কুলাউড়ায় ভোটযুদ্ধে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় তিন হেভিওয়েট

শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠছে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। তাদের সাথে করছেন কুশল বিনিময়। সমগ্র উপজেলায় চলছে মাইকিং, জোরেসোরে হচ্ছে মিছিল, সভা ও উঠোন বৈঠক। প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানারে সয়লাব হয়ে গেছে বড় বড় বাজার ও রাস্তাঘাট।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কারা জয়লাভ করবে এ নিয়ে চলছে নানামুখী হিসাব-নিকাশ। চায়ের দোকান ও হোটেলগুলোতে এখন আলোচনার প্রধান বিষয় নির্বাচন। ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কুলাউড়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী। এদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, বর্তমান চেয়ারম্যান ও কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব বিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তিন বারের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এ কে এম সফি আহমদ সলমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক ও পৃথিমপাশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নবাব আলী নকী খাঁন দোয়াত কলম প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

এদিকে, কুলাউড়ার সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বারের সন্তান কামরুল ইসলাম পারিবারিক অবস্থানের ওপর ভর করে জনগণের পাশে যাচ্ছেন ভোট চাইতে। তার প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের পূর্ণ সমর্থন থাকলেও মাঠে খুব কম দেখা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম সফি আহমদ সলমানের পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে নামলেও দলের সবাইকে না পাওয়ায় প্রচারণায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। ফলে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী সফি আহমদ সলমান দলীয় প্রার্থীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

সারাদেশে নৌকা প্রতীকের জয় জয়কার হলেও দীর্ঘদিন থেকে কুলাউড়ায় চলে আসছে তার উল্টোটা। ১৯৯৬ সালের পর এখানে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থীই বিজয়ের মুখ দেখেননি। পৌর নির্বাচন কিংবা গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও এখানে নৌকা প্রতীকের ভরাডুবি হয়েছে।

কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগের দুইটি গ্রুপ আলাদাভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দলের জেলা নেতৃবৃন্দরা তাদের দুই গ্রুপকে আলাদাভাবে সমর্থন দিলেও বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কুলাউড়া আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের বিবাদমান পক্ষ দুটি নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে এককাতারে চলে আসেন। কুলাউড়ার জনপ্রিয় নেতা এ কে এম সফি আহমদ সলমান এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের আবেদন করলেও তিনি মনোনয়ন পাননি। পরে ঐক্যবদ্ধ কুলাউড়াবাসীর ব্যানারে তিনি কুলাউড়া পৌরসভা ও ১৩ ইউনিয়নে গণসংযোগ ও উঠোন বৈঠক করে স্বতন্ত্র নির্বাচনের জন্য জনগণের সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে তার পক্ষে বেশ জোরেশোরে আনারস প্রতীকের প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী-সমর্থকরা। তিনি নিজেও দিনরাত প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে আরেক স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নবাব আলী নকী খান। আনারস ও নৌকা প্রতীকের প্রচারণা ঢালাওভাবে করলেও নকী খানের ‘দোয়াত-কলম’র প্রচারণা চলছে ধীর গতিতে। তৃণমূল পর্যায়ে তিনি সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খাঁনের ভাই হিসেবে বেশি পরিচিত। নিজস্ব অবস্থান দিয়ে এখনো তিনি জনগণের দুয়ারে পোঁছাতে পারেননি।

কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোট ১৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কুলাউড়া উপজেলা আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক খান সাহেদ বই প্রতীক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও কুলাউড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরবিন্দু ঘোষ বিন্দু তালা প্রতীক, কুলাউড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলার মো. মতিউর রহমান মতই উড়োজাহাজ প্রতীক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মান্না মাইক প্রতীক, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা শ্রমীক লীগের সাধারণ সম্পাদক আহবাব হোসেন রাসেল টিউবওয়েল প্রতীক, লংলা চা-বাগানের রাজকুমার কালওয়ার চশমা প্রতীক, শরীফপুর ইউনিয়নের লালারচকের আব্দুল আহাদ টিয়া পাখী ও শাবিপ্রবি এর ছাত্র হুমায়ুন কবির শাহান পাল্কী প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কুলাউড়া পৌর জাসদ সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান নেহার বেগম ফুটবল প্রতীক, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফাতেহা ফেরদৌস চৌধুরী পপি হাঁস প্রতীক ও জয়পাশার মোছা. শাহানা আক্তার কলস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আনারস প্রতীকের প্রার্থী এ কে এম সফি আহমদ সলমান  বলেন, পারিবারিকভাবে আমরা দীর্ঘদিন থেকে মানুষের সেবা করে আসছি। আমার বড় ভাই কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আমিও সততা ও নিষ্ঠার সাথে টানা ১৯ বছর ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের মানুষের সুখে-দুঃখে আমি পাশে ছিলাম। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।
নির্বাচনে আনারস প্রতীকের এক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচিত হলে আমি প্রথমে কুলাউড়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ, এবারের নির্বাচনে মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে।

নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম  বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। উপজেলা পরিষদে পাঁচ বছর ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম ও বর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি। বিগত দুটি নির্বাচন থেকে এবারকার নির্বাচনে সাধারণ জনগণের অনেক সাড়া পাচ্ছি। আমার পিতা সাবেক এমপি মরহুম আব্দুল জব্বার দীর্ঘদিন মানুষের সেবা করে গেছেন। বর্তমান সরকারের বিশাল উন্নয়ন ও আমার দশ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা এবারের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে সুফল হিসেবে কাজ করবে।

দোয়াত-কলমের প্রার্থী নবাব আলী নকী খান  বলেন, আমি তিনবারের পৃথিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম। দীর্ঘদিন থেকে মানুষের সেবা করে আসছি। এবার আমি প্রার্থী হওয়ায় পুরো কুলাউড়ায় এক গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এই দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভোট আমি পাবো বলে বিশ্বাস করি।

উল্লেখ্য, ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ গঠিত। উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ১৭১ জন। ৯৭টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য