সুনামগঞ্জের হাওর আন্দোলন নেতা আজাদের মূল খুনি গ্রেফতার
সুনামগঞ্জে রাতের অন্ধকারে আততায়ীদের হাতে খুন হওয়া হাওর আন্দোলন নেতা আজাদ মিয়ার মূল খুনিকে গ্রেফতারের পর হত্যার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছ শ্রাবনুজ্জামান ওরফে শ্রাবণ মিয়া।
১০ হাজার টাকার বিনিময়ে আজাদকে হত্যার করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে সে। শ্রবান শহরের দক্ষিণ আপরপিননগর এলাকার মুখলেছুর রহমানের ছেলে।
আজাদের দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ পাবেল ও রিপনের কাছ চুক্তির টাকা পায় শ্রাবণ। ১৪ মার্চ সকালে শ্রাবণকে চুক্তির টাকা পরিশোধ করে পাবেল। আক্রমনের সময়ও শ্রাবণকে সহযোগিতা করে ওই দুজন।
বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান।
তিনি জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় উপজেলার ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে আজাদ হত্যার মূল আক্রমণকারী শ্রবাণ গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে আটক করা হয় শ্রাবণের ভাই মাহবুবকে। মাহবুবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক হয় শ্রাবণ।
পুলিশ সুপার জানান, ‘আটকের পর রাতে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছ শ্রাবণ। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দুই ফুট লম্বা একটি স্টিলের পাইপ উদ্ধার করা হয় শ্রাবণের বাসা থেকে। জব্ধ করা হত্যাকান্ডে রাতে ব্যবহৃত তার জুতা ও হুডি।’
তিনি আরো জানান, ‘১৪ মার্চ সকালে আজাদকে আঘাত করার পরিকল্পনা করে তার প্রতিপক্ষরা। দিনভর কয়েক জন মিলে তাকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় অনুসরণ করতে থাকে। কিন্তু দিনের বেলায় আঘাত করতে গিয়ে সফল হতে পারেনি তারা। পাবেল ও রিপন, ভাড়াতে খুনি শ্রাবণের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয় আজাদকে।’
তিনি জানান, ‘রাত ১০টার দিকে কেনাকাটা করে আজাদ বাসায় ফেরার পথে সড়ক ও জনপথের রেস্ট হাউসের সম্মুখে শ্রাবণ, রিপন, পাবেল ও অন্যান্য সহযোগীরা তাকে আক্রমণ করে। ভাড়াটে শ্রাবণ স্টিলের রড দিয়ে আঘাত করে আজাদের মাথায়। তাকে গুরুতর আহত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আক্রমণকারীরা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।’
পুলিশ সুপার জানান, ‘আজাদ মিয়ার সাথে উকিল আলী, পাবেল, রিপনসহ অন্যান্য কয়েকজনের পূর্ব বিরোধ ছিল। আসামী পাবেল ইতোপূর্বে একটি নারী নির্যাতন মামলার আসামি হয়েছিল, যেটাতে আজাদ মিয়ার হাত ছিল বলে সে মনে করত। এছাড়া গত উপজেলা নির্বাচনের সময় আজাদ মিয়ার ভাইয়ের সাথে কথা কটাকাটি হয় পাবেলের বন্ধু রিপনের। সেদিন রিপনকে মারধরও করা হয়। এই ঘটনায়ও আজাদ মিয়াকে দায়ি করে তারা। এসব কারণেই আজাদকে মারার পরিকল্পনা করে তারা।’
হাওর দুর্নীতির প্রতিবাদ করার কারণে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্তে এ সংক্রান্ত কোন কিছু এখনও পাওয়া যায়নি। তবে গভীরভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এর পেছনে অস্ত্রদাতা, গডফাদার থাকলে তাদেরও বের করা হবে।
তিনি বলেন, এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে- এমন সন্দেহভাজন আরো আরো কিছু নাম রয়েছে পুলিশের কাছে। যেগুলো তদন্তের স্বার্থে আমরা বলছি না। অনেক কাজ করার বিষয় আছে।
পুলিশ সুপার বলেন, যে কোন ধরণে হত্যাকান্ড অবশ্যই ঘৃণ্য একটি বিষয়। আমরা সুনামগঞ্জবাসীকে আশ্বস্থ করতে চাই, আমরা তদন্ত করে যখন বের করেছি মূল হত্যাকান্ড কে করেছে, ফলে সবাইকে আমরা দ্রুত গ্রেফতার করব। ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরকেও দ্রুত আইনের আওয়াতা আনা হবে।
তিনি বলেন, আজাদ হত্যার বিষয়টি প্রমাণের কাছাকাছি চলে গেছে পুলিশ। আরো কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে যে-ই জড়িত থাকুক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা অবশ্যই সবাইকে আইনের আওতায় আনব।
হত্যাকান্ডের বিষয়ে একজন সাংবাদিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান পুলিশ সুপার। মৃত্যুর আগে ওই সাংবাদিকের কাছে সন্দেহভাজনদের নাম বলেছিলেন হাওর আন্দোলন নেতা আজাদ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু তারেক, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ, পরিদর্শক তদন্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সঞ্জুর মুর্শেদ, গোয়েন্দা শাখার ওসি কাজী মোক্তাদির হোসেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের পিটিআই এলাকায় গুপ্ত ঘাতকের অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত হন হাওর আন্দোলন নেতা আজাদ মিয়া। মাথায় গুরুতর জখম নিয়ে তিন দিন জীবন-মৃত্যুর সদ্ধিক্ষণে থাকার পর ১৭ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। হত্যার ঘটনায় স্থানীয় মোল্লাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হকসহ ১২ জনকে আসামি করে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের বড়ভাই। মামলার পর পুলিশ উকিল আলী নামের এক আসামি গ্রেফতার করে।