আরেক ঐতিহাসিক অর্জনের সাক্ষী হচ্ছে বাংলাদেশ

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

প্রমত্তা পদ্মার বুকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তাক লাগিয়ে দেওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে আরেকটি উপহার দিতে যাচ্ছেন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন তিনি। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার তার উন্নয়ন পরিক্রমায় আরেকটি বড় উদাহরণ সৃষ্টি করবে।

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে নতুন ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধন করবেন। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে তিনি মাওয়া রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে ভাঙ্গা স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেবেন। এর আগে তিনি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। দুপুর ২টায় তিনি ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন।

এদিকে, ভাঙ্গায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে পুরো ফরিদপুর জেলাসহ আশপাশের জেলা-উপজেলাতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। তার আগমনকে সামনে রেখে ভাঙ্গাজুড়ে চলছে সাজ সাজ রব।

ঢাকা-ভাঙ্গা রুটের যে অংশে প্রাথমিকভাবে রেল চলবে, সে রুট যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত যাবে। মোংলা বন্দরকে যুক্ত করায় এই রেলপথ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন।

তিনি বলেছেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৪টি জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসব। রেলওয়ে সেক্টরের উন্নয়নে বিগত বিএনপি সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি বিশেষ ট্রেনে পদ্মা সেতু পার হবেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেল ট্র্যাক নির্মাণ করছে। এর ৮২ কিলোমিটার অংশ আগামীকাল খুলে দেওয়া হবে। যশোরকে সংযোগকারী অবশিষ্ট অংশটি আগামী বছরের জুনে চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

গত বছরের জুনে যুগান্তকারী পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর দুই মাস পর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে রেল সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে বিশেষ ট্রেনের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়।

এর আগে পদ্মা সেতুতে পাথরহীন রেললাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত ট্রায়াল রান চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত বছরের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প’-এর আওতায় ঢাকা ও যশোরের মধ্যে রেল সংযোগ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯,২৪৬.৮০ কোটি টাকা। এতে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১,০৩৬.৭০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।

এ রেল প্রকল্পের বিশদ বিবরণে বলা হয়েছে, প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পর দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী শহরের প্রবেশপথ আরও বর্ধিত হবে, যা মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এবং নড়াইল জেলার নতুন এলাকাকে যুক্ত করবে।

প্রকল্পটি ঢাকা-যশোর-খুলনা ২১২.০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট দিয়ে বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপন করবে। এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট স্থাপন করবে এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী ও বিজি কন্টেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এ রুট কন্টেইনার বহনের জন্য গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করবে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ফরিদপুর জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সড়ক জুড়ে টাঙানো হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন। মুন্সীগঞ্জ থেকে জাজিরা পয়েন্ট, শিবচরের কুতুবপুর, পাচ্চরবাজার, সুর্যনগর, মালিগ্রাম, চান্ডা এলাকাসহ ভাঙ্গার প্রত্যেকটি মোড়ে তোরণ, ফেস্টুন ও ব্যানারে বহু নেতার রঙিন পোস্টারে বর্ণিল হয়ে উঠছে কমপক্ষে ৩০ কিলোমিটার এলাকা।

এছাড়াও বিভিন্ন পদধারী নেতাদের বড় বড় ব্যানার ও সরকারের উন্নয়নের চিত্র শোভা পাচ্ছে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জসহ পৌরসভার বিভিন্ন মোড়ে। রাস্তার পাশের দেওয়াল ও গাছে গাছে ঝুলছে উন্নয়নের স্লোগান। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগমের মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন নেতারা।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দফায় দফায় বৈঠক করেছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়েছে। ভাঙ্গা এলাকাজুড়ে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য সৃষ্টি। সেই সেতুতে রেললাইন উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, যা আমাদের জন্য গর্বের।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে সামনে রেখে এরইমধ্যে পুলিশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। হেড কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ও ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের (এসপি) দিকনির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যক্রম চালাচ্ছে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে তৎপর রয়েছে পুলিশ।

ভাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে ভাঙ্গায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।-রাইজিংবিডি

এ বিভাগের অন্যান্য