জ্বালানি তেল আমদানি বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি খোলার জটিলতায় জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তেলের মূল্য পরিশোধে দেরি হওয়ায় বকেয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল আমদানি বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। তারা বলেছে, পাইকারি মূল্য ইউনিটপ্রতি এক টাকা বাড়ানো হলে বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি কমে আসবে। বুধবার অনুষ্ঠিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

বিপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে বিপিসি প্রান্তে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলার সরবরাহ সংকোচনের কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধে ১০-৫০ দিন পর্যন্ত দেরি হচ্ছে। ধাপে ধাপে মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। বকেয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি তেল আমদানি বিঘ্নিত হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপিসি সাধারণত প্রতি মাসে প্রায় ১৪-১৫টি এলসির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪ চার থেকে ৫ লাখ টন পরিশোধিত এবং ১ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। বর্তমানে ডলার সরবরাহ সংকোচনের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহও অনেক ক্ষেত্রে বিপিসি’র চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করছে।

কোনো কোনো ব্যাংক এলসি খুলতে ১০-১৫ দিন পর্যন্ত বিলম্ব করছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করলে আমদানি প্রক্রিয়া ব্যাহত তথা জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরে নির্দিষ্ট সময়ে কার্গো এলেও মূল্য পরিশোধে বিলম্বের কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দুটি জাহাজে ‘ফিন্যানসিয়াল হোল্ড’ আরোপ করায় প্রায় ৬০ হাজার টন ডিজেল খালাস সম্ভব হচ্ছে না। পণ্য খালাসে বিলম্বের কারণে ৩২ হাজার ডলার ডেমারেজ দিতে হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলএনজি আমদানির মূল্য বাবদ ২৪১ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অপরিশোধিত রয়েছে।

সংকট নিরসনে বিপিসি তার প্রতিবেদনের সুপারিশে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে জরুরিভিত্তিতে বকেয়া পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক/অর্থ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ চেয়েছে। এক্ষেত্রে এ সরকারি প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় যথাসময়ে এলসি খোলা ও মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি আগের মতো বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে। এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের স্বল্পতা, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও কয়লার মূল্য বৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায়, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্রয়-বিক্রয়ের পার্থক্য বাবদ চলতি অর্থবছরে ৩৫-৩৭ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ভর্তুকি বাবদ প্রয়োজন হবে। তবে গ্যাস উত্তোলন দিনে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়লে ঘাটতি ৬ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।

এ বিভাগের অন্যান্য