প্রস্তুতি নিন, ডাক আসা মাত্র ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে
লন্ডনের সমাবেশে তারেক রহমান
লন্ডন, সেপ্টেম্বর ৩ (জাস্ট নিউজ): গণতন্ত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের সরকার ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণকে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার আহবান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সবাই স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিন। ডাক আসা মাত্র বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
বিএনপির ৪০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আহবান জানান। সোমবার পূর্ব লন্ডনের হাইস্ট্রীট নর্থ এর দি রয়্যাল রেজেন্সী হোটেলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সহস্রাধিক বিএনপি সমর্থক প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে সমাবেশে সভাপতিত্ত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক।
বর্তমান সরকারকে অবৈধ, অগণতান্ত্রিক এবং লুটেরা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে নতুবা সন্ত্রাসী সরকার দেশের মাটি পর্যন্ত খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিবে।
জনগণের দেশ জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, না, না, না। অনেক হয়েছে, আজ এখানেই রুখে দিতে হবে। জনগণের দেশ জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব। এজন্য দরকার ঐক্য। সে ঐক্য হলো সমাজের সকল স্তরের মানুষের ঐক্য।
নেতাকর্মীদের আন্দোলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ওয়ার্ডে, প্রতিটি জেলায়, থানায়, পৌরসভায়, প্রতিটি বিভাগে আমাদের লক্ষ-লক্ষ নেতা-কর্মী আছে। আপনারা স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিন। ডাক দেবার সময় চলে এসেছে। ডাক আসার জন্য অপেক্ষা করুন, ডাক আসা মাত্র বাংলাদেশের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ইনশাআল্লাহ। সময়মতো ডাক আসবে। ডাকা আসা পর্যন্ত আপনাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করুণ।
সরকার ভীতি, প্ররোচণা কিংবা কোনো প্রকারের ফাঁদে পা না দিতে নেতা-কর্মীসহ সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, মনে রাখবেন বাংলাদেশের মানুষের ঐক্য ভাঙ্গার জন্য এই অবৈধ সরকার, দুষ্কৃিতিকারি সরকার সকল রকমের চেষ্টা করবে। তারা খুন-গুম, নিখোঁজ করার মাধ্যমে ভয় দেখানোর চেষ্টা করবে। তারা অর্থ ঘুষ দিয়ে চেষ্টা করবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। তারা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার জোর করে খবর চাপানোর মাধ্যমে বিভ্রান্তির চেষ্টা করবে। কাজেই সব কিছু সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে, কোন কিছুতেই বিভ্রান্ত হলে চলবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি। লক্ষ্য একটি হলো আগামীতে আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার, যেই সরকার বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা সঠিকভাবে নির্বাচিত হবে, জণগণের মাধ্যমে গঠিত হবে এবং যে সরকার হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত, সে সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। এজন্য স্ব স্ব অবস্থান থেকে ডাক আসা পর্যন্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করুণ।
বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া শিশু-কিশোরদের সাম্প্রতিক সড়ক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তারেক রহমান বলনে, আমরা শুধু নিরাপদ সড়ক চাইনা। নিরাপদ সড়ক আমাদের থাকবে তবে আমরা সবাই চাই নিরাপদ বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যেসব বিভিন্ন নেতাকর্মীরা রয়েছেন তাদের বলবো, প্রতিটি পেশার মানুষদের বলবো, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গৃহবধু, তরুণী-তরুণ, ছাত্র-ছাত্রী সবাইকে আমি বলবো- যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি এগিয়ে যাও তবে তুমি বাংলাদেশ।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, যারা বিএনপির রাজনীতি করেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে লালন করেন তারা আজ এমন অবস্থায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছেন যখন আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। যাকে দেখে কোটি কোটি মানুষ এসে বিএনপিতে ভীড়েছে, তিনি আজ কাছে নেই, কারাগারে। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হলে মন শক্ত রাখতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকার নয়াপল্টন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, লাখো মানুষের এই সমাবেশ একটি বার্তা দিয়ে গেছে বিএনপির কাছে। তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে গেছে।
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে দেশের অন্যান্য সংগঠনগুলোকে এক কাতারে আসার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির পাশপাশি আরো কিছু দল জাতীয় ঐক্যর ডাক দিয়েছেন। যারা এ ঐক্যের ডাক দিয়েছেন দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের অনেক রকমের অবদান রয়েছে। দেশ আজ অপশাসনের কবলে পড়েছে। বিএনপির লাখো লাখো নেতা-কর্মী এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র রক্ষার যে আন্দোলন তিনি শুরু করেছেন তাকে বেগবান করতে। তাদের সহযোগিতা করার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আহবান জানচ্ছি।
জাতির জন্য এক বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের জন্য প্রয়োজন বৃহত্তর এক ঐক্যের। এটা শুধু সরকার পরবির্তনের জন্য নয়। ন্যায় এবং সাম্যের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি নিরপাদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য।
দেশে আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের আদালত নয় বরং আওয়ামী লীগের আদালতে পরিণত হয়েছে। কোর্টের রায়ের আগেই দলের নেতাকর্মীরা রায় বলে দিচ্ছে। প্রধান বিচারপতিকে ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে এই সরকার। কিছু অপ্রিয় কথা বলার কারণেই তাকে হেনস্থা করা হয়েছে। তিনি এখন আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় চাইছেন।
