কেমন মেয়র চান সিলেট সিটির সাধারণ মানুষ?
মবরুর আহমদ সাজু :
আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন কে সামনে রেখে সিলেটে কেবল এখন নির্বাচনী উত্তাপ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অলি গলিতে র্নিবাচনী কথা আর কথা।চলছে পছন্দের পার্থী নিয়ে তুমুল বিশ্লেষণ। জাতীয় দৈনিক সকালের সময়ের ধারাবাহিক সংবাদ সংযোগে উঠে আসে সিলেটের অলি গলির উন্নয়ন,সম্ভাবনা, প্রত্যাশ ও প্রতিশ্রুতির কথা। এছাড়া রাজনীতিবিদ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তত্বিসহ মেয়র, কাউন্সিলর নবীন প্রবীণ শিক্ষক শিক্ষর্থীদের মতামত তুলে ধরা হয়। এবার কেমন মেয়র চান সিলেট সিটির সাধারণ মানুষ? সিসিক নির্বাচন নিয়ে এবার নাগরিকদের কথা তুলে ধরেছেন আমাদের সিলেট প্রতিনিধি মবরুর আহমদ সাজু নির্বাচনকে সামনে রেখে নগরীতে পছন্দের প্রার্থী নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ নির্বাচনে অনেক জনপ্রতিনিধি প্রত্যাশার সাথে প্রতিশ্রুতির মিল নেই এমন অভিযোগও জানান ভোটাররা। তবে জনপ্রিতিনিধিরা অভিযোগ মানতে নারাজ বলছেন উন্নয়ন হয়েছে যথেষ্ট । ভোটররা জানান,সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দোরগোড়ায়। নগরবাসী খুঁজছেন তাদের পছন্দের মেয়র। ৩০ জুলাই ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে মেয়র নির্বাচন করবেন সিলেট নগরবাসী। নির্বাচনকে সামনে রেখে চায়ের কাপে এখন প্রতিদিন চলছে ভোটের ঝড়। চলছে উন্নয়ন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চাওয়া-পাওয়া-না পাওয়ার জোর হিসাব-নিকাশ। নগররবাসী অপোয় একজন যোগ্য মেয়রের। নগরজুড়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। এই নগরেরই বাসিন্দা কিংবা পেশাগত কারণেই বসবাস করেন সিলেটে- এমন কিছু মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেলো কেমন মেয়র চান তারা। নগরীর সাধারণ এসব বাসিন্দা জানালেন যিনি সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন, ন্যায় বিচার, জবাবদিহিতা, জলাবদ্ধতা নিরসন, পরি”ছন্ন ও পরিকল্পিত নগরী গড়ে তুলবেন তাকেই নগর পিতা/মাতার আসনে বসাতে চান তারা। নগরীর ১৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও চা দোকানি ফয়সল মিয়া। দীর্ঘদিন যাবত চা বিক্রি করেন জল্লারপারে। নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসতেই চোখে কৌতুহলের দৃষ্টি। পরক্ষণেই মুখে ফ্যাকাসে হাসি দিয়ে ফয়সল মিয়া জানালেন, নির্বাচনের আগে সব প্রার্থীরাই (মেয়র/ কাউন্সিলর) নানারকম কথা বলেন, অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। কিš‘ ভোটের পর আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না। তার মতে, এমন ব্যক্তির মেয়র হওয়া উচিত যিনি নগরীর বাস্তব সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে তা সমাধানের আশ্বাস দেবেন ও বাস্তবায়ন করবেন। নির্বাচনের পরও সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের খবর রাখবেন।১২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: রইছ উদ্দিন জানান, নগরীর জনগণের যে কোন সমস্যায় তাড়াতাড়ি সমাধানে এগিয়ে আসবে এবং যে কোন ভোগান্তি থেকে রেহায় পাবে ঐ ব্যক্তিই মেয়র হওয়া চাই। সমাজ থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও ছিনতাই নির্মূল করবে। মানুষ স্বা”ছন্দ্যভাবে বসবাস করবে। সিলেট নগরী উন্নয়নে সার্বিক সচেষ্ট থাকবে। সিলেট লিডিং ইউ নিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও নগরীর লামাপাড়া এলাকার জিনিয়া ঝিনুক বললেন, যিনি সিলেট