উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : বিয়ানীবাজারে শেষ মুর্হুতে জমে উঠেছে প্রচারনা

মিসবাহ উদ্দিন
আগামী ১৮মার্চ বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের পক্ষে বেশ জোরেশোরে প্রচারণা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে শুরু হওয়া প্রচারাভিযান রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। তবে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা কৌশলে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।
গত কয়েকবছরের মধ্যে এবারই প্রথম রাজপথের বিরোধী দল ঐক্যফ্রন্ট কিংবা বিএনপির কোন প্রার্থী স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অংশ বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা। এ কারণে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্ধিতা পূর্ণ করতে ক্ষমতাসীন দল দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে বেশ ছাড় দিয়েছে।

তেমন কোন বিধি-নিষেধ না থাকায় আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামীলীগের মধ্যেই অনুষ্টিত হচ্ছে এবারের নির্বাচন। বিয়ানীবাজার উপজেলায় অবশ্য আওয়ামীলীগের চারজন প্রার্থী আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। একই দলের এত প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও মূলত: এখানে নৌকার প্রার্থী আতাউর রহমান খান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আনারস প্রতিকের প্রার্থী মোহাম্মদ জাকির হোসেনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা হবে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আতাউর রহমান খানের সাথে উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জনসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। আবার আনারস প্রতিকের প্রার্থীর পক্ষে তৃণমুল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও এই দুই প্রার্থীকে কেন্দ্র করে বিভক্ত।

৪র্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাই সংক্রান্ত আভ্যন্তরীণ ভোটে মোহম্মদ জাকির হোসেন মাত্র ১১ ভোটে পরাজিত হন। সে সময় তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হারিয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এবারও জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের উপস্থিতিতে প্রার্থী বাছাই সংক্রান্ত বৈঠকে তিনি তৃণমূলের ভোটের লিখিত দাবী উত্তাপন করেন। কিন্তু তাঁর সে দাবীকে পাশ কাটিয়ে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ১৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। এ নিয়ে অনেক ক্ষোভ ছিল তাঁর অনুসারীদের। আসন্ন নির্বাচনে সেই ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটতে পারে। সময় গড়ানোর সাথে বিষয়টি আরো খোলাশা হতে পারে বলে মনে করছেন জাকির হোসেনের সমর্থকরা।

বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও জাকির হোসেন নিজের অতিত দিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে তাঁকে বঞ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরছেন। তিনি জানান, ছাত্রলীগকে বিয়ানীবাজারে পুনরীজ্জীবিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। এরপর আওয়ামীলীগে এসে দফায়-দফায় বঞ্চিত করার পরও দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অবজ্ঞা করেননি। এবার দল নির্বাচনের বিষয়ে নমনীয় থাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোট ভিক্ষা চাইছেন। তিনি আনারস প্রতিক নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলায় জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে জানাবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

এদিকে আতাউর রহমান খানও দল গোছানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত সোমবার চারখাই বাজারে নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনকালে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীকে নিয়ে জনসংযোগ করেছেন। দলের অভিমানী নেতাদের কাছে টানার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে জনসংযোগ করার চেষ্টা করছেন। আতাউর রহমান খান বলেন, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে আছেন। সময়মত সবাই নৌকার জয় নিশ্চিতে মাঠে নামবেন।

অপরদিকে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী আরো দুই প্রার্থীর পিছনেও দলীয় নেতাকর্মীরা ছুটছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য শামীম আহমদ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লবও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে জনসংযোগ করছেন।

শেওলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ছালিক আহমদ খান জানান, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা আনারস প্রতিকের প্রার্থীর সাথে কাজ করছেন। একইমত পৌরসভার ১নং ও ৩নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে খছরুজ্জামান এবং ইসলাম উদ্দিন আহমদের। তাদের অভিন্ন বক্তব্য, এবারের উপজেলা নির্বাচন ব্যতিক্রম। দলীয় প্রতিক দেয়া হলেও যিনি জিতবেন, তিনিই আওয়ামীলীগ। তাই প্রকৃত আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিজয়ী করতে কাজ করছেন।
এ বিভাগের অন্যান্য