলেন, গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পটসমূহে বেড়াতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিং, ট্যুরিস্ট গাইড ও ক্যামেরাম্যানদের দ্বারা প্রতারিত না হন, আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের পক্ষ থেকে পোশাক এবং সাদা পোশাকে একাধিক ইউনিট নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে ব্যবস্থা নিয়েছি। পর্যটকদের নিরাপদ আগমন ও প্রস্থানে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি জোরদার থাকবে।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে প্রচণ্ড তাপদাহ চলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র মতে ঈদের সময় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই লক্ষ্যে গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পটসমূহে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে এবং তাদের ভ্রমণ নির্বিঘ্নকরণে উপজেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে। বৃষ্টিপাত ও বর্ষণমুখর পরিবেশে আমাদের গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পটগুলো আপন রূপ মেলে ধরে। প্রকৃতির রূপ লাবণ্যতায় মুখরিত হয়ে উঠে প্রতিটি পর্যটন স্পট। জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুলের পর এবার পর্যটন ফ্যাসিলিটিজ বাড়ানো হয়েছে পান্তুমাইয়ে। ভবিষ্যতে মরকিটিলাসহ আশপাশের নতুন নতুন স্পটে পর্যটকদের নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ভ্রমণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য