যারা যত ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেন
হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ১৭ উপজেলা নির্বাচন
মবরুর আহমদ সাজু
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার ১৭টি উপজেলায় গতকাল রোববার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দুই জেলার ৮টিতে আওয়ামীলীগ, ৫টিতে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও তিনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
দেখাযায়,
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ১৭ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ১৫টিতে টিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত আর দলটির বিদ্রোহীরাই বিজয়ী হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদ নিজেদের নেতাদের মধ্যেই ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
সুনামগঞ্জের ৯ উপজেলার ৫টিতে আ.লীগ, ৩টিতে বিদ্রোহী ও একটিতে বিএনপি নেতা বিজয়ী হয়েছেন। অপরদিকে হবিগঞ্জের ৮ উপজেলার ৪টিতে আ্ওয়ামী লীগ, ৩টিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ও একটিতে বিএনপি নেতা বিজয়ী হয়েছেন।
ছাতকে: পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান।
বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৬৬ হাজার একশত ৩০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাপ-পিরিচ প্রতীকে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল পেয়েছেন ২৭ হাজার দুইশত ৮৩ ভোট।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ: দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ। তিনি আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ১ শত ৪২ ভোট।
তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২২ হাজার ২ শত ৭ ভোট।
দোয়ারাবাজার: দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. আব্দুর রহিম, তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩১ হাজার ৪৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান তানভীর আশরাফি বাবু কাপ পিরিস প্রতীকে পেয়েছেন ১৯ হাজার ২ শত ৯০ ভোট।
সুনামগঞ্জ সদর: সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি খায়রুল হুদা চপল নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছেন।
প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী খায়রুল হুদা চপল পেয়েছেন ৪০ হাজার ৫ শত আট ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মনিষ কান্তি দে মিন্টু পেয়েছেন ২৫ হাজার ৮ শত সতেরো ভোট।
দিরাই: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহীর কাছে ধারাশায়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। মাত্র ৬২ ভোটের ব্যবধানে হারতে হয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রদীপ রায়কে।
এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকে আও্য়ামী লীগের বিদ্রোহী মঞ্জুর আলম চৌধুরী ২০,৯২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের প্রদীপ রায় পেয়েছেন ২০,৮৬০ ভোট।
ধর্মপাশা: এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেন রোকন। তিনি ৩৭ হাজার চারশত ৭৫ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম আহমদ মুরাদ। তিনি পেয়েছেন ২৯ হাজার তিনশত ৭২ ভোট।
শাল্লা: এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ২৪ হাজার নয়শত ৮১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাডভোকেট অবনী মোহন দাস পেয়েছেন ১৯ হাজার তিনশত ৩ ভোট।
তাহিরপুর: এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী করুণাসিন্ধু বাবুল জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার পাঁচশত ৫ ভোট। তাঁর নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিসুল হক। তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ২৪ হাজার তিনশত ৩০ ভোট।
বিশ্বম্ভরপুর: এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে ২৩ হাজার দুইশত ৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সফর আলী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশীদ। তিনি পেয়েছেন ১৭ হাজার ছয়শত ১ ভোট।
সুনামগঞ্জের ৯ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯ উপজেলায় আ.লীগ, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্রের ব্যানারে বিএনপি প্রার্থীসহ ২৮ জন চেয়ারম্যান প্রাথী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বাহুবল: হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খলিলুর রহমান ঘোড়া প্রতীকে ২৩,৮৮৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল হাই পেয়েছেন ১৭,৬০৬ ভোট।
বানিয়াচং: বানিয়াচং উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১০নং সুবিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা আ’লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আবুল কাশেম চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছেন।
আবুল কাশেম চৌধুরী ৬০ হাজার ৩১ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদন্দ্বী ইকবাল হোসেন খান পেয়েছেন ৪৩ হাজার ১৯২ ভোট।
চুনারুঘাট ও আজমিরিগঞ্জ: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন নৌকার প্রাথীরা। চুনারুঘাটে আব্দুল কাদির লস্কর ও আজমিরীগঞ্জে মর্তুজা হাসান জয়ী হয়েছেন।
চুনারুঘাট উপজেলার আব্দুল কাদির লস্কর ৩৭ হাজার ৪৯ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদন্দ্বী তাহির মিয়া আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ২৮৪ ভোট।
আজমিরীগঞ্জে মর্তুজা হাসান ২২ হাজার ২৭২ ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদন্দ্বী আলাউদ্দিন আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ২৮৪ ভোট।
মাধবপুর ও নবীগঞ্জ: হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া প্রতীকে বিএনপির সৈয়দ শাহজাহান ও নবীগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম জয়লাভ করেছেন।
সৈয়দ শাহজাহান ৫২ হাজার ৪৬৮ ভোট পেয়ে ঘোড়া প্রতীকে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদন্দ্বী নৌকা বিদ্রোহী এহতেশাম লিপু পেয়েছেন ২৪ হাজার ৩০৫ ভোট।
নবীগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম ঘোড়া প্রতীকে ৪৭ হাজার ২৩০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদন্দ্বী আলমগীর চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২৬ হাজার ১১৩ ভোট।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মোতাচ্ছিরুল ইসলাম। টানা ৪ বার নির্বাচিত হওয়ার পর হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পরাজয় বরণ করেন সৈয়দ আহমদুল হক।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত হোসেন রুবেল জানান, এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয় হয়েছেন সৈয়দ আহমদুল হক এবং তৃতীয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামীম।
লাখাই: হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মশিউল আলম নৌকা প্রতীকে ৩০,৬২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মাহফুজুল আনাম মাহফুজ মোটরসাইকেল প্রতীকে ২৪ হাজার ৩২৮ ভোট পেয়েছেন।