সিসিক নির্বাচন : মাঠে জামায়াতের জনপ্রিয় প্রার্থী,বিপাকে বিএনপি?
মবরুর আহমদ সাজু :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে টেস্ট কেস হিসেবে দেখছে জামাত। আর এই টেস্টে নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে মরিয়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও । মর্যাদার লড়াইয়ে হেরে গিয়ে বিএনপির হাতে কোন রাজনৈতিক অস্ত্র তুলে দিতে চায় না দলটি। দলটির শীর্ষ নেতাদের দাবি, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জিততে চায় তারা। এদিকে কিছুদিন আগে আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীতা করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যকরি পরিষদ সদস্য ও মহানগর জামায়াতের আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। একই সাথে তিনি দলীয় ফোরাম ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী পরিষদের সাথে বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। আদায় করে নিচ্ছেন তাদের সমর্থনও। তাছাড়া তার প্রচারণায় পিছিয়ে নেই দলীয় নেতা-কর্মীরাও। তারা নগরের প্রত্যেক ওয়ার্ডে নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শের লোক ছাড়াও সাধারণ ভোটারদের কাছে এখন থেকেই জুবায়েরের প্রার্থীতার বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। এ কারণে জামায়াতের প্রধান মিত্র বিএনপি অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে। রাজনৈতক বিশ্লেষকদের ধারনা বিগত নির্বাচনে জামায়াতের সমর্থেনে নিয়ে সিলেটে বিএনপি তাদের মনোনিত মেয়রকে নির্বাচিত করতে পেড়েছিলেন । এবার জামায়াত প্রার্থী দিলে বিএনপির প্রার্থী বিপাকে পড়বেন। বিশেষ করে; আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় সংগঠনটি স্বতন্ত্র অবস্থান থেকেই প্রার্থী দেবে সিটি নির্বাচনে। এ কারণে দলের গ্রীন সিগনাল পেয়েই সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মহানগর জামায়াতের আমির জুবায়ের জোরেশোরে কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে, বিএনপির তরফ থেকে এ ব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া না আসলেও ব্যক্তিগত ভাবে জামায়াতের সাথে আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপি থেকে মেয়র পদ প্রত্যাশী বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সম্প্রতি তিনি মহানগর জামায়াতের অফিসেও ঘুরে এসেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। সিলেট জামায়াতের নেতারা বলছেন, গত সিটি নির্বাচনে তারা বিএনপিকে ছাড় দিয়েছিলেন। তবে এবার ছাড় দিতে নারাজ নেতা-কর্মীরা। এছাড়া কেন্দ্র থেকেও সেভাবে নির্দেশনা এসেছে। এ কারণে তারা নির্বাচনী পস্তুতি শুরু করেছেন। তাদের মতে, জাতীয় ঐক্যের জন্যই ২০দলীয় জোট। স্থানীয় নির্বাচনে নয়। জামায়াত সূত্র আরো জানায়, গেলবার দেশের ৫টি সিটি করপোরেশনে এক সঙ্গে নির্বাচন হয়। এবং ৫টিতেই জামায়াত দলগতভাবে বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিলো। এবার জামায়াত আগেভাগেই নির্বাচনে প্রার্থী নামিয়েছে। গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে চায় জামায়াতে ইসলামী। প্রার্থিতা প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম জানান, ‘২০দলীয় জোট হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় নির্বাচনের জন্য নয়। এ কারণে কেন্দ্রের নির্দেশে তারা প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নেমেছেন। গেলবার সিলেটে বিশেষ কারণে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপিকে ছাড় দিয়েছিল জামায়াত। এবার একক প্রার্থী দিতে জামায়াত প্রস্তুতি শুরু করেছে। তিনি বলেন, সিলেটে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জুবায়েরের ইমেজ রয়েছে। একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়েই প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। সিলেটের সবখানে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সুতরাং জামায়াত প্রার্থী নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে।এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর অবস্থানও স্পষ্ট। তিনি বলেন, জামায়াত তো আলাদা একটি দল। তারা প্রার্থী ঘোষণা করতেই পারে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন জোটবদ্ধ হবে কিনা- সেটি সময়ই বলে দেবে। যা দলীয় সিদ্ধান্তে হবে।গত ১৫ নভেম্বর সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ওই মতবিনিময় সভায় আইনজীবী সমিতির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন তিনি। এডভোকেট জুবায়েরের এই প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে সিলেটে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনের অংশ হিসেবে এডভোকেট জুবায়ের নিজেই খোলাসা করে জানিয়েছেন ‘সিটি নির্বাচনে আমার প্রার্থিতা নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এটা যেহেতু স্থানীয় নির্বাচন তাই আমরা তা করতে দৃঢ়সংকল্প।’