সরগরম প্রচারণা ৮৭ উপজেলায় ভোট রবিবার

ভোটের হাওয়ায় সরগরম সারা দেশ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের বাকি আর মাত্র ১ দিন। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। অন্যতম বড় দল বিএনপি অংশ না নিলেও প্রতিটি উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় এ নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশের তৃণমূলে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। মিছিল-সমাবেশ আর জনসংযোগে প্রার্থীদের ঘুম হারাম। কর্মী-সমর্থকরা চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে নির্বাচন কমিশনও (ইসি)। জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) ফরহাদ আহম্মদ খান স্বাক্ষরিত নির্দেশনা ইতোমধ্যেই সব ডিসি-এসপির কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রথম দফায় দেশের ৮৭ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী রবিবার (১০ মার্চ)। এরপর ১৮ মার্চ ১২৪ উপজেলা, ২৪ মার্চ ১২৭ উপজেলা এবং ৩১ মার্চ ১২২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। দ্বিতীয় পর্যায় অর্থাৎ পঞ্চম ধাপে বাকি উপজেলার ভোট হবে ১৮ জুন। এদিকে এবার উপজেলা নির্বাচনে মাঠে বিএনপি নেই। তবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও প্রতিটি উপজেলায়ই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগই। কোথাও কোথাও একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীও রয়েছেন। এ ছাড়া বেশিরভাগ উপজেলায় রয়েছেন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী। সব মিলিয়ে উপজেলা নির্বাচন বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, ১০ মার্চ প্রথম ধাপে রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিদিন উপজেলা জুড়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণসংযোগ করছেন নৌকার প্রার্থী লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। পৌঁছে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের উন্নয়নের বার্তা। তানোরের সব গ্রাম হবে শহর, এ বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন সাধারণ জনগণের মধ্যে। তিনি নির্বাচিত হলে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত আধুনিক মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এদিকে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় সরব নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা। সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তাদের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন নৌকা প্রতীক, জাতীয় পার্টির জয়নাল আবেদীন লাঙ্গল ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রুহল আলম হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জমজমাট প্রচার-প্রচারণায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের দুই প্রার্থী। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান হাজি আবুল কালাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ। চেয়ারম্যান পদ পাওয়ার জন্য দুজনই মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রতিনিয়তই অব্যাহত রেখেছেন তাদের প্রচারণা। ১০ মার্চ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যেকেই ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, পথসভাসহ বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। উপজেলার প্রতিটি বাজারে চায়ের আড্ডার প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে উপজেলা নির্বাচন। কে হচ্ছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার আগামী দিনের উন্নয়নের কর্ণধার এ নিয়ে হচ্ছে নানা কথাবার্তা। পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে মাইকিং ও
প্রার্থী সমর্থকদের বিরামহীন প্রচারণা। ফেস্টুন, ব্যানার ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে হাট-বাজার।
ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বিশেষ ক্ষমতা ইসির : ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে সব প্রার্থী যেন সমান সুযোগ পান, ভোটাররা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে ভোট দিতে পারেন এবং ভোট দেয়া শেষে তারা যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকেন; সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে এটা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত নিরপেক্ষভাবে প্রার্থীদের প্রচারণা আচরণ পর্যবেক্ষণ করবেন এবং যথাযথভাবে আচরণবিধি প্রতিপালনে সবাইকে পরামর্শ দেবেন। যারা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করবেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্দ্বিধায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরে ১৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট ছয় ধাপে চতুর্থবারের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় ছয় ধাপে ৪৮৭টির বেশি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য