শব্দের শক্তিতে বাঙালীর স্বাধীনতা আবু বকর পারভেজ

 

৭ মার্চ বাঙালী জাতির জীবনে অন্যতম দিন। বাঙালী জাতির জনক রাখাল রাজা শেখ মুজিবুর রহমান চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন সেই দিনটার জন্য। শোষণের বিরুদ্ধে, শাসকের ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারকে শুধরে নেয়ার হুংকার দেন পিতা মুজিব। ৫২ ভাষা আন্দোলনে বাঙালী বুক চেতিয়ে দেয় শাসকে বন্দুকের সামনে যার ফলশ্রুতিতে তৈরী হয় ভাষা থেকে ভূখণ্ড। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালী সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও শাসকগোষ্ঠী শোষণের স্টিমরোলার চালায় বাঙালীর উপর। পূর্ব পাকিস্তানে যা উৎপাদিত হতো তার বেশিরভাগই চলে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে ।পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের রক্তে আর ঘামে তৈরী হতো পশ্চিমের রাস্তা,মেডিকেল, কেনা হতো পুর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করার অশ্রু। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ অনাহারে থাকলেও পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেত পূর্বের মানুষের ন্যায্য খাদ্যদ্রব্য। পূর্ব পাকিস্তানের সাথে ভাষা নিয়ে বৈষম্য করা হয় ঠিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত করে পশ্চিমে তৈরী হয় উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পশ্চিম পাকিস্তানিরা সব সময় চাইতো পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের শোষণ করতে, তার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ৫২ তে ভাষা নিয়ে বৈষম্য করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীর ভাষা নাকি হবে উর্দু। আর উর্দুই হবে বাঙালীর রাষ্ট্রভাষা এই রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার পিছনের শোষণ চিন্তা জড়িত। অফিস আদালতের ভাষা হবে উর্দু আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাষাও হবে উর্দু। সুচতুরভাবে আমাদেরকে দূর ঠেলে দেয়া হচ্ছিলো অফিসিয়াল চাকুরীগুলো থেকে। স্বভাবিক পশ্চিমের মাতৃভাষা উর্দু আর পূর্বের বাংলা চাকুরীর ক্ষেত্রে যদি উর্দুতে পরিপক্ষ না হওয়া যায় তাহলে চাকুরী থেকে বঞ্চিত হওয়াই স্বাভাবিক। আর পশ্চিমের মাতৃভাষা উর্দু হওয়াতে তারা অনর্গল উর্দুতে পারদর্শী সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে তারা অধিক সুবিধা পাবে । কোন জাতির উপর শোষকের নিয়ম চাপিয়ে দেয়া যায়না পশ্চিম পাকিস্তান জানতো না। আর পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য তখন একজন নেতা বাঙালীর জাতির জন্য অতিব জরুরি ছিলো । আর সেই প্রকষ্ট অন্ধকার থেকে বের করার জন্য আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে এলেন টুঙ্গিপারার রাখাল রাজা শেখ মুজিব। তিনি আবৃত্তি করে শুনালেন বাঙালীর মুক্তির কবিতা জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ সেখানে বাঙালীকে বুঝতে শিখালেন মৃত্যু তেমন কিছু নয়। