সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আসামির স্বীকারোক্তি

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের প্রকাশ মুন্সি মেম্বার (৬৭) ও মো. মেহরাজকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর ঘটনার কথা অকপটে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তারকৃতরা।

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার জানান, নির্যাতিতা গৃহবধূর ঘরে গরু বিক্রির এক লাখ টাকা গচ্ছিত আছে– এমন কথা বলে মুন্সি মেম্বার গভীর রাতে তার সহযোগী মেহরাজকে সিঁধ কেটে সেই টাকা চুরি করতে পাঠান।

সিঁধ কেটে ঘরে প্রবেশ করে তিনি দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার পর হারুনের সঙ্গে মুন্সি মেম্বারকে দেখতে পেয়ে মেহরাজ নিশ্চিত হন যে, টাকা চুরি করতে নয় বরং গৃহবধূকে ধর্ষণ করতেই মুন্সি মেম্বার ও হারুন তাকে দিয়ে দরজা খুলিয়েছেন। 

তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের নিকট মেহরাজ বলেন, ‘মুন্সি মেম্বার ও হারুন গৃহবধূকে (৩০) অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পাশের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ দৃশ্য দেখে আমিও পাশের কক্ষে থাকা মেয়েকে (১২) হাত-মুখ বেঁধে ধর্ষণ করি।

পরে মা-মেয়ের নাক-কানের স্বর্ণালংকার ও স্কুলব্যাগে থাকা ১৭ হাজার ২২৫ টাকা নিয়ে আমরা বেরিয়ে আসি।’ 

গৃহবধূর দায়ের করা মামলায় একজন অজ্ঞাতপরিচয় আসামি ছিলেন। সেই আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হন মেহরাজ। তিনি চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চর কাজী মোখলেছ গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে।

এলাকায় তিনি সাবেক মেম্বার আবুল খায়ের মুন্সির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তার পরামর্শে সিঁধ কাটায় ব্যবহৃত কোদাল ও মা-মেয়েকে ভয় দেখানোর জন্য ব্যবহৃত দা ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়। ভুক্তভোগীদের বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনার সময় অভিযুক্তের পরিহিত কালো কানটুপি ও কালো প্যান্ট মুন্সি মেম্বারের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। 

এর আগে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে সুবর্ণচরের চরজব্বর থানায় মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। এতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল খায়ের প্রকাশ মুন্সি মেম্বারকে প্রধান আসামি করা হয়।

মামলায় অপর আসামিরা হলেন- চর কাজী মোখলেছ গ্রামের মৃত বশির আহম্মদের ছেলে গরু ব্যবসায়ী মো. হারুন (৪২) এবং অপরজন অজ্ঞাতপরিচয় আসামি ছিলেন। 

পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমি সাংবাদিকসহ নোয়াখালীবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে যে যেভাবে পেরেছেন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। পলাতক হারুনও পালিয়ে বাঁচতে পারবে না। তাকে পুলিশের হাতে ধরা পড়তেই হবে। গ্রেপ্তার দুই আসামিকে রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’

এর আগে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টায় বাড়ির সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে ৯৯৯-এ কল পেয়ে চরজব্বর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বার দীর্ঘদিন থেকে তাকে উত্যক্ত করে আসছিলেন। মাঝেমধ্যে টেলিফোন করে কুপ্রস্তাব দিতেন। কথা না শুনলে খারাপ পরিণতির হুমকি দিতেন। সোমবার রাতে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে হাত-মুখ বেঁধে মাকে দুজন এবং মেয়েকে অপরজন ধর্ষণ করেন। পরে মা-মেয়ের নাক-কানের স্বর্ণালংকার ও নগদ টকা নিয়ে আসামিরা চলে যান।

নির্যাতনের শিকার ওই নারীর স্বামী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিনমজুরি করে দিনযাপন করি। কয়েক মাস আগে ওই এলাকায় পাঁচ শতক জমি কিনে বাড়ি করি। আসামিরা খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক। আমি এ জঘন্য ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষিদের ফাঁসি চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজীব, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) নিত্যানন্দ দাস, চরজব্বার থানা পুলিশের ওসি রফিকুল ইসলামসহ জেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের অন্যান্য