ক্যাম্পাসে ওদের দীপ্ত পথচলা

বাং লা দে শ কৃ ষি বি শ্ব বি দ্যা ল য়

 

একটা সময় ছিল যখন নারীদের দেখা হতো ঘরকন্যা হিসেবে। তারা একটু বড় হলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। পুরুষরা ঘরের বাইরে কাজ করবে আর নারীরা বাচ্চা লালন-পালন, রান্না-বান্না করবে আর ঘর-সংসার সামলাবে। বর্তমান সময়ের চেহারা কিন্তু এমনটা নয়। মেয়েরা এখন আর ঘরের কোণায় বসে নেই। আমাদের মেয়েরা ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। স্কুল-কলেজে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় কিছুটা কম থাকলেও কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই মেয়েরা। ক্যাম্পাসে পড়াশুনা ও বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলছেন দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি শিক্ষার বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্রীরা। লিখেছেন— মো. নাবিল তাহমিদ রুশদ

রশিদা ইয়াসমীন

কৃষিতত্ত্ব বিভাগে মাস্টার্স, ৩৬তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত

দীর্ঘ ২৬ বছর পর ২০১৬ সালে বাকৃবিতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে পরপর দুইবার সেরা নারী অ্যাথলেট হই আমি। এছাড়াও আন্তঃঅনুষদীয় হ্যাণ্ডবল খেলায় কৃষি অনুষদের দলনেতা হিসেবে ছিলাম এবং সেরা গোলদাতার পুরস্কার লাভ করি। আমি ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করি। খেলাধুলাই আমার ধ্যান, জ্ঞান ও ভালোবাসা ছিল। জেলা আঞ্চলিক ও বিভাগীয় পর্যায়েও খেলার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু পড়াশুনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করতে হয়েছে। খুব সম্প্রতি আমি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। আমার সন্তানকে খেলাধুলা আর লেখাপড়া একই সাথে করাতে চাই।

সূহা তাইয়ুম শপথ

পশুপালন অনুষদের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী

মেয়েরা রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে- এই বিষয়টা এখনো অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু সাহসী মেয়েরা এখন ক্যাম্পাসে বীরদর্পে সাইকেল চালাচ্ছেন। বাকৃবির প্রায় ৪০-৫০ জন মেয়ে ক্যাম্পাসে নিয়মিত সাইকেল চালান। আমিও তদের মধ্যে একজন। সময় পেলেই ক্যাম্পাসে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। কখনো কখনো ক্লাসে বা ফার্মে যাওয়ার সময়ও সাইকেল নিয়ে যাই। আমাদের অনেক শিক্ষকই আমার সাইকেল চালানোর তারিফ করেছেন। এটা খুবই ভালো লাগে। তবে এখনো মাঝে মাঝে টিজিং এর শিকার হতে হয়। ছেলেরা যখন টিজ করে তখন খুব খারাপ লাগে। তবে টিজিং এর ভয়ে সাইকেল চালানো বন্ধ করিনি।

হামিমা হুমা জেরিন

কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা থেকেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভলান্টিয়ার্স ফর বাংলাদেশে (ভিবিডি) যোগ দেই। বর্তমানে ভিবিডি-ময়মনসিংহ শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। ভিবিডি-এর তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে একটি বড় প্রজেক্ট পরিচালনা করছি। স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরবর্তী ব্যবস্থা নামক প্রজেক্ট শুরু করা হয়েছে। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও হোটেলে কর্মরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে নখ কাটার মেশিন, সাবান, ব্রাশ, টুথপেস্ট দেয়া হয়। একমাস পর পর এটা করে আসছি। আমার কাজের সম্মাননাস্বরূপ ন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যাসেম্বিলি-২০১৭-তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলকের পক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ উপহার হিসেবে পাই। ওই সময় নারী ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে আমাকে মাইক্রোসফটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা হয়।

মাহদিয়া তাসনিম মিতি

কৃষি অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী

ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাগুলোতে মিলনায়তনগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সবারই দৃষ্টি থাকে নাচ,গান আর অভিনয়ের দিকে। এসব ইভেন্টে এখন মেয়েরাই এগিয়ে। আমি নাচ ও অভিনয়ের পাশাপাশি উপস্থাপনাও করে থাকি। অভিনয়ের সুবাদে ‘বরষা’ ও ‘কানামাছি’ নামের দুটি বাণিজ্যিক শর্টফিল্মে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এছাড়া ‘বিউটিফুল বাউ’ নামের একটি ডকুমেন্টরি, দুটি মিউজিক ভিডিও, দুটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি।

রৌমিকা জাহান প্রমী

কৃষি অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী

কয়েক বছর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সংঘের কার্যক্রম ছিল না বললেই চলে। আর এখন ডিবেটিং সংঘ প্রতিনিয়ত আন্তঃঅনুষদীয়, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও রম্য বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে। সেখানে মেয়েদের উপস্থিতি ছেলেদের তুলনায় মোটেই কম নয়। এই ডিবেটিং সংঘকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার পিছনে বড় অবদান ছিল মেয়েদেরই। বিতর্ক করার মাধ্যমে আমাদের বাচনভঙ্গি ও শব্দচয়নের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।

তাতিয়া বিশ্বাস স্মৃতি

কৃষি অনুষদের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী

বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউটে মেয়েদের জন্য একটি আলাদা ইউনিটই রয়েছে। বর্তমানে গার্ল ইন রোভার, ক ইউনিটের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। নিজেকে সেবার জন্য পারদর্শী করে তোলাই হলো রোভার স্কাউট করার মূল উদ্দেশ্য। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাহায্য করা, কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করাই আমাদের প্রধান কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে থাকে রোভার স্কাউট।

মিলাদুন রিমা

কৃষি অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী

শিল্প-সাহিত্যেও পিছিয়ে নেই বাকৃবির মেয়েরা। ‘জোনাকির গল্প’ ও ‘চন্দ্রস্নান’ নামের দুটি মৌলিক বই প্রকাশিত হয়েছে আমার। ১২টি ছোটগল্প নিয়ে লেখা হয়েছে ‘জোনাকির গল্প’ আর ‘চন্দ্রস্নান’ উপন্যাসটি। বাকৃবির ক্যাম্পাস জীবনকে উপজীব্য করে লেখা। আমার প্রচণ্ড ভালোবাসার জায়গা এই লেখালেখি। আল্লাহ সহায় থাকলে যতদিন সাধ্য আছে লেখালেখি চালিয়ে যাব এবং বাকৃবির মেয়েদের শিল্প-সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ করবো।

এ বিভাগের অন্যান্য