লিবিয়ায় গিয়ে জিম্মি চার তরুণ, ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

পরিবারে সুদিন আনার আশায় দুই বছর আগে লিবিয়ায় গিয়েছিলেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চার তরুণ। কাঙ্ক্ষিত সুদিন ফেরার আগেই তাদের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। তাঁদের প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ করে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ছয় দিন ধরে একের পর এক নির্যাতনের ভিডিও পাঠাচ্ছে অপহরণকারীরা। তাদের বাংলায় কথা বলতে শোনা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২ সালের মার্চ মাসে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের শাজাহান প্রামাণিকের ছেলে সোহান প্রামাণিক (২০), তয়জাল শেখের ছেলে সাগর হোসেন (২৪), মৃত শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩২) ও ইনামুল ইসলামের ছেলে বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে লিবিয়ার কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজের জন্য যান। তাঁদের প্রবাসে পাঠাতে দরিদ্র পরিবার জমি বন্ধক ও গরু বিক্রির পাশাপাশি চড়া সুদে ঋণ নেয়। লিবিয়ায় যাওয়ার কয়েক মাস পর থেকেই তাঁরা নিয়মিতই পরিবারের কাছে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে পাঠাতেন।

এই চার তরুণের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২ জুন ইমো অ্যাপে কল করে চারজনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

অপহরণকারীরা বাংলা ভাষায় কথা বলছিলেন। তাঁরা জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেদিনের পর একের পর ওই তরুণদের শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও তাঁদের কাছে আসতে থাকে। ভিডিওতে বলা হয়, দ্রুত টাকা না দিলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকবে।

জিম্মি যুবক সোহানের বাবা বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের শাজাহান প্রামাণিক বলেন, ‘গত রোববার আমার ফোনের ইমো অ্যাপে কল আসে। সেখানে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোহান তাকে বাঁচানোর আকুতি জানায়। ১০ লাখ টাকা না দিলে অপহরণকারীরা তাঁকে মেরে ফেলবে বলে জানায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই বছর আগে জমি বন্ধক ও ঋণ করে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিবিয়ায় পাঠিয়েছি ছেলেকে। সেই ঋণের টাকা এখনো শোধ করতে পারিনি। মুক্তিপণের টাকা কোথা থেকে দেব?’

জিম্মি আরেক তরুণ নাজিমের স্ত্রী নাদিরা বেগম বলেন, ‘আমরা এতটা গরিব যে এখনো বৃষ্টি হলে আমাদের ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়ে। স্বামীকে ঋণ করে ৫ লাখ টাকা হাতে তুলে দিয়েছি। মুক্তিপণের ১০ লাখ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা আমার নাই। সরকার আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিক।’

বিধবা ছকেরা বেগম সরকারি টিআর-কাবিটা প্রকল্পের নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শেষ সম্বল ও এনজিও থেকে ঋণ করে ছেলে সাগরকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেই ঋণ এখনো পরিশোধ করতে পারেননি।

তিনি বলেন, মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই। সরকার কিছু না করতে পারলে তিনি কিডনি বিক্রি করে ছেলেকে উদ্ধার করবেন।

বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘লিবিয়ায় আমার ইউনিয়নের চার যুবককে অপহরণ করা হয়েছে। ঘটনাটি যেহেতু দেশের বাইরে, সেহেতু এখানে আমাদের কিছুই করার নেই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা ছাড়া।’

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘চার যুবক অপহরণের ঘটনা জানতে পেরে পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা বিষয়টির খোঁজখবর রাখছি।’

এ ব্যপারে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সুত্র: আজকের পত্রিকা

এ বিভাগের অন্যান্য