গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সাত দাবি
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন সম্মানের সঙ্গে নিশ্চিত করাসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন আহতরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের সঙ্গে এক বৈঠকে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের একটি প্রতিনিধিদল এ দাবি জানায়। দাবিগুলো বাস্তবায়নে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যেই দাবিদাওয়া পূরণ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আহতদের চিকিৎসায় অবহেলার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম, আন্দোলনে শহীদ মুগ্ধর যমজ ভাই ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া শতাধিক আহত ছাত্র-জনতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে আহতরা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন।
গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়ে যাঁরা অঙ্গ হারিয়েছেন, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তাঁদের মেডিক্যাল ফাইল তদন্ত করে কোনো ডাক্তার বা মেডিক্যালের অবহেলার কারণ খুঁজে পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করে সেই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আগামী দিনে রাষ্ট্র সংস্কারে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধাদের মতামত গ্রহণ করতে হবে।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আজকে (গতকাল) কতগুলো কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে যাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন, তাঁদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ও বেসরকারি বিভিন্ন ফাউন্ডেশনসহ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘যাঁরা অন্ধ হয়েছেন তাঁরা সারা জীবন কিভাবে পরিচালনা করবেন সে জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী যথাযথ প্রশিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে পঙ্গুদের জন্য যাঁর যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন দ্রুত ফিজিওথেরাপি, যন্ত্রের প্রয়োজন হলে তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আমাদের আলোচনায় এসেছে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রবোটিকস চিকিৎসা ও উন্নত যন্ত্রাংশের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে যাঁরা মানসিক ট্রমার মধ্যে আছেন তাঁদের টেলিমেডেসিনের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি দেওয়া হবে। আমাদের আট বিভাগে একটি করে সেন্টার থাকবে, সেখান থেকে এই সেবা দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ১৭ নভেম্বরের পর একটি সাপোর্ট সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে ৫ আগস্টের আগে যাঁরা এই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিলেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। সেখানে আপনাদের সব অভিযোগ দেবেন এবং সেখান থেকেই সমাধান করা হবে। এ ছাড়া সারা দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আপনাদের জন্য ডেডিকেটেড বেড থাকবে। বিশেষ চিকিৎসা ক্ষেত্রে আপনাদের ঢাকামুখী হতে হবে। ঢাকার সব হাসপাতাল একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে আনা হবে; কোন হাসপাতালে আপনার জন্য সিট আছে, সেটা জানতে পারবেন। এভাবেই আমরা আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে চাই। আহতদের জন্য যে সেবা প্রয়োজন, সেটা যদি দেশে না হয় তাহলে বিদেশে নিয়ে সেই সেবা নিশ্চিত করা হবে। এসব প্রক্রিয়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনোটি তিন দিন আবার কোনোটি পাঁচ দিন বা ১৫ দিন লাগতে পারে। তবে আমি আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব দৃশ্যমান হবে। যেগুলো স্বল্পমেয়াদি সেগুলো দ্রুত হবে, যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদি সেগুলো একটু সময় লাগবে। তবে প্রক্রিয়ার মধ্যে চলবে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ কোনো ধরনের গাফিলতিকে কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির বন্দোবস্ত করা হবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যাঁরা আন্দোলনে আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসা-পুনর্বাসন এবং শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করা রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্তব্য।’
তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো সরকারের নির্দেশনার বিষয় ছিল না, রাজনৈতিক দলগুলোর এই শহীদ ও আহতদের নিয়ে কাজ করা তাদের রাজনৈতিক কর্তব্য। সর্বোপরি এটা আমাদের জাতীয় কর্তব্য, এই কর্তব্য যেন কেউ অবহেলা না করি। বর্তমান সরকারই তাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করতে পারবে। এই বিশ্বাস আমাদের সবার আছে। সেই জিনিসটা তারা বারবার চাচ্ছে। কারণ নির্বাচন বলে রাজনৈতিক আলাপ আনা হয়, যেটা সবার ভেতরে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি করছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যে একটি টাইমলাইন দেওয়া হলো পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে একটি রূপরেখা দেওয়া হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বল্প মেয়াদের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই। একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে উদ্যোগ শুরু হবে।’