সিটির প্রকৃত উন্নয়ন করে একটি শিক্ষাবান্ধব নগরীতে রুপান্তিরিত করতে পারবেন তাকেই মেয়র নির্বাচিত করা উচিৎ। তার মতে, সিলেট ‘মহানগরী’তে রূপায়ন হলেও ‘টেকসই’ উন্নয়ন এখনো হয়নি। যা হয়েছে, তা উন্নয়নের নামে ভোগান্তি। কোটি টাকার ফাইওভার আর বড় বড় ভবন নির্মাণ করলেই টেকসই উন্নয়ন হয় না। এ জন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা। সদ্য বিদায়ী মেয়র নগরীর উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করলেও সেখানে পরিকল্পনার অভাব ছিলো বলে জানালেন জিনিয়া।সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভোটার না হলেও চাকরির প্রয়োজনে পরিবার পরিজন নিয়ে সিলেট সিটিতেই বসবাস করেন আবদুল জলিল। নগরীর কাজিরবাজার এলাকায় বসবাসরত আবদুল জলিল জানালেন সিলেট নগরকে নান্দনিক, জনবান্ধব, যানজটমুক্ত, জলাবদ্ধতামুক্ত ও দূষণমুক্ত নগরে পরিণত করতে হলে যুক্তি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যব¯’া গ্রহণ করতে হবে। সামনে সিটি নির্বাচন। এমন ব্যক্তিকেই মেয়র নির্বাচিত করা উচিৎ যিনি সুশাসন, জবাবদিহিতা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিবেন।’ ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক ফারহানা মরিয়ম মণি বললেন, একজন সৎ ব্যক্তিকেই আমরা মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যেকোনও ধরনের ত্যাগ করতে প্র¯‘ত- এমন একজনকে মেয়র হিসেবে পেতে চাই। সাধারণ মানুষের কথা বলবেন এবং আধুনিক প্রযুক্তিকে গুর“ত্ব দেন এমন একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। যার মনে থাকবে মা, মাটি ও মাতৃভূমি। নগরীর গুর“ত্বপূর্ণ এলাকায় বিনামূল্যে ওয়াইফাই প্রযুক্তির সুবিধাও চান স্কুল শিক্ষক মণি। ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম। তার মতে মেয়র হওয়া উচিত জনগেণের সেবার করবেন এমন একজন। তাকে অবশ্যই দলমতের ঊর্ধ্বে নগরবাসীর সেবা করতে হবে। মফিজুল ইসলাম বলেন, যিনি মেয়র নির্বাচিত হবেন প্রথমেই নগরীর ড্রেনেজ ব্যব¯’ার উন্নয়নে হাত দিতে হবে। তার মতে, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাজীটুলা মোড়ে চায়ের দোকানে বসে কথা হলো রিকশাচালক বক্কর মিয়ার সাথে। তবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তার মনে তেমন প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হলো না। কেমন মেয়র চান- এর জবাবে নিরস ভঙ্গিতে বক্কর জবাব ‘মেয়র দিয়া আমি কি কর“ম? আমারে তো রিকশাই চালাইতে হইবো। এইডা ত রাজনীতিবিদরার বিষয়। দেহেন না মার্কাও বদলাই গেছে। গতবার ছিলো হাঁস, আনারস, টিভি (টেলিভিশন); এবার হইছে নৌকা, ধানের ছড়া (ধানের শীষ)। আমি রিকশা চালাই রাজনীতির কি বুঝি?’ তাহলে কি এবার ভোট দিবেন না? ‘দেহি পরিবারের লগে আলাপ কইরা কারে দেওয়া যায়…তবে নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডের গুটিকয়েক সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে যে বিষয়টি জানা গেলো, তার সারমর্ম অনেকটা এরকম-সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নতুন মেয়রকে শিক্ষিত, সৎ এবং প্রশাসনিক যোগ্যতা ও দতা সম্পূর্ণ হতে হবে। যিনি প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দেবেন, নগরবাসীর দাবিগুলো আদায় করতে সম হবেন। তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে জনগণ যাতে কোনও ধরনের হয়রানি শিকার না হয়। ভোট একটি আমানত। যে মানুষের আমানত রা করতে পারবে এমন একজন সৎ প্রার্থীর মেয়র হওয়া উচিত। এদিকে মেয়র প্রার্থীরা বলছেন জনপ্রতিনিধি হয়ে তারা জনসেবা করতে চান ।