সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষক সংকট
৬২ শিক্ষকের মধ্যে আছেন মাত্র ৮ জন
সুনামগঞ্জের নারী শিক্ষার উচ্চ প্রতিষ্ঠান সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে চরম শিক্ষক সংকট চলছে। নামমাত্র শিক্ষক দিয়ে চলছে গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পরাগ কান্তি দেব জানিয়েছেন, কলেজের ৮টি বিভাগে কোন শিক্ষক নেই। নিয়ম অনুযায়ী ৬২ জন শিক্ষক থাকার কথা, কিন্তু অধ্যক্ষসহ কর্মরত আছেন মাত্র ৮ জন।
বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার জানিয়ে চিঠি দেয়া হলেও শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে কলেজ সরকারি এবং সাবজেক্ট বাড়ানোসহ ডিগ্রি শাখা খোলা হলেও কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। এর চাইতে সম্ভবত বেসরকারি থাকাকালীন সময়েই ভাল ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১৯৮৬ সালে অধ্যক্ষসহ ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল সুনামগঞ্জ মহিলা কলেজের। কলেজটি সরকারিকরণ হওয়ার আগে প্রায় সকল পদের শিক্ষকই কর্মরত ছিলেন। এরপর ১৯৯৯ সালে কলেজটি সরকারিকরণ হয়। সরকারিকরণ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় শিক্ষকদের অন্যত্র বদলী ও পদ শূন্য হওয়া।
কলেজ কর্তৃপক্ষ ও জেলাবাসীর দাবি অনুযায়ী ২০১৩ সালে কলেজটিতে ডিগ্রী শাখা চালু করা হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির কলেজকে ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত করলেও শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। কলেজটি সরকারিকরণ ও ডিগ্রি শাখা চালু হওয়ায় ছাত্রী ভর্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ২৬০০।
নিয়ম অনুযায়ী আড়াই হাজারের বেশী ছাত্রীর জন্য ৬২ জন শিক্ষক থাকার কথা এই কলেজে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পদই সৃষ্টি করা হয়নি। ইতোমধ্যে কলেজের শিক্ষক বদলী, পদোন্নাতি ও মৃতুজনিত কারণে ১৫ জনের স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। বর্তমানে কর্মরত আছেন- বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, পরিসংখ্যান বিভাগে একজন করে প্রভাষক ও ভূগোল বিভাগে একজন সহকারি অধ্যাপক । একজন করে অতিথি শিক্ষক আছেন- মনোবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যা বিভাগে ।
আড়াই হাজার শিক্ষার্থীর কলেজের ৮টি বিভাগের কোন শিক্ষকই নেই, নেই উপাধ্যক্ষ। শিক্ষক সংকট ও কলেজটি নিয়মিত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ার কারণে ক্লাশ হয় না বললেই চলে। একেকটি বিভাগে অন্তত ৪-৫ বছর ধরেই কোন শিক্ষক নেই। যেসব বিভাগে একজন শিক্ষকও নেই- সেগুলো হল, বিজ্ঞান বিভাগের চারটি শাখা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, দর্শন ও ইতিহাস। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগেই কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির অন্তত ২০০ জন ছাত্রী রয়েছে। পাশাপাশি অন্য বিভাগগুলোর শিক্ষক না থাকায় কোন ক্লাশ হয় না। বাধ্য হয়ে এসব বিভাগের ছাত্রীদের কলেজের বাইরে প্রাইভেট পড়তে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই কলেজের শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি অবকাঠামো সংকটও রয়েছে। কলেজের মূল ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের কোন আবাসিক ভবন নেই। শহরের পুরাতন জেলা কারাগারটি সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে নতুন ক্যাম্পাসের জন্য দেয়া হয়েছে। পুরাতন জেলা কারাগারের ভবন সংস্কার করলেও সেখানে কোন আসবাবপত্র নেই। ফলে ভবন থাকলেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার আসবাবপত্র থাকলেও ছাত্রীদের পাঠদান দেয়ার কোন শিক্ষকও নেই।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে বলেন,‘ সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ যেভাবে শিক্ষক ছাড়া চলছে, এভাবে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। বিজ্ঞানসহ অনেকগুলো বিভাগে বছরের পর বছর ধরে শিক্ষক নেই। শিক্ষকই নেই তাহলে পাঠদান দিবেন কে? এই কলেজের ছাত্রীরা কিভাবে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল অর্জন করবে? একজন শিক্ষক হিসেবে আমি সুনমাগঞ্জের সন্তান অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান ও মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছি জেলার দুইটি সরকারি কলেজের শিক্ষক সংকট নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। ’
সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল বিভাগের সহকারি অধ্যাপক শাহাদত হোসেন বলেন,‘বর্তমান সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী নারী শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করছেন। তিনি নারী শিক্ষার প্রসার চান, কিন্তু জেলার একমাত্র নারী শিক্ষার প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকটের কবলে রয়েছে। ডিগ্রি চালু করা হলেও শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। কলেজের দূরাবস্থা নিরসনকল্পে অনতিবিলম্বে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি ও শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন,‘ শিক্ষক না থাকায় অনেক বিভাগে ক্লাশ হয় না। আবার বাড়তি ঝামেলা হিসেবে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হয় আমাদের শিক্ষকদের। এতে ছাত্রীদের জন্য আমাদের নিজেদেরই কষ্ট হয়।’
সুনমাগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পরাগ কান্তি দেব বলেন,‘ শিক্ষক সংকট দূরিকরণ ও নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে বার বার চিঠি লিখে কোন ফল পাচ্ছি না। কিন্তু ছাত্রী ভর্তির পরিমাণ সৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষকের পাশাপাশি অবকাঠামো নেই, পুরাতন কারাগার সংস্কার করে দেয়া হলেও চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ নেই। কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের বাসভবন ও ডরমেটরি নেই। সকল শিক্ষকই কলেজের বাইরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। শিক্ষকের অভাবে ছাত্রীদের ক্লাশ হয় না।’