সিলেট বাণিজ্য মেলা জুয়ায় পরিণত বিপথে তরুণ প্রজন্ম

জুয়ার নগরী সিলেট : বাণিজ্য মেলা মাঠে লটারি বিক্রির একাধিক বুথ!

সিলেটের সময় ডেস্ক:

এইচএসসির ফাইনাল  পরীক্ষা চলছে দুই দিন গেপ তাই বন্ধুদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছেন সিলেট কমার্স  কলেজ ও সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ ছাত্ররা মেলায় ডুকতে বেশ প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়েছেন আর সাংবাদিক নাম শুনে এগিয়ে এসে বললেন   সিলেটে বাণিজ্য মেলায় আগে কখনো এরকম দেখিনি এবছর নতুন দেখলাম  মেলায় ধাপে ধাপে লটারির টিকিট ধাপে ধাপে বিক্রি হচ্ছে।  নাম  তার  নাজমুল , তার সাথে  দল বেধে আসা সজল রুবেল তারিফরা বললেন একই কথা তারা বলেলন  মেলায় নয়  যেনো জুয়াড়ি মেলা, এই রাজ্যেই, নিরাপত্তা দেয় খোদ পুলিশ।

মেলার প্রধান ফটকে  দাড়িয়ে আছেন তান্নি ইসলাম  চাকুরী করেন বেসরকারি একটি সংস্থায়। ২০ টাকা করে মোট ৩টি টিকেট কেটে প্রবেশ করলেন মেলা মাঠে। একটু ভিতরে গিয়ে দৃষ্টিনন্দন পানির ফুয়ারা। ফুয়ারার চার পাশে বসা কয়েকটি টেবিল। এসকল টেবিলে বসেছে টিকেটের পসরা। একজন লোক বলছে আপা টিকেট নেন। তখন তান্নি ইসলাম কাছে গিয়ে জানালেন, ‘আমি তো টিকিট কিনেছি, তাহলে এই টিকিটগুলো কি? টিকেট বিক্রেতা জানালো-এটি হচ্ছে র‌্যাফেল ড়্র খেলার টিকিট। এখানে ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে আপনি নিজের ভ্যাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ নিতে পারেন। রবিবার রাত ৮টায় টায় সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা মাঠের চিত্র এটি। প্রবেশ মূল্যের মাধ্যমে র‌্যাফেল ড্র করার কথা আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হলেও গোটা মাঠে রয়েছে টিকিট বিক্রির একাধিক বুথ। যেখানে প্রকাশ্যে এজেন্টদের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার টিকিট।
মাঠব্যাপী শুধু টিকিট বিক্রিই নয়, মেলা মাঠে বিভিন্ন রাইডারের দাম রাখা হয়েছে অনেকের সাধ্যের বাইরে। ক্রেতা চাহিদার দিকে শুরু থেকেই লক্ষ নেই আয়োজকদের। মেলার প্রতিটি স্টলের পণ্যই অত্যন্ত নিম্নমানের।
সিলেটের হকার্স মার্কেট থেকে নগরীর অলীগলিতে সর্বত্রই এসকল জিনিস কেনাকাটা করা যায় অনায়াসে। ক্ষোভের সাথে কথাটি বললেন সমাজকর্মী আলী আশরাফ চৌধুরী।
মেলা আয়োজক কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাঝে গত দুই বছর বাণিজ্য মেলায় এই জুয়ার আসর বসেনি বাণিজ্য মেলায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিবারই জুয়ার আসর বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে মাঝে গত দুই বছর আর লটারির নামে র‌্যাফেল ড্র বা জুয়ার আসর বসাতে সাহস পাইনি তারা। কিন্তু এবার একই কায়দায় আবার জুয়ার আসর চলছে বেশ জোরে-সরে। গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক হারে লটারির টিকিট বিক্রি করে রাতে সেগুলো র‌্যাফেল ড্রয়ের নামে জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে।

বিনিময়ে দুই-একটি বড় ধরনের পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এই আকর্ষণীয় পুরস্কারের লোভে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ২০ টাকা মুল্যের লাটরির টিকিট সংগ্রহ করছে। যার ফলে প্রতারিত হচ্ছে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ। একেক জন ১০০-২০০ পর্যন্ত টিকিট সংগ্রহ করছেন। কিন্তু দিন শেষে কিছুই মিলছে না কপালে। এতে করে অনেকেই আর্থিকভাবেও ক্ষতির মুখে পড়ছেন। আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মেলায় লটারি বিক্রির নামে প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এই টাকার মধ্যে তিন-চার লাখ টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়। আর বাকি টাকায় হয় লুটপাট।

সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাস্থ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স মাসব্যাপী আয়োজন করা হয় এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। মেলা শুরু করার আগে ৪ মার্চ আয়োজক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নগরের আনন্দ টাওয়ার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার মেলায় ফুটপাতের পণ্য নয়, বরং ভারত, চীন, মিশর, থাইল্যান্ড, পাকিস্তানসহ দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল থাকবে। মানসম্পন্ন পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয় করা হবে। তবে, সে সময় প্রবেশ মূল্যের উপর র‌্যাফেল ড্র বিষয়ে সংবাদকর্মীদের না জানালেও মেলার শুরু থেকেই চলছে এই লটারী বাণিজ্য।

মেলায় ফরেইনার জোন কিংবা বিদেশী স্টল থাকার কথা বলা হলেও গোটা মাঠ জোড়ে বিদেশী প্যভিলিয়ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মেলায় আসা মীরাবাজারের ক্রেতা আইনুল হক বললেন, কেবল মাত্র নিজ দেশের অংশগ্রহণে কখনোই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হয়না। তিনি এটিকে প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, গোটা মেলার মাঠে কেনার মতো এক্সক্লুসিভ কিছু পাইনি। তাছাড়া, নারী উদ্যোক্তাদের নির্ধারিত জোন থাকার কথা থাকলেও সেখানে শোভা পাচ্ছে একটি গার্মেন্টের দোকান।

এদিকে, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে এবারের ৫ম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাইকিং হচ্ছে নগরীর সর্বত্র। মেলার প্রবেশ মূল্যের উপর র‌্যাফেল ড্র জানিয়ে মহানগরের প্রতিটি এলাকায় করা হচ্ছে মাইকিং। পুরস্কারের লোভে প্রতিদিন টিকিট কিনছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমতি পত্রের কোনো শর্তাবলিতে মেলায় লটারি বা র‌্যাফেল ড্র-এর কথা উল্লেখ নেই। তবে কিভাবে মেলার আয়োজকরা এই লটারি পরিচালনা করছেন-এমন প্রশ্ন দর্শনার্থীদের। প্রতিদিন লটারি ড্র সিলেট ক্যাবল সিস্টেমের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। প্রশাসনও এ বিষয়টি অবগত হয়েও নীরব ভূমিকা পালন করছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই লটারির নামে জুয়া খেলা চলছে।

আজ সোমবার থেকে সারাদেশে শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রতিদিন র‌্যাফেল ড্র-এর লটারির নামে জুয়া খেলা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা সিলেট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারে কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়া উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে প্রতিদিন গানবাজনা করায় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক।

জানা গেছে- সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের উদ্যোগে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় গত ৯ মার্চ শনিবার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে ছিলেন- মেলায় থাকবে দেশ-বিদেশের ৩৫ টি প্যাভিলিয়ন ও ১২০ টি স্টল।

বিষয়টি জানতে মেলা অফিসের সামনে কথা হয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের সহযোগি সোলেমান আহমদের সাথে। তিনি বলেন, অনুমোদনের মাধ্যমেই লটারি চলছে। তাছাড়া প্রশাসন পুরো বিষয় সম্পর্কে অবগত। এসময় তিনি আরো বলেন, (আপনাদের) ‘সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্য ২ জন লোক রয়েছেন। একজন ফর্সা খাটো করে চশমা পড়েন আরেক জন পান খান। আমি তাদের নাম জানি না। তবে তারা প্রতিদিন মেলা মাঠে আসেন। ওই মানুষের মাধ্যমেই সাংবাদিকদের সম্মানি পৌছানো হয়। ওনার সাথে যোগাযোগ করেন- আপনিও পাবেন’। কিসের সম্মানী? জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, সিলেটে এমন সাংবাদিক নেই, যারা এম এ মঈন খান বাবলুর কাছ থেকে টাকা নেয়নি |সুত্র নিউজ মিরর

এ বিভাগের অন্যান্য