সিলেট-৩ আসনের কান্ডারী কে হবেন

সিলেট নগরীর প্রবেশদ্বার দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি।

এর আগে বালাগঞ্জ সিলেট-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বালাগঞ্জবাসী সিলেট-৩ আসনের এমপি বাছাইয়ে ভূমিকা রাখবেন। অনেকে আবার প্রার্থী হওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে উড়ে এসে মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।

তারা প্রকাশ্যে নিজেকে দলের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচার কাজে নেমে পড়েছেন। দলের হাইকমান্ড থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ারও দাবি করছেন কেউ কেউ।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের হিড়িক দেখে হেভিওয়েট প্রার্থীদের অনেকেই বিরক্ত। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িও চলছে। প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকিও দিচ্ছে একে অপরকে। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনাও রয়েছে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নালিশ করা হয়েছে বর্তমান এমপি মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তবে প্রার্থী বেশি হওয়ায় দলের কর্মীদের কদর বেড়েছে। এককথায় তৃণমূলের রাজনীতি এখন বেশ চাঙ্গা।

এ আসনে একক কোনো দলের প্রভাব নেই সেভাবে। বিশেষ করে নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পরও টানা দু’বার আসনটি জাতীয় পার্টির কব্জায় ছিল। ১৯৯১ সালে এ আসনে জয়ী হন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মুকিত খান।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনেও মুকিত জয়লাভ করেন। বয়সের কারণে তিনি বর্তমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।

তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে ধানের শীর্ষ নিয়ে এ আসন থেকে বিজয়ী হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শফি আহমেদ চৌধুরী। পরের দফায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে আসে।

ওই নির্বাচনে ৯৭ হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও শেখ রাসেল শিশুকিশোর পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৫৪ হাজার ৯৫৫ ভোট।

সবশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও মাহমুদ-উস সামাদ বিনা ভোটে এমপি হন। আগামী নির্বাচনেও মাহমুদ সামাদ আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের আরও ৭ প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ করছেন।

এরা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব মন্টু, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছিত টুটুল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন।

এর মধ্যে ৪ জন মাঠে সক্রিয়।

এ ছাড়া বিএনপির প্রার্থীদের মধ্য রয়েছেন- কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ হক, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম।

কথা হয় বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ-উস সামাদের সঙ্গে। তিনি  বলেন, জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফেঞ্চুগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সুনাম হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে দেয়া আমার বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে।

সবই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বড় দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারে, কিন্তু জনগণ মৌসুমি প্রার্থীদের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন।

মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও তিনি সিলেট-৩ আসন থেকেও মনোনয়ন চাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দল যে আসন থেকে মনোনয়ন দেবে, সে আসনেই নির্বাচন করব।

তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কথা হয় আরেক প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবের সঙ্গে।

তিনি  বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থী হয়েছি।

মানুষ পরিবর্তন চায়, আশা করি দলের হাইকমান্ড সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেবে। জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ বলেন, বর্তমান এমপির কাছ থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

এ বিভাগের অন্যান্য