জনপ্রিয় এবং উইনেবল প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন : ওবায়দুল কাদের
এগিয়ে জনপ্রিয় প্রার্থীরা
উৎকণ্ঠায় বিতর্কিত এমপিরা *
দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে এমন এমপিদের কেউ মনোনয়ন পাবেন না। যারা কাজ করেছেন, উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন, জনপ্রিয়, মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তারাই এগিয়ে থাকবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং এটা মাথায় রেখেই প্রার্থী বাছাইয়ে শাসক দলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এরই মধ্যে প্রায় একশ’ জনের মতো জনবিচ্ছিন্ন ও নানা অভিযোগের তীরবিদ্ধ এমপির তালিকা প্রস্তুত করেছেন দলটির হাইকমান্ড।
তালিকাভুক্ত এমপিদের আসনে উঠে এসেছে স্বচ্ছ ও জনপ্রিয় নতুন মুখ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটে এসব জনপ্রিয় ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাদের প্রার্থী করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় আওয়ামী লীগ।
দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনপ্রিয় এবং উইনেবল প্রার্থীই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন।’ তিনি বলেন, দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টকারী এমপিদের কেউ মনোনয়ন পাবেন না।
যারা দলের মধ্যে দল সৃষ্টি করে রেখেছেন, এলাকায় কাজ করেননি, জনবিচ্ছিন্ন হয়েছেন তারা মনোনয়ন পাবেন না। মন্ত্রী বলেন, এবার অনেক আসনেই চমক আসবে।
দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে এলাকায় যেসব নেতা কাজ করেছেন, উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন, জনপ্রিয় তারাই মনোনয়ন পাবেন।
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের বরাত দিয়ে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে এমন এমপি শনাক্তে সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে। অনেকের রিপোর্ট এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
এর বাইরেও দলের সাংগঠনিক সফরে থাকা ১৫টি টিমের হালনাগাদ তথ্যও সংযোজিত হচ্ছে মূল তালিকায়। দলীয় সভাপতির নির্দেশে সাংগঠনিক সম্পাদকরা ও কয়েকটি বিশেষ টিম আসন ধরে ধরে প্রার্থীদের বায়োডাটা সংগ্রহ করছেন।
আর সম্প্রতি সারা দেশে নির্বাচনী সফর শুরু করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। সেখান থেকেও আসছে নানা প্রতিবেদন।
সেগুলো পর্যালোচনা করে তালিকা তৈরি হচ্ছে। এসব পর্যালোচনায় কমপক্ষে একশ’ এমপির নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এসব আসনে যেসব এমপির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে, যারা বিতর্কিত হয়েছেন তারা উৎকণ্ঠায় আছেন।
তবে অভিযোগ উঠেছে এমপিদের বিষয়ে আশার কথাও বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তালিকাভুক্ত অনেক এমপিই নিজেকে সুধরানোর সুযোগ পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন।
১৫ সেপ্টেম্বর দলটির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তিনি বলেছেন, সর্বশেষ জরিপে দু-চারজন এমপি বাদে সবারই জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়নের বিষয়ে দলের বিভিন্ন বৈঠকে শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না।
সূত্র জানায়, যেসব এমপির বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে কিংবা দুর্নীতির ঘটনা অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে তাদেরও মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এমনকি অনুসন্ধান পর্যায়ে অব্যাহতি পেয়েছেন অথচ তাদের অনেকের ব্যাপারে জনমনে দুর্নীতিবাজ হিসেবে ‘পারসেপশন’ তৈরি হয়েছে তারাও মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে পারেন।
এছাড়া যারা নামে-বেনামে আয়বহির্ভূত সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এবার তারাও খুব বেশি এগোতে পারবেন না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ইতিমধ্যে এমন অনেকের লাগাম টেনে ধরা হয়েছে। দল থেকে সতর্ক করে কড়া বার্তাও দেয়া হয়েছে।
এসব আসনে যাদের নামে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে তাদের পাশাপাশি অনেক ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা তৈরি হয়েছে।
দলের অনেকে মনে করেন, এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট আসনগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব জরিপসহ অন্যান্য একাধিক জরিপের ভিত্তিতে তৈরি কমন তালিকায় যাদের নাম এসেছে এবার তাদের ভাগ্য খোলার জোর সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে দল লাভবান হবে।
জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা যোগ্য নতুন ও পুরনো প্রার্থীদের আসনে শতভাগ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের অধিকাংশই বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। নৌকার প্রতীকের সঙ্গে ব্যক্তি ইমেজ যোগ হওয়ায় তারা অধিক হারে সাধারণ মানুষের ভোট টানতে সক্ষম হবেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দলীয় রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে মনোনয়নের একটি খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যেখানে অভিযোগ ওঠা এমপিদের আমলনামাসহ মনোনয়নপ্রত্যাশী নতুনদের ভালো-মন্দ ঠাঁই পেয়েছে। এমপি না হয়েও এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় যারা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তাদের নামও আছে এতে।
তালিকার একটি অংশজুড়ে আছে নেতিবাচক ভাবমূর্তির বেশ কিছু এমপির অবস্থা। কে বা কারা একেবারে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, সিন্ডিকেট আর স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য দিতে গিয়ে জনস্বার্থ লঙ্ঘন করেছেন।
এছাড়া নানা ধরনের বিতর্কিত কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে এবং তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এমন এমপি-মন্ত্রীর নামও আছে এ তালিকায়। কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতার অপব্যবহারের।
মূলত যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়ে একটি তালিকা করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা দলের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করেছেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের নানাভাবে হেনস্তা করেছেন, সম্ভাব্য প্রার্থীকে প্রতিপক্ষ ভেবে তার ওপর মামলা-হামলা করেছেন তাদের বিষয়ে দলের হাইকমান্ড চরম নাখোশ।
এ ধরনের আসনে আওয়ামী লীগ নতুন মুখ তালাশ করছে। এরই মধ্যে কিছু নাম শাসক দলের তালিকায় উঠে এসেছে বলে জানা গেছে।
এ তালিকায় যোগ্য জনপ্রিয় হিসেবে যাদের নাম এসেছে আগামী নির্বাচনে তাদের সবাই মনোনয়ন পাবেন এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। নেতিবাচক কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে এমন সবাই বাদ পড়বেন তাও নয়।
কারণ ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন দু’চারজন এমপি ছাড়া সবার জনপ্রিয়তাই বেড়েছে। কোনো কারণে এসব আসনে বর্তমান এমপিরা মনোনয়ন না পেলে বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়দের প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন হাইকমান্ড।
বিভিন্ন সময় জরিপ রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রায় একশ’ আসনে বর্তমান এমপির পাশাপাশি জনপ্রিয়তাসহ নানা কারণে এগিয়ে আছেন এমন নেতারা হলেন- মাগুরা-১ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুজ্জামান শিখর, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ, যশোর-২ আসনে মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন, নেত্রকোনা-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুর রহমান লিটন (ভিপি লিটন),
নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবীর কাওছার, সিলেট-৩ আসনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, গাইবান্ধা-৫ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন,
খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত ও বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন, বরগুনা-১ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, টাঙ্গাইল-৩ আসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ডা. কামরুল হাসান,
শরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, নেত্রকোনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন,
ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বালিয়াডাঙ্গি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কবীর কুমার রায়, কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনে খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বিটু, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী,
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির/জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও এমপি তাজুল ইসলাম মোহাম্মাদ ফারুক,
চট্টগ্রাম-১১ (হালিশহর-পতেঙ্গা) আসনে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুল আলম এমএসসি, বরিশাল-৪ সাবেক সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মইদুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম সারোয়ার কবীর,
বাগেরহাট-৪ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, জামালপুর-২ আসনে সংরক্ষিত আসনের এমপি মাহজাবিন খালেদ বেবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ফরিদপুর-২ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জামাল হোসেন, দিনাজপুর-১ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু হুসাইন বিপু, কিশোরগঞ্জ-৫ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন,
চট্টগ্রাম-৬ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মাঈনউদ্দিন আহম্মেদ মিন্টু, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ শামসুল আবেদীন খোকন,
কুমিল্লা-৬ আসনে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক আফজল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান।