সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসির বাস কমানোয় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

নিউজ ডেস্ক: দাবি আদায়ের নামে সিলেটে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নৈরাজ্য চলছেই। তাদের দাবির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। যাত্রীদের দাবিকে উপেক্ষা করে কথায় কথায় ধর্মঘট আহ্বান করে অরাজকতাসৃষ্টি করছেন তারা। এমনকি প্রশাসনও নমনীয় তাদের বেপরোয়া আচরণের কাছে। দাবি আদায়ের নামে নৈরাজ্য না ঠেকিয়ে সমঝোতা করে খুশি করা হচ্ছে মালিক-শ্রমিকদের।

সর্বশেষ পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহারে সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস সীমিত করার সিদ্ধান্তে বিভাগীয় প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার কথা জানিয়েছেন অনেকে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে ফের বৈঠক করার কথা রয়েছে সিলেট বিভাগীয় প্রশাসনের।

গত ৩ জুন সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসির বাস সার্ভিসেস চালু হয়। এর প্রতিবাদে ওই দিনই সুনামগঞ্জ-সিলেট পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নামে বাস ধর্মঘট ডাকা হয়। এরপর আবার ২৪ জুন সিলেট বিভাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়।

এই ধর্মঘটের ঘোষণার পরই এটিকে ‘অযৌক্তিক’ দাবি করে সুনামগঞ্জে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে সিলেটেও। বিআরটিসির বাস চলাচলের দাবিতে অনঢ় থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়ালে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত ২১ জুন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিবহন মালিক-শ্রমিক বৈঠক হয়।

বৈঠকে সরকারি ব্যবস্থায় সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস চলাচলসহ কয়েকটি দাবি মেনে নেয়ায় পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও যাত্রীসেবার মানসহ বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। কিন্তু গত ২৮ আগস্ট সিলেট-সুনামগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধসহ ৫ দাবিতে সোমবার ফের অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় শ্রমিকরা। পরে ধর্মঘট নিয়ে রোববার রাতে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস সীমিত করার আশ্বাস দেন বিভাগীয় কমিশনার। সিলেটের মাঠ প্রশাসনের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এমন সিদ্ধান্তে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহর বড়ভাই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান তার ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘রাতের আঁধারে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার কোন অদৃশ্য কারণে বাসমালিকদের সাথে আঁতাত করলেন? সুনামগঞ্জের মানুষের দাবি ও ন্যায্য প্রাপ্যকে উপেক্ষা করলেন? বিআরটিসির বাস সারাদিন চলবে। মানুষ সেটি চায়। বাসমালিকরা তা দিতে রাজি নন, এটা মামা বাড়ির আবদার নাকি? তারা যাত্রীসেবা উন্নত করে প্রতিযোগিতায় টিকবেন, এটাই হবে ফয়সালা।’

তিনি আরও লেখেন, ‘বিআরটিসি বাস জনমত উপেক্ষা করে বন্ধ করার প্রশাসনিক ও দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেট ষড়যন্ত্র চলবে না। মগের মুল্লুক নাকি তুঘলকি কারবার এসব? কারা এসবের নেপথ্য কারিগর? এদের মুখোশ খুলে বিআরটিসির বাস চালু রাখা হবে। প্রশাসন জনগণের পক্ষে থাকবে, জনসেবা নিশ্চিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করবেন। জনগণকে ঠকিয়ে মুনাফালোভীদের স্বার্থ রক্ষা নয়। বিআরটিসি বাস জনগণের চাহিদা অনুযায়ী চলবেই, আপস হবে না এখানে।’

সিলেট-সুনামগঞ্জ যাত্রীকল্যাণ পরিষদের নির্বাহী সদস্য, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আল আজাদ বলেন, আমাদের দাবি ছিল বিআরটিসি বাসও চলবে, অন্যান্য বাসও চলবে। এটা পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কোনো দাবি না। কিন্তু প্রশাসন বিআরটিসি বাস সীমিত করার যে আশ্বাস দিয়েছেন তা-জনগণের দাবি পরিপন্থী। এখানে জনগণের অধিকারকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, জনগণ কিন্তু সাধারণ বাস চলাচল বন্ধ করার কথা বলেনি। সরকারিভাবে বিআরটিসি বাস চলবে। পাশাপাশি সাধারণ বাস চলবে। যাত্রীসেবা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, প্রতিযোগিতা হতে পারে। তাই বলে বিআরটিসি বাস বন্ধ করতে হবে- এমন কোনো কথা না। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিআরটিসি বাসও চলবে, অন্য বাসও চলবে।

আল আজাদ আরও বলেন, এর আগে সিদ্ধান্ত হয়েছে এজেন্ট ছাড়া সরকারি ব্যবস্থায় বিআরটিসি বাস চলাচলের। সে আলোকে এভাবেই বাস চলছে। হঠাৎ করে আবার কেন তারা এই দাবি তুলল। শুধু ব্যবসা করার মানসিকতা নিয়ে থাকলে হবে না, জনগণের সেবা করার মানসিকতাও তৈরি করতে হবে। কথায় কথায় ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য থেকে সরে আসতে হবে। এটা কোনো সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না। এসব এখন বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, তাদের সব দাবি যে অযৌক্তিক তা না। সড়কে তারা যে হয়রানির শিকার হচ্ছে সেটা প্রশাসনকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের চলাচলেও শৃঙ্খলা আনতে হবে।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা জানান, প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে জনগণের দাবি প্রতিফলিত হয়নি। এটা পুনঃবিবেচনা করা হোক। তা না হলে জনগণ আন্দোলনে নামবে। অন্যান্য বাসের সাথে বিআরটিসির বাস চলবেই।

তিনি বলেন, কে কোন বাসে চলবে সেটা তার অধিকার। মানুষের এই অধিকার হরণ করার ক্ষমতা কারো নেই। যদি কেউ এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।

কাশমির রেজা বলেন, পরিবহন শ্রমিকরা কথায় কথায় ধর্মঘট ডেকে যে নৈরাজ্য সৃষ্টির হুমকি দেয়, জনগণ তা আর মানবে না। শ্রমিকরা যখনই ধর্মঘট ডাকবে তখনই মাঠে নেমে তা প্রতিরোধ করার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এ বিভাগের অন্যান্য