সরকার টাকা, পাথর, সোনা ডাকাতি করছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, দেশ এভাবে চলতে পারে না। আমি একটি বৃহৎ ঐক্যের আহবান জানাবো। বাংলাদেশের প্রতিটি পেশার মানুষ, ছাত্র, গৃহবৃধু, চিকিৎসক, শ্রমিকসহ সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন এ সরকারের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা গায়েব হয়েছে, ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে এটা হয়েছে। এ টাকা জনগণের টাকা। দুঃখের বিষয় সেই টাকা দিয়ে বিদেশের মাটিতে জুয়া খেলা হচ্ছে।সরকারের কাছের লোক বেসিক ব্যাংকের টাকা লুট করেছে। বিএনপির সময় কি এরকম খবর আপানারা পত্রিকায় কেউ দেখেছেন? শধু টাকা নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে রাখা সোনা তামা হয়ে গেছে। এ সরকার দেশটাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কয়লা, পাথর গায়েব হয়ে যাচ্ছে, কদিন পর মাটি খুলে বিক্রি করে দিবে।
১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি গঠিত হয়েছিল উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁর আহবানে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই দায়িত্ব একজন সেনাবাহিনীর মেজরের ছিলনা। কিন্তু সে সময়ের রাজনৈতিক নেতারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিলো। আর তাই ৭ কোটি মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ছিল জিয়াউর রহমানের এই ঘোষণা।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হবার পর শহীদ জিয়া সেনাবাহিনীতে ফিরে গেলেন। সরকার গঠিত হলো। মুজিবনগর সরকারের ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিব দায়িত্ব নিল। ১৯৭৫ পর্যন্ত তাকালে আমরা দেখতে পাই এই দলটি জোর করে, জুলুম করে মসনদে বসেছে। আজ যেভাবে ব্যর্থ, ঠিক একইভাবে ১৯৭৫ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ ছিলো তাদের সরকার। তাদের প্রথম ব্যর্থতা ১৯৭৩ সালের নির্বাচন। ভোলা থেকে হেলিকপ্টারে করে ব্যালট ছিনতাই করে ঢাকায় বসে সিল মেরেছে।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি বিপ্লবের মাধ্যমে সিপাহি এবং জনতা মিলে বন্দিদশা থেকে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে নিয়ে এসে বাংলাদেশের দায়িত্ব দিলো। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। একদলীয় শাসন আর বাকশালের বদলে রাজনীতিকে উন্মুক্ত করে দিলেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশ সামনের দিকে অগ্রসর হয়।
সীমান্তের ফেলানি হত্যাকান্ডের মতো দৃশ্য বিএনপির শাসনামলে দেখা যায়নি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এ অবৈধ সরকারের সময় ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম এবং দিনারের মতো নেতাদের গুম করা হয়েছে। বিএনপির আরেক নেতা সালাহউদ্দিনকে ভারতের সীমান্তে ফেলা আসা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এ পর্যায়ের কোনো নেতাকে কি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে গুম করেছে? না করেনি। এই হচ্ছে বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মধ্যে পার্থক্য।
জনগণ যেন ঐক্যবদ্ধ না হতে পারে সে জন্য খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে সরকার মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজকে আমাদের প্রিয় নেত্রী, কোটি মানুষের জনপ্রিয় নেত্রীকে জোর করে জেলে আটকে রেখেছে সরকার। তিনি জনগণের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন, ভোটের অধিকার, আর জবাবদিহিতার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। মানুষ যাতে খালেদা জিয়ার পেছেন ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, সে জন্য তাঁকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এ কথা বলার সময় উপস্থিত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী- “মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই”, “জেলের তালা ভাঙেবাে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবো”, স্লোগানে সভাস্থল প্রকম্পিত করে তোলে।
সরকারের দমন-নিপীড়নের কড়া সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, এ অবৈধ সরকার শুধুু খালেদা জিয়াকে বন্দি করে ক্ষান্ত হয়নি, বিএনপির হাজারাে নেতা-কর্মী আটকে রেখেছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আজ আমাদের মাঝে শহীদ জিয়া নেই কিন্তু তাঁর আদর্শের লক্ষ-লক্ষ সৈনিক আছে। খালেদা জিয়া বন্দি থাকলেও তাঁর নির্দেশনা আমাদের সঙ্গে আছে। তাঁর লক্ষ-কোটি সৈনিক দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বার বার খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে দেশের দায়িত্ব দিয়েছে।
বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের গ্রেফতারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুধু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে নয় বরং যে মানুষটিই অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে হয় তাকে গুম-খুন না হয় জেলে পুরা হয়েছে। কদিন আগে শহীদুল আলম নামের এক সাংবাদিককে কিভাবে আটক করেছে সরকার তা সবাই দেখেছেন।
সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হবার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আজ যেন সাংবাদিকদের হাত বাঁধা। এত নির্যাতন সহ্য করে বিএনপি হাজারো নেতা-কর্মী যদি মানুষের জন্য লড়তে পারে, আপনারা কেন পারবেন না? আজ যদি আপনারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে না দাঁড়ান তাহলে কাল তা পারবেন না। এসরকার আপনাদের কলমও কেড়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, কিভাবে একটা দেশকে ধ্বংস করতে তা আওয়ামী লীগ জানে। আর তা রংহেডেড হাসিনার কাছ থেকে শিখতে হবে। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, দেশ স্বাধীন হবার পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নির্বাচন ছিলো বিতর্কিত।