দেশে কি আইন-আদালত নেই, আদম তমিজীর শুনানিতে বিচারক

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

গ্রেপ্তারের ১৫-২০ দিনের মধ্যেও আলোচিত ব্যবসায়ী আদম তমিজী হককে আদালতে হাজির না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারক। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিব জামিন শুনানিকালে বলেন, গ্রেপ্তারের ১৫-২০ দিনের মধ্যে আদালতে হাজির না করে কীভাবে আসামিকে রাখা যায়। দেশে কি আইন-আদালত নেই?

আজ আদম তমিজী হকের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন জামিন চেয়ে শুনানিতে বলেন, ‘আদম তমিজী হক একজন মানসিক রোগী। মানসিক ইন্সটিটিউট বিকন পয়েন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১১ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মানসিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় তাকে সেখানেই চিকিৎসাধীন রাখা হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে আদালতে হাজির করতে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুর আবেদন করা হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেন।’

এ সময় বিচারক জানতে চান, তাকে কি চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। আইনজীবী জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন বিচারক জানতে চান, কোর্টে না এনে তাকে সেখানে কিভাবে রাখা হয়েছিল? আইনজীবী জানান, তাকে আদালতে আনা সম্ভব ছিল না।

বিচারক বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা সংবিধান আছে। তাহলে সংবিধান ছিঁড়ে ফেলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১৫-২০ দিনের মধ্যেও আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এতদিন সেখানে কিভাবে থাকেন। দেশে কি আইন-আদালত নাই।’ এরপর আদালত আদম তমিজী হকের জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মানহানির এ মামলায় গ্রেপ্তার আদম তমিজী হককে গত ৪ জানুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের পরিদর্শক মো. রেজাউল করিম আদালতে হাজির করেন।

আদালতে পাঠানোর আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি আদম তমিজীকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গঠন করা মেডিকেল বোর্ডে গত ৩ জানুয়ারি হাজির করা হলে মেডিকেল বোর্ড আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বিকন পয়েন্ট লিমিটেড হাসপাতালের চিকিৎসার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আসামিকে পুনরায় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।

মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আসামি গুরুত্বর মানসিক রোগে ভুগছেন এবং এখনো তার মধ্যে মানসিক রোগের লক্ষণ বিদ্যমান। তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা অব্যাহত রাখা জরুরি এবং সতর্কতা অবলম্বন করে তাকে আদালতে উপস্থিত করা যেতে পারে।

গত ১৫ নভেম্বর আদম তমিজী হকের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান নাঈম।

মামলায় বলা হয়, গত ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় আনিছুর রহমান নাঈম নিজ অফিসে অবস্থানকালে দেখতে পান, আদম তমিজী হক তার আদম হক নামের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে জনশৃঙ্খলা পরিপন্থী, মিথ্যা, আক্রমণাত্মক তথ্য উপাত্ত প্রচার করে এবং প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকিসহ বর্তমান সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের অবমাননাকর, আপত্তিজনক, মানহানিকর, উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করেন। তার এ সব বক্তব্যে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এই পলাতক আসামি তার অজ্ঞাতনামা পলাতক সহযোগীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

গত ৯ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসা থেকে আদম তমিজী হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এরপর সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ১১ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য