১৪ বছর পর মহানগর যুবলীগের সম্মেলন

নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘ ১৪ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো সিলেট মহানগর যুবলীগের সম্মেলন। শনিবার (২৭ জুলাই) বেলা ৩টায় সিলেট নগরীর রেজিস্টারি মাঠে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

সিলেট মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিক জায়গীরদার ও সেলিম আহমদ সেলিমের সঞ্চালনায় সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সিলেট মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ। সম্মেলন উপলক্ষে বেলা ১২টার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার যুবলীগ নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থল সিলেট রেজিস্টারি মাঠে প্রবেশ করেন। এসময় তাদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সম্মেলন স্থলের চারপাশ। তাদের হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন। অনেকের মাথায় ছিল রঙিন ক্যাপ। সম্মেলনকে কেন্দ্র সারা নগরীতেই শোভা পায় রঙের বর্ণিল ব্যানার ও ফেস্টুন।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কাউন্সিলের প্রথম পর্ব। উদ্বোধনী বক্তব্যে ওমর ফারুক বলেন, বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আর দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে প্রধান ভুমিকা রাখতে হবে যুবলীগকে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ একসময় ক্ষুধা, দারিদ্র, মঙ্গার দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল বিশ্বের কাছে। বিগত দুই মেয়াদে শেখ হাসিনার উন্নয়নমূখী নীতির কারণে বর্তমানে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আর এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে কর্মদক্ষ ও দেশপ্রেমিক যুবকদের ভুমিকা রাখতে হবে। তাই তিনি যুবলীগকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, যুবলীগ আমাদের সম্পদ। যুবলীগকে রাজনীতির পাশাপাশি দেশ গড়ার কাজেও ভুমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল মানব সম্পদ। আর এই মানব সম্পদ যদি আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি তবে অচিরেই বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হব।

মন্ত্রী বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) তাদের জরিপে বলছে এশিয়ার ৪৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এখন সর্বোচ্চ। যে পাকিস্তান আমাদেরকে বঞ্চিত করে তাদের সম্পদ বাড়িয়েছে সেই পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ থেকে বহুগুণ পেছনে। তারা বাংলাদেশের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত। তারা এখন বাংলাদেশ হতে চায়। এটা আমাদের সরকারের অর্জন। ড. মোমেন আরো বলেন, আমাদের যুব সমাজ আমাদের এই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের যুব সমাজকে সত্যিকারের সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। আমাদের নারী পুরুষের ক্ষমতায়ন করতে হবে, সামাজিক বৈষম্য দূর করে দারিদ্রমুক্ত সমাজ গড়তে হবে। প্রযুক্তি ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজকে দক্ষ মানব সম্পদে রুপ দিতে হবে। তবেই আমারা ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র গড়তে পারবো। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশানুসারে কাজ করতে হবে যুবলীগকে।

সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. লুৎফুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, সিলেট মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৪ সালে। সম্মেলনে সৈয়দ শামীম আহমদ সভাপতি ও আবদুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই কমিটির মেয়াদ ফুরালে নতুন আর কোন কমিটি হয় নি। সৈয়দ শামীম ও আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় যুবলীগ আলম খান মুক্তিকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দেয়। এই কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় মুশফিক জায়গীরদারকে। তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করার নির্দেশনা থাকলেও পাঁচ বছরেও মহানগর সম্মেলন করতে পারেন নি তারা।
অবশেষে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে গতকাল শনিবার সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে অনুষ্ঠিত হয় কাউন্সিলের প্রথম পর্ব ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন সিলেট মহানগর যুবলীগের নেতৃত্ব। সিলেট কবি নজরুল অডিটরিয়ামে দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে সন্ধ্যায়।

এ বিভাগের অন্যান্য