বহুল আলোচিত স্কুল ছাত্রী মুন্নী হত্যাকান্ডে ঘাতকের ফাঁসির রায়!
তাহিরপুর ও দিরাই প্রতিনিধি
বহুল আলোচিত সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের স্কুল ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষার্থী হুমায়রা আক্তার মুন্নী (১৯) হত্যাকান্ডের ঘটনায় ঘাতক ইয়াহিয়া সরদারকে মৃত্যুদন্ড (ফাঁসি)’র রায় দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালতের বিচারক।,
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ইয়াহিয়া সরদার জেলার দিরাই উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের জামাল সরদারের ছেলে।
নিহত মুন্নী উপজেলার নগদীপুরের ইতালী প্রবাসী হিফজুর রহমানের মেয়ে ও দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
বুধবার বেলা ১১টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার ওই রায় প্রদান করেন।,
আদালত রায় ঘোষণাকালে আসামী ইয়াহিয়া সরদারকে আদালতে হাজির করা হয়।,
মামলার সুত্রে জানা যায়, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় আগাম ঘোষণা দিয়ে ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিরাই পৌর শহরের আনোয়ারপুরের বাসায় ডুকে পড়ার টেবিলে থাকা ইতালী প্রবাসীর কন্যা মেধাবী স্কুল ছাত্রী দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী হুমায়রা আক্তার মুন্নীকে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাতে খুন করে ঘাতক ইয়াহিয়া সরদার।
এ ঘটনার দু’দিন পর ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর নিহতের মা বাদী হয়ে দিরাই থানায় ঘাতক ইয়াহিয়া সরদার ও তার অপর এক সহযোগীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।,
ওই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সারা দেশে আলোচিত ও বিচারের দাবিতে প্রতিবাদী জনতা সোচ্চার হয়ে সমাবেশ ও মানববন্ধন শুরু করলে পুলিশ প্রথমে ইয়াহিয়ার সহযোগী দিরাই পৌর শহরের আনোয়ারপুর নয়াহাটির বাসিন্দা আবুল কালাম চৌধুরীর ছেলে তানভীর আহমদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে।
এরপর হত্যাকান্ডের ৫দিন পরে সিলেটের জালালাবাদ থানার মাসুকপুর গ্রামসংলগ্ন দশশাল থেকে প্রধান আসামী ও ঘাতক ইয়াহিয়া সরদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ওই সময়ের সারা দেশে আলোচিত হত্যাকান্ড হিসাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, তৎকালীন আইজিপি সহ সরকারের দায়িত্বশীলদের তদারকীতে মাত্র ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর ঘাতক ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলার অভিযোগ পত্র আদালতে দাখিল করে থানা পুলিশ।,
প্রসঙ্গত: প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর আগাম ঘোষণা দিয়ে দু’দিন পর ১৬ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে দিরাই পৌর সদরের মাদানী মহল্লার বাসায় ঢুকে পড়ার টেবিলে থাকা স্কুল ছাত্রী হুমায়রা আক্তার মুন্নীকে উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় বখাটে ইয়াহিয়া সরদার।
আহত অবস্থায় মুন্নীকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই সে মারা যায়। দিরাই নগদীপুরের ইতালী থাকা জতবাসী হিফজুর রহমানের কিশোরী কন্যা হুমায়রা আক্তার মুন্নী ছিল দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষার্থী। মা রাহেলা বেগম , মেয়ে মুন্নী ও ছোট ভাই মাহিদ আহমদ থাকতেন দিরাই পৌর শহরের আনোয়ারপুরের মাদানী মহল্লার নানার বাসায়। আর বখাটে ইয়াহিয়ার বাড়ি করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর গ্রামে। প্রাথমিকে বৃত্তি পাওয়া মুন্নী জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল তার। বাবা-মার স্বপ্ন ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে। সে জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছিল বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী মুন্নী।
ইতালি প্রবাসী বাবা হিফজুর রহমান মেয়ের পড়ার সুবিধার জন্য দুর্গম হাওরের গ্রাম থেকে পরিবারকে দিরাই সদরে নানার বাসায় থাকার সুবিধা করে দিয়েছেন মেয়ে লেখাপড়া করে ডাক্তার হবে এই আশায়।’ কিন্তু বাবা- মার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে বখাটে ইয়াহিয়ার ছুরিকাঘাতেই।’
হত্যাকান্ডের পরপরই অভিযোগ উঠেছিল, এমন লোমহর্ষক বর্বর হত্যকান্ডের বিষয়টিকে তেমন কোন গুরুত্বই দেননি দিরাই থানার ওসি। যে কারনে থানার অদুরে পৌর শহরের একটি আবাসিক এলাকায় নিমর্মমভাবে মুন্নীকে খুন করে পালিয়ে যেথে সক্ষম হয় বখাটে ইয়াহিয়া।’ এমন বর্বর হত্যাকান্ড নিয়ে পরদিন দেশের বিভিন্ন দৈনিক, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো সংবাদ প্রকাশিত হলে নরেচরে বসে জেলা পুলিশ প্রশাসন।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী , তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, আইজিপির নিদের্শ পেয়েই হত্যাকান্ডের পরদিন দিরাইয়ের ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান পুলিশ সুপার।
বুধবার আলোচিত এই মামলার রায়ে সন্তোস প্রকাশ করে নিহত মুন্নীর মা রাহেলা বেগম ও তার স্বজনরা দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানান।,
আসামী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুমায়ন মঞ্জুর চৌধুরী।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালননাকারী (পিপি) ড. খায়রুল কবীর রোমেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. ওয়াহিদুজাম্মান শিকদার ঘাতকের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড’ রায় প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।,