পবিত্র হজ পালিত ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর আরাফাত ময়দান
শেষ হয়েছে আরাফাতের আনুষ্ঠানিকতা। মুসলমানদের সবচেয়ে বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ এটি। গতকাল সোমবার সূর্যোদয়ের পর থেকে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ২০ লাখ হাজী। তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ২৯৮ জন (ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ) হজ পালন করছেন। হজের তিনটি ফরজের মধ্যে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল কাজ। এজন্যই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা বলা হয় ‘আল-হাজ্জু আরাফাহ’ অর্থাৎ আরাফাই হজ।
ধবধবে সাদা দুই টুকরো ইহরাম পরিহিত অবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় লাখ লাখ হজ পালনকারীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে তালবিয়াÑ ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারিকা লাক’ অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’
সৌদি আরবের স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আরাফাতের মসজিদে নামিরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে হাজীদের উদ্দেশ্যে হজের খুতবা পাঠ করেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব ড. হোসাইন বিন আবদুল আজিজ আল শাইখ। পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী খুতবার পর দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে জোহর ও আসরের কসর সালাতে ইমামতি করেন তিনি। খুতবায় মূলত মানুষকে আল্লাহভীরু হতে বলা হয়েছে। কারণ তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। তার কোনো শরিক নেই। এই ইহজগতের সবকিছু তারই দান। দিকনির্দেশনামূলক খুতবা শেষে মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে করা হয় মোনাজাত। দুপুরের আগেই মুসল্লিদের আগমনে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে আরাফাতের ময়দান ও এর আশপাশের এলাকা। নিয়ম অনুযায়ী হজের দিনে সারাক্ষণ আরাফাতে অবস্থান ফরজ। সে অনুযায়ী, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সেখানেই কোরআন পাঠ, নামাজ ও দোয়ায় মশগুল থাকেন। সবার মুখেই ছিল আল্লাহর নাম। বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় দোয়াপ্রার্থী সমবেত প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
সূর্যাস্তের পর পাঁচ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফাত ছাড়বেন হজ পালনকারীরা। সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায়ের পর খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন। মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করে আজ মঙ্গলবার মিনায় ফিরে যাবেন।
হজের দ্বিতীয় দিন ১০ জিলহজ আজ মঙ্গলবার মিনায় পৌঁছার পর হজ পালনকারীদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে মিনাকে ডানদিকে রেখে হাজীরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবাই (দমেশুকুর আদায়) করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু জবাই দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ তাওয়াফ) করা। মক্কায় ফিরে কাবা শরিফ ‘তাওয়াফ’ ও ‘সাঈ’ (কাবার চারদিকে সাতবার ঘোরা ও সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌড়ানো) করে আবার মিনায় ফিরে যাবেন।
জিলহজের ১১ তারিখ বুধবার মিনায় রাতযাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত হাজীরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করা সুন্নত।
পরদিন ১২ জিলহজ বৃহস্পতিবার মিনায় অবস্থান করে আবার একইভাবে হজ পালনকারীরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। মক্কায় পৌঁছার পর কাবা শরিফে স্থানীয়রা ছাড়া হাজীরা বিদায়ী তাওয়াফ, অর্থাৎ কাবা শরিফে ফের সাতবার চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে হাজীরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজ পালন।
এবার হজে মক্কা নগরীসহ আরাফাত, মিনা ও মুজদালিফায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হজ পালনকারীদের পরিচয় নিশ্চিতের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও ইলেকট্রনিক ব্রেস লাইট সরবরাহ করা হয়েছে।
আরাফাত ময়দানে বাংলাদেশের সব হাজী সুষ্ঠুভাবে পৌঁছেন বলে জানিয়েছেন আরাফাতে অবস্থানরত ধর্মমন্ত্রী অধ্যাপক মতিউর রহমান। এছাড়া রোববার মিনা তাঁবুতে মোহাম্মদ কোবাদ আলী নামে আরও একজন বাংলাদেশি হাজী মারা যান। এ নিয়ে হজ পালন করতে এসে অসুস্থ ও বার্ধক্যের কারণে ৫২ হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন।