পবিত্র ঈদুল আযহা

পবিত্র ঈদুল আযহা দেশের মুসলিম উম্মাহ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করবেন। আত্মত্যাগের নিদর্শন হালাল পশু কোরবানীর মধ্য দিয়ে ঈদুল আযহার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। মুসলমানদের দু’টি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল আযহা একাধিক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। তার মধ্যে অন্যতম হলো পশু কোরবানীর মাধ্যমে মানুষের মনের পশুত্ব জবাই এবং সামর্থ বানদের হজ পালন করা। গতকাল সোমবার থেকে সৌদি আরবে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধব্বনিতে মুখরিত হয় আরাফাতের ময়দান। আজ মঙ্গলবার পশু কোরবানীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে নিজের প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানী দিতে উদ্যত হয়েছিলেন, যা সর্বকালের মানব ইতিহাসে ত্যাগের সর্বোচ্চ উদাহরণ। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কুদরত ও রহমতে ইসমাইলের পরিবর্তে কোরবানী হলো একটি দুম্বা। এর মাধ্যমে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ত্যাগের চরম পরীক্ষায় আল্লাহর দরবারে উত্তীর্ণ হয়ে যান। সেই থেকে বিশ্বের মুসলমানদের জন্য জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে পবিত্র ঈদুল আযহার দিনে হালাল পশু কোরবানী করার রেওয়াজ চালু হয়।
ইসলামী শরীয়তে সামর্থ বানদের জন্য পশু কোরবানী করা ওয়াজিব। পশু কোরবানীর কারণে ঈদুল আযহা ‘কোরবানীর ঈদ’ নামেও পরিচিত। বস্তুতঃ ঈদুল আযহা শুধুমাত্র পশু কোরবানীর আনুষ্ঠানিকতা নয়, ঈদ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও আত্মোপলব্ধির শিক্ষা দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদুল আযহার দিনে হালাল পশু কোরবানী করা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কাজ। পবিত্র কোরআনের সুরা কাওসারে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর আপনার পালনকর্তার নামে নামাজ পড়–ন এবং কোরবানী করুন।’ সুরা হজে বলা হয়েছে, ‘কোরবানী করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’ কোরবানীর পশু সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মজিদে আরো বলা হয়েছে, ‘এগুলোর গোশত বা রক্ত আমার কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু, তোমাদের তাকওয়া আমার কাছে ঠিকই পৌঁছে যায়।’ হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, ‘ঈদুল আযহার দিন কোরবানীর চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ অন্যত্র বলা হয়েছে ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানী দিল না, সে যেন ঈদগাহে না যায়।’
এদিকে, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। ঈদের দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
এদিকে, প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ইতোমধ্যে শেকড়ের টানে নগরী ছেড়েছেন বহু মানুষ। ঈদুল আযহা উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সংবাদপত্রের অফিসগুলোতে আজ মঙ্গলবার থেকে ৩ দিনের ছুটি থাকবে। ঈদ উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোও ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সিলেট নগরীসহ অন্যান্য জেলা ও উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত নানা রঙের পতাকা শোভা পাবে। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের দিনে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, এতিমখানা, কারাগার ও অনাথ আশ্রমগুলোতে ভালো খাবার পরিবেশন করা হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য