ফ্যাক্টর হতে পারেন নতুন ও ‘মৌন’ ভোটাররা সিলেট সিটি নির্বাচন

২০১৩ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। সে নির্বাচনে আরিফ পান এর মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। অথচ ওই নির্বাচনে ভোটই দেননি ১ লাক ১০ হাজার ৫২২ জন ভোটার। এবছর নগরীতে আরও প্রায় ২৪ হাজার ভোটার বেড়েছে। এই নতুন ও মৌন (গত নির্বাচনে ভোট না দেওয়া) ভোটাররাই এবার নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাবক হয়ে উঠতে পারেন বলে মত বিশ্লেষকদের।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে সিলেট নগরীতে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৭ জন। এবছর সিসিকের মোট ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ১৫ হাজার ৬৪ জন।

পরিবর্তনের স্লোগান তুলে গতবছর আরিফুল হক চৌধুরী ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পান ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট। দু’জনের ভোটের ব্যবধান ৩১ হাজার ১৫৭ ভোটের। গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানো আরেক মেয়র প্রার্থী ছালাউদ্দিন রিমন ভোট পেয়েছিলেন ১ হাজার ২২টি।

ওই নির্বাচনে মোট ভোট দেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৫২৫ জন ভোটার। বাকী ১ লাখ ১০ হাজার ৫২২ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতেই যাননি। ভোট না দিতে যাওয়া ভোটারের সংখ্যা বিজয়ী মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে বেশি। এবার আরও যুক্ত হয়েছে নতুন ২৪ হাজার ১০ টি ভোট। সবমিলিয়ে এই ১লাখ ৩৬ হাজার ৬০০ জন ভোটার কার পক্ষে। তাদের রায়ই নির্ধারণ করে দিতে পারে কে হচ্ছেন আগামী দিনের নগরপিতা।

আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩য় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী ও বদরউদ্দিন আহমদ। যথারীতি আরিফ বিএনপির ও কামরান আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এছাড়া আরও ৭ মেয়র প্রার্থী মেয়র পদে মনোয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৩ জনের মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশন বাতিল করলেও আপিলে গত বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ফিরে পান স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের।

আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকের পাশাপাশি সিলেটে রয়েছে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নিজস্ব ভোট ব্যাংক। ফলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে, এমনকি ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জেলে থেকেও  বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন কামরান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত নির্বাচনে যে বিপুল সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে যাননি তারা একসময় কামরানের ভোটার ছিলেন, কিন্তু শেষবার তাকে ভোট দিতে চাননি। দীর্ঘসময় মেয়র থাকাকালে কাঙ্খিত উন্নয়ন করতে না পারার অভিযোগ, ২০১৩ সালের জাতীয় রাজনীতির বৈরি পরিস্থিতি, আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রচারণা, দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে তারা কামরানকে ভোট দিতে যাননি।  আবার বিকল্প হিসেবে আরিফকেও পছন্দ করেননি। ফলে এরা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হননি।

গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে প্রসংশিত হয়েছেন আরিফ। মেয়র হয়ে দীর্ঘসময় জেলে থাকায় তাঁর প্রতি সহানুভুতিও রয়েছে। ফলে নগরীতে আরিফের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলে মনে করেন অনেকে।

তবে এবার নিজ দল নিয়েই বিপাকে পড়েছেন আরিফ। দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকে আরিফের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন। দলীয় প্রার্থীরা পাওয়ার পর দৃশ্যত বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে আরিফের পক্ষে আসলেও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমকে এখনো পক্ষে আনতে পারেননি আরিফ। সেলিম মেয়র পদে রীতিমত স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া মহানগর জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়েরও এবার প্রার্থী হয়েছেন। ফলে এবার আরিফের ভোট বাড়লেও  দলের একটি অংশ আর জোট শরিক জামায়াতের ভোট না বাক্সে নাও পড়তে পারে।

অন্যদিকে এবার আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবেই কামরানের পক্ষে মাঠে নেমেছে।  পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকায় আরিফের ‘পরিবর্তনের’ স্লোগানও এবার অকার্যর। তবে সরকারবিরোধী মনোভাব আর আর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা উন্নয়নবিমুখতার অভিযোগ কামরান এবার কতটুকু  খন্ডন করতে পারবেন এসবের উপরই নির্ভর করবে মৌন আর নতুন ভোটারদের সিদ্ধান্ত।

এ ব্যাপারে সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন’র সমন্বয়ক আবদুল করিম কীম বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী পছন্দের ব্যাপার থাকে, তার সঙ্গে থাকে দল পছন্দের ব্যাপারটিও। দুটি একসঙ্গে না হলে অনেকেই ভোট দেন না, এটি আমার নিজের অভিজ্ঞতা। আর পরিবেশ-পরিস্থিতি না বদলালে খামাখা কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পরিশ্রম করতে চান না অনেকেই। বিএনপি ঘরানার সব ভোট হয়তো বিগত নির্বাচনে কাস্ট হয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগের যারা তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর নাখোশ ছিলেন তারা ভোট দিতে যাননি। একই সঙ্গে অনেক কাউন্সিলর নিজের ভোটের আশায় নগরীতে ভাসমান শ্রমিকদের ভোটার করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এসব ভোটারের অনেকেই অনুপস্থিত থাকেন।

তবে আরিফ কামরান দুজনেই মনে করেন নতুন আর মৌন ভোটারের ভোট এবার তাদেও বাক্সে পড়বে।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, গতবছর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হয়েছিলো। হেফাজত ইস্যু ছিলো, ফলে ভয়ে অনেকে ভোট কেন্দ্রে যাননি। এবার আর তেমনটি হবে না। তাছাড়া এবার দলও ঐক্যবদ্ধ।

আর আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, গতবার আতঙ্কে অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাননি। গত মেয়াদে তারা আমার কাজ দেখেছেন। ফলে আশা করছি এবার তারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন এবং আমাকে মূল্যায়ন করবেন।

এছাড়া তরুণরাই আমার শক্তি। তরুণ যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবে পাস করছে তাদের সিটি করপোরেশনে ইটার্ণশিপের সুযোগ করেছি আমি।  নগরীর নানা সমস্যা সমাধান ও গবেষণায় তরুণদের যুক্ত কনেছি। ফলে এবার তাদের ভোট আমি পাবো।

এ বিভাগের অন্যান্য