মোহাম্মদপুরে গণছিনতাই, কথায় মালামাল না দিলেই কুপিয়ে জখম
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বসিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকায় গণছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর এ ঘটনা ঘটে। একদল তরুণ সন্ত্রাসী অস্ত্র হাতে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে পথচারীদের জিম্মি করে। এরপর এক তরুণীসহ বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা।
এ ঘটনার একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্কের পাশাপাশি তোলপাড় চলছে। অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও।
ভুক্তভোগী মো. নীরব নামের একজন বলেন, ‘দিনের কাজ শেষে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় অল্প বয়সী কয়েকজন এসে ঘাড়ে চাপাতি ধরে মোবাইল ফোন দিতে বলে। তাদের কথায় মোবাইল দিতে না চাইলে আমাকে মারধর করে।
তিনি বলেন, ‘এ সময় ছিনতাইকারীরা আমার বন্ধুকেও মারধর করে। এমনকি বেল্ট দিয়ে পেটায় তাকে। প্রকাশ্যে তাদের এই তাণ্ডব দেখার কেউ নেই।’
একই ধরনের অভিযোগ করেন নির্মাণ শ্রমিক জাহিদুল ইসলাম। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় তাকেসহ আরো দুজনের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। তারা জাহিদের মাথায় কোপ দিয়েছে। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার মাথায় ছয়টি সেলাই লেগেছে।
শুধু তারাই নন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে ওয়াকওয়েতে হাঁটতে গিয়ে আরো অনেকে এই ছিনতাইকারীদের হামলার শিকার হন। তাদের মধ্যে চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকার বাসিন্দা নুসরাত আফরিন বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় আমি বাসার পাশে ওয়াকওয়েতে হাঁটতে বের হই। এ সময় হঠাৎ কয়েকটা ছেলে এসে আমাকে ঘিরে ধরে হুমকি দেয়। এরপর গলায় অস্ত্র ধরে মোবাইল ফোন আর টাকা দিতে বলে। পরে একজন আমার ব্যাগ খুলে মোবাইল নিয়ে নেয়। টাকা না থাকায় আমার শরীরে তল্লাশি করার চেষ্টা করে। এর মধ্যে আমার পা ও পিঠে অনেকগুলো আঘাত করে। মোবাইল নিয়ে যাওয়ার পর একজন এসে লক খুলে দিতে বলে। তখন আমি দৌড় দিলে, আমার কপালে ও হাতে কোপ দেয়।’
পুলিশের সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন আফরিন। ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’-এ ফোন করেও তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীরা পুলিশের সহায়তা পাননি। ৯৯৯-এ ফোন করার প্রায় চার ঘণ্টা পর পুলিশের একটি টহল গাড়ি এলেও ঘটনার বিষয়ে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।
রবিবার মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভুঞা বলেন, তরুণ (কিশোর) গ্যাং সদস্যরা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ঘটনা সম্পর্কে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী আরো কয়েকজন থানায় একসঙ্গে এলে মামলা নেওয়া হবে।
৯৯৯-এ ফোন করেও পুলিশি সহায়তা পাননি ভুক্তভোগীরা। এমন অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
