ট্রেন চলবে সিলেটে-ভারতে

নিউজ ডেস্ক: ঢাকা-দিল্লি নতুন একটি কানেকটিভিটি চুক্তি সইয়ের তোড়জোরকে সামনে রেখে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে লেখা এক পত্রে আখাউড়া-সিলেট রেলের অংশটি ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলেছে, গত ২৭ আগস্ট দেওয়া পত্রটি কমিশন গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। কারণ ডাবল রেললাইন নির্মাণে ইতিমধ্যে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন মহলের দাবি দাওয়ার কথা তাদের নজরে এসেছে।

সূত্রগুলো অবশ্য নিশ্চিত করেছে যে, সিলেটে ডাবল রেল লাইনের দাবি এমন সময়ে উঠেছে যখন আসাম ও মেঘালয়ের মতো উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিবেশীরা সিলেটের ভেতর দিয়ে সড়ক ও রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে তাড়াতাড়ি বাস্তবে রূপ দিতে উদ্যোগী হয়ে পড়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে দুদেশের মধ্যে এসংক্রান্ত একটি নতুন চুক্তি সই হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। লক্ষণীয় যে, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ তার ওই পত্রে ‘ডাবল রেল লাইন’ করার দাবির স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে কানেকটিভিটির প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। তার যুক্তি, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যসমূহের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই লাইনটি গুরুত্বপূর্ণ হবে। এই বিবেচনায় সিলেট-আখাউড়া রেল লাইনটি ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে রূপান্তর করা ছাড়া বিকল্প নেই।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলেছে, কিছুদিন আগেই একনেক সভায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ সিলেট-আখাউড়া বিদ্যমান রেল রুট সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাব পাস হয়েছে। এখন যদি ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করতে প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত মেলে তাহলে বিষয়টি আবার সংশোধিত আকারে একনেকে যাবে। তবে আশা করা হচ্ছে, খরচ তাতে খুব বাড়বে না। ২৭ আগস্ট পরিকল্পনা মন্ত্রীকে লেখা এ সংক্রান্ত ওই চিঠির অনুলিপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ও বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে বলেন, ‘আশা করি আপনি আমার প্রস্তাবে সম্মত হবেন এবং প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ একান্তভাবে কামনা করছি।’

এদিকে কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, আগামী এক মাসের মধ্যে ঢাকা এবং নয়াদিল্লির মধ্যে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্রসিডিউর (এসওপি) সই হচ্ছে। এই চুক্তির সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের স্বার্থ সরাসরি জড়িত। কারণ এটা ভারত সরকারকে তার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যগুলো এবং চট্টগ্রাম বন্দর এবং মংলা বন্দরের মধ্যে যান চলাচলের এখতিয়ার দেবে। চারটি প্রবেশ পয়েন্ট- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া-ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা, সিলেটের তামাবিল-মেঘালয়ের ডাউকি, সিলেটের শেওলা-আসামের সুতারকান্দি এবং কুমিল্লার বিবিরবাজার-ত্রিপুরার শ্রীমন্তপুর- দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহণ করা হবে।

বাংলাদেশ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসওপির খসড়া চূড়ান্ত করতে উভয় দেশই দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের শিপিং মন্ত্রণালয়ের একটি দল গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে এসওপির পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করে ফিরেছেন। এখন আমরা খসড়াটি চূড়ান্ত করব এবং অনুমোদনের জন্য পেশ করব, যাতে কমপক্ষে এক মাস সময় লাগবে।

কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর, ভূখন্ড এবং অন্যান্য অবকাঠামো ব্যবহারের জন্য ভারত বিভিন্ন ধরণের ফি প্রদান করবে। এসওপিতে এর সমস্ত কিছুর উল্লেখ থাকবে।

২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরকালে সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে দুটি দেশ সমঝোতা স্মারক সই করে। সমঝোতা স্মারক অনুসারে, দুটি সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা অনুযায়ী, পণ্য পরিবহন করা হবে এবং কেবলমাত্র বাংলাদেশী যানবাহনই তার সীমান্তের মধ্যে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হবে।

মন্ত্রীর চিঠিতে আরো যা আছে

জনাব ইমরান পরিকল্পনা মন্ত্রীকে আরো লিখেছেন, শেখ হাসিনার সরকার, সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিকায়ন ও পুনর্বাসন করার বিরাট কর্মসূচি নিয়েছেন, যা সারাদেশে চলমান রয়েছে। দেশের দক্ষিণ ও উত্তর পূর্ব অঞ্চলে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট লাইনের সিলেট-আখাউড়া অংশটি দীর্ঘদিন থেকে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে।

ব্রিটিশ আমল থেকেই এ লাইনের উল্লেখযোগ্য পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন করা হয়নি। সরকার আখাউড়া-সিলেট রেললাইনকে আধুনিকায়ন ও পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

আপনি নিশ্চয়ই জানেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে মাস্টারপ্ল্যানে যত দ্রুত সম্ভব সকল রেললাইনকে ডুয়েল, ব্রডগেজ ডুয়েল, কনভার্টেবল লাইনে রূপান্তর করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিবেচনায় আখাউড়া-সিলেট লাইনটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বহুল ব্যবহৃত রেলওয়ে লাইন।

এ বিভাগের অন্যান্য