প্রতিবাদ করার সাহস পাই না, নীরবে সহ্য করতে হয়

নগরীতে ইভটিজাররা আবারো সক্রিয়
আতংকে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছাত্রীরা
‘এইচ এএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর প্রত্যয় ’

নগরীতে আবারো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে ইভটিজররা। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও শপিংমলসহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী নারীকে উত্ত্যক্ত করছে বখাটেরা। এতে আবারো উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে অভিভাবকদের। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত না থাকায় ফের সক্রিয় হচ্ছে টিজররা এমনটা বলছেন করছেন বিশিষ্টজনরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত বখাটেরা বিভিন্ন ভাবে উত্ত্যক্ত করছে ছাত্রীদের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেট শে শুরু করে রাস্তায়ও উত্তক্ত করছে বখাটেরা। বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ পরীক্ষা শেষে দল বেঁধে ছাত্রীদের পিছু নেয় বখাটেরা। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।

এছাড়াও নগরীর বেশিরভাগ বিপনী বিতানগুলোর সামনেও ওৎ পেতে থাকে টিজাররা। কেনাকাটা করতে আসা মহিলা ও তরুণীদের লক্ষ্য করে ‘অশোভ উক্তি’ ছাড়াও গায়ে ধাক্কা দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। বখাটেদের হয়রানিতে অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছেন অনেকে।

হয়রানির শিকার মঈন উদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের সাবিহা নামের কলেজ ছাত্রী জানান, প্রতিবাদ করার সাহস পাই না প্রায়ই যুবকদের বখাটেপনার শিকার হতে হয়। প্রতিবাদ করার কোনো ভাষা থাকে না। নীরবে সব সহ্য করতে হয়। প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও মার্কেটগুলোর সামনে র‌্যাব-পুলিশের টহল ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানান তিনি।

সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী সাবেরা সিরাজ জানান, নীরবে সব সহ্য করতে হয় সকাল বেলা কলেজে ঢুকার সময় বাসায় যাবার সময় বখাটেরা কি রকম চেয়ে থাকে সবসময় ভয়ে থাকি আমরা। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়।

সিলেট মেট্রাপলিটন ইউনিভসির্টির শিক্ষার্থী সাজেদা বলেন, আমাদের হোস্টেল জল্লার পার আমি এমবিএ পড়ি রাতে ক্লাস থাকে তাই ভার্সিটিতে রাতে হোস্টেলে যেতে হয়। ক্লাস শেষে বাসায় ফিরার পথে বখাটেরা পিছু নেয় তাই অনেক সময় মুখ ফুঠে বলতে পারি না।

এ বিষয়ে সিলেট তরুণ আইনজীবী মুহিবুর রহমান এহিয়া বলেন, আইনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য বা আইন বহির্ভূত কাজ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য দায়টা আমাদের সবার উপরই বর্তায়। কারন সমাজে যেমন আমরা ও বসবাস করি তেমনি তারাও বসবাস করে। কিছু কিছু অপরাধ প্রবণতা বাড়ে সামাজিক কারনে। আর কিছু বাড়ে অর্থনৈতিক কারণে, কিছু অভ্যাগত কারণে আবার কিছু রাজনৈতিক কারণে। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এর দায় এড়াতে পারে না।

এ প্রসঙ্গে, উন্নয়নকর্মী নুরুল আমিন জানান, বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আবার কেউ কেউ বলেছে, নেশাগ্রস্ত কিছু তরুণ নেশার অর্থ সংগ্রহের জন্য এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেএ। তিনি জানান,নগরীর স্কুল ও কলেজগুলোর মধ্যে মঈনুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যাল, মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের রসময় মেমরিয়েল হাইস্কুল মির্জাজাঙ্গাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,আম্বরখানা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, ব্লুবার্ড স্কুল এন্ড কলেজ ,সরকারি মহিলা কলেজ, কলেজ মিরের ময়দান সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ এলাকায় প্রতিদিনই চলে বখাটেদের আড্ডা। স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের অশালীন উক্তিসহ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছে। এভাবে স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে।

সিলেট মহানগরীর মঈনুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়য়ের জনপ্রিয় শিক্ষক মকসুদ আলম বলেন, শেখঘাট ইভটিজারদের ডেঞ্জার জোন। কারন বখাটেরা কাজির বাজার সম্মুখে বসে থাকে। মঈনুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েরা ছুটি হলে ছুটির পর তারা মেয়েদের পিছু নেয়। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে স্কুলগামী মেয়েদেরকে বিরক্ত করা এক শ্রেনির বখাটেদের নেশা। এর ফলশ্রুতিতে কোমলমতী মেয়েরা আত্মহত্যার পথ পর্যন্ত বেছে নেয় বলে জানান তিনি। এজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত নজরদারী দরকার বলে মনে করেন তিনি।

জেসিসের এনজিও কর্মী এম.এ ওয়াহিদ চৌধূরী বলেন , কিছুদিন নিরব থাকার পর তাদের কলেজের আশে পাশে বখাটেদের দৌরাত্ম আবারও শুরু হয়েছে। অশালীন উক্তি, শিস দেয়া, গান গাওয়া, প্রেমের প্রস্তাবসহ বিভিন্ন কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে ছাত্রীদের। কেবল স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাই নয়, নগরীর মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করতে আসা মেয়েরাও বখাটেদের যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। বখাটেদের বিরুদ্ধে চলমান আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে সমাজব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে হলে যৌন হয়রানি বন্ধে সামাজিক প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ‘বেলা’র সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার বলেন ,ইভটিজিং বা যৌন নিপীড়নের ঘটনা বন্ধে যে ধরনের আইন রয়েছে, এর প্রয়োগ হচ্ছে না। ফলে অভিযুক্তদের শাস্তি হয় না। এতে অপরাধীরা ধরেই নেয়, অন্যায় করেও পার পাওয়া যায়। আর এ কারণেই এ ধরনের অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না। তিনি বলেন, আদালত রায় দেয়ায় পরও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় সারা দেশে ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধগুলো আগের মতোই ঘটে চলছে। এ জন্য সামাজিকভাবে প্রতিরোধ জরুরি। সেই সঙ্গে পারিবারিক সচেতনতাও দরকার। অপরাধ কমাতে হলে কঠিন আইনের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে আইনকে কার্যকর করার পথও সহজ করে দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার ওসি সেলিম মিয়া বলেন, পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম ক্লাস শুরু ও ছুটির সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে সাদা ও ইউনিফর্ম পরিহিত পোশাকে অবস্থান করছে। ইভটিজিং রোধে বেড়েছে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া এইচএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে পুলিশের নজরদাড়ি বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।

সূত্র শুভপ্রতিদিন

এ বিভাগের অন্যান্য