বিদ্যুতে প্রাক্কলিত বাজেট ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

এক দশক ধরে শীর্ষ বাজেট বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অন্যতম বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটেও নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিদ্যুৎ বিভাগ। মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে বাজেট প্রাক্কলন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ ছাড়া আগামী দুই অর্থবছর অর্থাৎ ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরের প্রক্ষেপণ বাজেট নির্ধারণ ও সিলিং চূড়ান্ত করেছে এই বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটি।

জানা গেছে, সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের বাজেট ব্যবস্থাপনার কমিটির একটি সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান। ওই বৈঠকে প্রস্তাবিত ব্যয়সীমা ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে পরিচালনা বাজেট বাবদ ৫৭ দশমিক ২৮ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। এ বাজেটে প্রাক্কলনে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) ফান্ড থেকে আসবে ১৩ হাজার ১৫৯ দশমিক ৭২ কোটি টাকা এবং পিএ ফান্ড থেকে আসবে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাজেট প্রাক্কলনে ব্যয়সীমার প্রস্তাবনায় রয়েছে সচিবালয় প্রায় ২০ কোটি টাকা, প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের দপ্তর ৫ কোটি টাকা, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ব্যয় (স্রেডা) ১৩ কোটি, বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল ১৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এদিকে একই দপ্তর ও বিভাগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পরিচালন প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬০ কোটি ৫৪ লাখ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩ কোটি ৪৬ লাাখ।

এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটের ব্যয়সীমার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের ১৪টি কোম্পানির এডিপিভুক্ত চলমান প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। নন এডিপি স্কিম দুই হাজার ৫৩১ দশমিক ৭১ কোটি টাকা। চলমান প্রকল্পের মোট ব্যয় ১২ হাজার ৯৪৪ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা। অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য থোক বরাদ্দ ২১৪ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা। মোট উন্নয়ন বাজেট ১৩ হাজার ১৫৯ দশমিক ৭২ কোটি টাকা।

১৪টি কোম্পানির বিপরীতে পিএ চাহিদা ২০ হাজার ৫০০ দশমিক ১৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৩৩ হাজার ৬৫৯ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে আরপিসিএল, এপিএসসিএল, ওজোপাডিকো, ডিপিডিসি, ডেসকো, নেসকো, পাওয়ার সেল, পিজিসিবি, বাপবিবো, বাবিউবো, বিআর পাওয়ারজেন, সিপিজিসিবিএিল ও স্রেডা।

এদিকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে একই কোম্পানি বা সংস্থাগুলোর জন্য বাজেট প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ১৬ দশমিক ৮১ কোটি টাকা। ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫৩৯ দশমিক শূন্য এক কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর অর্থ বিভাগ থেকে একটি বাজেট পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে বাজেট প্রণয়নের বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগ বিগত দিনের বাজেট বিশ্লেষণ করে নতুন প্রাক্কলন বাজেট বা প্রক্ষেপণ বাজেট নির্ধারণ করেছে।

গত কয়েক বছর ধরে আর্থিক সংকট থাকায় চলতি বছর অর্থ বিভাগ সাশ্রয়ী বাজেট প্রণয়নের নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রস্তাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মূল বাজেটের ২৫ শতাংশ সাশ্রয়ের কথা বলা হয়েছে। এখন এ খাতে অর্থায়ন সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ রয়েছে বিভিন্ন পাওনাদারের কাছে। ফলে নানা পাওনা পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। সর্বশেষ জ্বালানি বিভাগ জ্বালানি আমদানির জন্য জেদ্দাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। যার মধ্যে এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার দিয়ে পেট্রোলিয়াম জাতীয় জ্বালানি আমদানি করা হবে। এবং বাকি ৫০০ মিলিয়ন দিয়ে এলএনজি আমদানি করা হবে।

এদিকে চলমান অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। ২০৪১ সালের মধ্যে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছিল, ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করার আশা করছে সরকার।

এ বিভাগের অন্যান্য