সিলেট-৬: চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আ’লীগ পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল বাজছে দেশজুড়ে। কোন আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন, কারা আছেন দলীয় প্রতীকের মনোনয়ন প্রতিযোগিতায়- এসব নিয়ে আলোচনা সর্বত্র।
এর রেশ পড়েছে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসনেও। এ আসনে আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপিও আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া। এ আসনের একাধিক বারের এমপি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আগামী নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পাবেন নুরুল ইসলাম নাহিদ এটা প্রায় নিশ্চিত।
মনোনয়নের ব্যাপারে নাহিদ এবং তার অনুসারী নেতাকর্মীরা যথেষ্ট নির্ভার। নাহিদ দীর্ঘদিন মন্ত্রী থাকায় এলাকায় যে উন্নয়ন করেছেন, তার মূল্যায়ন করবেন জনগণ- এমন বিশ্বাস দলীয় নেতাকর্মীদের। তাছাড়া তিনি ১৯৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। তার ওপর দলের হাইকমান্ডের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। এছাড়া পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসাবে এলাকায় তার রয়েছে আলাদা ইমেজ। এ প্রসঙ্গে বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. আবদুস শুকুর বলেন-‘বড় দলে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। এটা রাজনীতির জন্য ভালো লক্ষণ। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা যোগ্যতার বিবেচনায় নুরুল ইসলাম নাহিদকে বেছে নেবেন।’ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবাদ আহমদ বলেন, ‘সিলেট-৬ আসনে বিজয়ী হতে হলে নুরুল ইসলাম নাহিদের বিকল্প নেই। যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা দলের কাজ করছেন। তবে এই আসনে উন্নয়নের রূপকার নুরুল ইসলাম নাহিদ এলাকায় সজ্জন ও ভদ্রলোক হিসাবে সবার কাছে সম্মানিত।’
তবে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য লবিং করছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সারওয়ার হোসেন ও লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফছার খান সাদেক। গত বন্যায় তাদের পক্ষ থেকে দুর্গত মানুষকে ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। মানুষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন চায়, এমন দাবি এই দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতার অনুসারীদের। মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব নেতা বিভিন্নভাবে তাদের নির্বাচনী আসনে পৃথক বলয় তৈরি করে কাজ করছেন। নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী আফছার খান সাদেক বলেন-‘গত নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। এবার আমাকে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে আমি নিশ্চিত।’ বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান বলেন, ‘আগামী নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগের জন্য অতি চ্যালেঞ্জের। তাই এখানে আসন হাতছাড়া হওয়ার মতো কাউকে মনোনয়ন দেবে না হাইকমান্ড।’
এদিকে পিছিয়ে নেই রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিও। আসন্ন নির্বাচনে এ দলটি অংশগ্রহণ করবে কিনা, এ প্রশ্ন পিছনে রেখে তাদের নেতৃত্বাধীন জোট কিংবা দলের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা আলোচিত হচ্ছে সর্বত্র।
সিলেট-৬ আসনে বিএনপি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত। তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামীও সাংগঠনিকভাবে এ আসনে বেশ মজবুত অবস্থানে। বিএনপি-জামায়াত ভোটের হিসাব যোগ করলে জাতীয় নির্বাচনের ফল অন্য ঘরে যাবে না বলে জোট নেতাদের অভিমত। ২০০৮ সালে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের মহা বিপর্যয়ের সময়ও বিএনপি-জামায়াতের ভোট ভাগাভাগি না হলে ফলাফল অন্য কিছু হতে পারতো বলে মনে করেন পৌর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা জমির হোসাইন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির বেশকিছু ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মকবুল হোসেনের বাক্সে না পড়লে আমরা জিততে পারতাম।’
এ আসন থেকে সরাসরি বিএনপির প্রার্থী কখনো জয়লাভ করতে না পারলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন তিনি। পরে বিএনপিতে যোগ দেন ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন। আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হবেন তিনি। ড. মকবুল হোসেন বলেন, এবার আমি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাবো বলে বিশ্বাসী। আসন পুনরুদ্ধারে আমাকে বিএনপি থেকে নির্বাচন করার সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে।’
এছাড়াও বিএনপির হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এডভোকেট রশীদ আহমদ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়ছল আহমদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টি থেকে যোগদানকারী আলহাজ কুনু মিয়া। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে মাওলানা হাবীবুর রহমান, ঢাকা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা সেলিম উদ্দিন ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব-এর নাম আলোচনায় রয়েছে।
দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজমুল হোসেন পুতুল বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি যোগ্য প্রার্থী বাছাই করবে। আর দল বা জোট থেকে যে মনোনয়ন পাবেন আমরা তার সঙ্গে কাজ করবো।’