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। প্রচণ্ড দাবদাহ চোখেমুখে এক দুশ্চিন্তার ছাপ কখন কবি আসবেন আর শুনাবেন উনার কবিতা যে কবিতায় বাঙালীর মুক্তির কথা,যে কবিতায় শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা, যে কবিতায় বৈষম্যের দুয়ারে কষাগাত করে ভেঙ্গে ফেলার কথা, যে কবিতায় পরাধীনতার বন্দি শিকল থেকে মুক্তির কথা। সেদিন কানায় কানায় ভরপুর ছিলো রেসকোর্স ময়দান আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লক্ষ লক্ষ জনতা অধির আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে কি বলবেন সবার প্রিয় মুজিব ভাই। গাছের ডগায় দাঁড়িয়ে আছে যুবক, উত্তাল সমুদ্রের মাঝে চোখমুখে দুঃশ্চিন্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বায়োজ্যাষ্ঠ ব্যক্তিটি। মাথার উপর সূর্য আর আকশে পাকিস্তানিদের কড়া নজরদারি। সবার একটাই চিন্তা কি বলবেন শেখ মুজিব ক্রাক প্লাটুনের আজাদ,রুমিরাও রেসকোর্স মাঠে শুনতে এসেছে কি বলবেন মুজিব ভাই আজকেই কি স্বাধীনতার ঘোষণা যদি দিয়ে দেন!! বন্ধুরা মিলে গল্প করতে করতে ইব্রাহিম সাবের হঠাৎ বলে উঠলো, আমার কিন্তু শেখ সাহেব কি বলেন সেটা ইন্টারেস্টিং না। আমার ইন্টারেস্টিং আরেকজন নেতার দিকে আশরাফুল বলে কে? ইব্রাহিম সাবের বলেন আমার বন্ধু নাজিম কামরান চৌধুরী, ডাকসুর ডাকসাইটের নেতা নাজিম কামরান চৌধুরী। হারিস, জুয়েল, আজাদ হেসে উঠে আশরাফুল প্রশ্ন করে ক্যান? ইব্রাহিম সাবের বলে বন্ধু নাজিম কামরান চৌধুরী ৬৯ থেকে গণ আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসতেছে। তিনি তার সিলেটি বচনে কি ভাষণ দেন এটা আমার আকর্ষণ। হারিস বলে উঠলো আজকে নাজিম ভাই মনে হয় ভাষণ দিবেন না। আজকে বঙ্গবন্ধু শুধু একাই ভাষণ দিবেন আর কারো চান্স নাই। আকাশ নীল বর্ণ ধারণ করেছে, রোদে অনেক মিষ্টি হয়ে গায়ে আঘাত করতেছে আর বসস্তনের সুন্দর একটা দিনে হাঁটতে হাঁটতে সবাই যাচ্ছে রেসকোর্স ময়দানের দিকে। জাহানারা ইমাম রোডিও নিয়ে ছাদে গেলেন রোডিওতে শেখ মুজিবের ভাষণ সম্প্রচার করা হবে, কিন্তু আওয়াজ হলোনা রেডিওতে শেখ মুজিবের ভাষণ সম্প্রচার হলোনা। অতঃপর উত্তাল জনসমুদ্র শান্ত হলো কবি এসে মঞ্চে দাঁড়ালেন জমাট বাঁধা মেঘের মতো বজ্র এবং মায়া জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলেন আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আপনারা সবাই জানেন সবাই বুঝেন ২৩ বছরে শোষণা বর্ণনা করে বললেন আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার একটা মানুষকে হত্যা করা হয়, তোমাদের প্রতি আমার অনুরোধ রইলো ঘরে ঘরে দুর্ঘ তৈরী করো করো, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিবো বাংলার মানুষকে স্বাধীন করে ছাড়বো ইন শা আল্লাহ, এবারে সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বধীনতার সংগ্রাম। সেই ভাষণ থেকে মুক্তিকামী বাঙালীরা মুক্তি শব্দটি তাদের করে নিলো। আর পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা বললো যে, সুচতুর শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিলো আর স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হয়ে গেল। চোখেমুখে স্বাধীনতা এবং মুক্তির প্রত্যয় নিয়ে বাঙালীরা ১৬ ডিসেম্বর শাসকের শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে লাল সবুজের পতাকা বুঁদবুঁদ করে আকাশে উড়ালো। আর অপ্রকাশ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সারা বিশ্বের কাজে উগ্রপন্থির তকমা দেয়া থেকে নিজেকে হায়নাদের দৃষ্টি থেকে মুক্ত করলেন।

আবু বকর (পারভেজ)
শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিভাগের অন্যান্য