সুনামগঞ্জ পৌরসভার উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে.
সকাল থেকে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। তবে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি কম। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিপি মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ চলবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। অধিক ঝঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে আজ ৪২ হাজারের বেশি ভোটার আজ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বড় ধরনের জটিলতা না হলে আজ সন্ধ্যায়ই জানা যাবে কে হচ্ছেন পৌরপিতা। দীর্ঘ প্রচারের পর নির্বাচনের সব আয়োজন এরই মধ্যে শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটে জয়-পরাজয় নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি টানা দুইবারের নির্বাচিত পৌর মেয়র আয়ুব বখত জগলুলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া মেয়র পদে এ ভোট হচ্ছে। বারবার পৌর নির্বাচনে পরাজিত বিএনপি এবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রয়াত মেয়র আয়ুব বখত জগলুলের ছোটভাই আওয়ামী লীগের নাদের বখত (নৌকা), বিএনপির দেওয়ান সাজাউর রাজা চৌধুরী সুমন (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন প্রয়াত আরেক জনপ্রিয় মেয়র মমিনুল মউজদীনের ছোটভাই দেওয়ান গণিউল সালাদীন (মোবাইল)। গণিউল সালাদীন ও সাজাউর রাজা চৌধুরী দুইজনই মরমি কবি হাছন রাজার প্রপৌত্র, সম্পর্কে চাচাতো ভাই। জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনজনই আশাবাদী।
জাতীয় নির্বাচনে সুনামগঞ্জে যেখানে বিপুল ভোটে বিএনপি পাস করে, সেখানে পৌর নির্বাচনে জামানত হারান বিএনপির প্রার্থীরা। এসব নির্বাচনে হাছন রাজা ও বখত পরিবারের মধ্যে লড়াই হওয়ায় এমন অবস্থা। পাস ফেলে দলীয় প্রভাব খুব বেশি কাজে আসে না। বারবার অংশ নিলেও বিএনপি মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে চলে যাওয়ায় এবার বিএনপি নেতারা আটঘাট বেঁধে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছেন।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সবশেষ নির্বাচনে ৪ হাজার ৩৫৯ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মরহুম আয়ুব বখ্ত জগলুল। তিনি পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮৪৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান গণিউল সালাদীন পেয়েছিলেন ১০ হাজার ৪৮৬ ভোট। বিএনপির প্রার্থী শেরগুল আহমদ পেয়েছিলেন ২৪১৪ ভোট। অন্য নির্বাচনগুলোরও প্রায় একই অবস্থা।
সুনামগঞ্জ পৌরসভা উপনির্বাচনে ২৩টি কেন্দ্রের সবটিই ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে ৬ জন পুলিশ, ২ জন পিসিসহ অঙ্গিভূত আনসার পুরুষ-মহিলা মিলে ১২ জন সদস্য থাকবেন।
পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে ৮টি মোবাইল টিম ১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ২ প্লাটুন বিজিবি এবং র্যাবের ৩টি টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। সুনামগঞ্জ পৌরসভায় এবার ৪২ হাজার ৩২২ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ২১ হাজার ১৪৯ এবং নারী ২১ হাজার ১৭৩ জন।
উপনির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার উপায় খুঁজতে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মতবিনিময় সভা করে ভিজিলেন্স টিম। সভায় আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র ও বিএনপির প্রার্থীর প্রতিনিধিরাও ছিলেন। সভায় উপস্থিত সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য ও পৌর নির্বাচন ভিজিলেন্স টিমের সদস্য শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে বলেন, ‘ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই নাগরিকরা দেখতে চান। বিষয়টি আমরা সভায় বলেছি। সে লক্ষ্যে তারা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সুনামগঞ্জের সভাপতি অ্যাডভোকেট হোসেন তওফিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। ভোটাররা যেন নির্বিঘেœ নির্ভয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোতালেব বলেন, নির্বাচনের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিয়েছি। এরপরও যদি ফোর্স বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে সেটাও করা হবে। তিনি বলেন, বুধবার বিকালে পৌর শহরের ২৩টি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্সসহ সব ধরনের মালামাল সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা এসব বুঝে নিয়ে নিজ নিজ কেন্দ্রে চলে গেছেন।