এবারও রোজার আগে উত্তাপ বাড়ছে ব্রয়লারে
সিলেটের সময় ডেস্ক :
আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী দৌড়ে এবার শামিল হয়েছে ব্রয়লার মুরগিও। গতবারও রমজানের আগে হঠাৎ লাফিয়ে বেড়ে রেকর্ড দামে বিক্রি হয় পণ্যটি। এবারও রোজার আগ মুহূর্তে ব্রয়লারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে ইতোমধ্যে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে স্বল্প আয়ের প্রোটিনের সহজলভ্য উৎস হিসেবে পরিচিত ব্রয়লার মুরগি এখন অনেকের নাগালের বাইরে। দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দিলেও ভোক্তাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত মুনাফার জন্য এবারও রোজার আগে দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লারের মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা পর্যন্ত। এলাকা ভেদে কোনো কোনো দোকানে এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দেড়েক আগেও এ মুরগি ১৯০ টাকায় পাওয়া গেছে। গত বছর রোজার আগ মুহূর্তেও হঠাৎ দাম লাফিয়ে বেড়ে প্রথমে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় পৌঁছায়। পরে তা আরও বেড়ে আড়াইশতে বিক্রি হয়। এবারও রোজাকে কেন্দ্র করে অসাধুচক্র অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মতো ব্রয়লালের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
সরবরাহ সংকটের কারণ দেখিয়ে পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানান মালিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. ফারুক হোসেন এবং কদমতলী সাদ্দাম মার্কেট বাজারের মো. শাখাওয়াত। শাখাওয়াত বলেন, সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়তি চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম হলে কাপ্তানবাজারে শেষ দিকে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু গত সপ্তাহে প্রতিদিনই টানা দাম চড়া রয়েছে। ফারুক বলেন, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, যা ২০০ থেকে ২০৫, ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। গত এক সপ্তাহ ধরেই বাজার চড়া।
পাইকারদেরও ঢালাও অজুুহাত- সরবরাহ সংকট। কাপ্তানবাজারের একাধিক পাইকারের দাবি, পাইকারি বাজারে দামে কারসাজি হচ্ছে না। তাদেরই বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তা ছাড়া খামারেও ব্রয়লারের দাম এখন বাড়তি। তবে এখানকার একজন ব্যবসায়ী জানান, এখনো ব্যবসায়ী সমিতির চক্র দাম বেঁধে দিচ্ছে। চাহিদা-সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে নয়, মূলত তাদের নির্ধারিত দামেই বাজারে দাম ওঠানামা করছে।
এদিকে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিম ও একদিনের বাচ্চার বাজারে বড়দের আধিপত্যে হুটহাট অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। এতে ছোট খামারিরা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। একদিকে পোল্ট্রি ফিডের বাড়তি দাম। অপরদিকে একদিনের বাচ্চার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে ছোট খামারগুলোতে উৎপাদন কমেছে। ফলে বাজারে চাহিদা বাড়লে জোগান ঠিক থাকছে না। এ সুযোগে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা তুলে নিচ্ছে। এতে মুরগির দাম হঠাৎ বেড়ে যাচ্ছে। আর একদিনের বাচ্চার বাজার পুরোটাই বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কব্জায় বলে অভিযোগ প্রান্তিক খামারিদের। তারা বলছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কায়দায় বাচ্চার সরবরাহ ও মূল্য নিজেদের মতো নিয়ন্ত্রণ করছে। যার প্রভাব খামারে মুরগির উৎপাদন ও দামে গিয়ে পড়ছে।
খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে একদিনের বাচ্চার দাম ৫২ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও বর্তমানে প্রতি পিস বাচ্চা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামেও অনেকে বাচ্চা পাচ্ছেন না। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের প্রান্তিক খামারি বিসমিল্লাহ্ পোল্ট্রি ফার্মের কর্ণধার মো. কাওসার আহমেদ বলেন, বেশি দাম দিয়েও তো বাচ্চা পাওয়া যায় না। অথচ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ঠিকই ৬০ টাকায় বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে। এভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে বাচ্চার দামে বেশি মুনাফা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এর প্রভাব মুরগির দামে পড়ছে।
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশস-বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদারও বলেন, বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি পিস বাচ্চার উৎপাদন খরচ ৩০ টাকার বেশি নয়। অথচ করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে বসে দাম নির্ধারণ করল ৫২ টাকা। তারপরও বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকায়। কিছু দিন আগে ৭০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। বাচ্চার বাজার এখন পুরোটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আজ এক দাম তো কাল আরেক। একদিনের বাচ্চার দাম বাড়লে তা সরাসরি খামারে মুরগির দাম বাড়িয়ে দেয়। মুরগির বাজারে আবারও দাম বাড়ছে। এ সংকট করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করছে।