রেজিস্ট্রেশনহীন অটোরিক্সা ও লেগুনা চলে কীভাবে?
সিলেটের সময়:
সুনামগঞ্জ জেলায় ২৮১ লেগুনা ও ২ হাজার তিন শ’ সিএনজি চালিত অটোরিক্সার রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। কিন্তু জেলার বিভিন্ন অভন্তরীণ সড়কে কমপক্ষে ১ হাজার লেগুনা এবং ৫ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করছে। রেজিস্ট্রেশন বিহীন এসব লেগুনা ও সিএনজি অটোরিক্সা সড়কে চলে কীভাবে? কার অনুমতি নিয়ে চলে এই অবৈধ যানবাহনগুলো? এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছেই। কাগজপত্র বিহীন বা রেজিস্ট্রেশন বিহীন যানবাহন নামের এই দানবগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অনায়াসে পার পেয়ে যায়। এরা আটক হয় না। আইনের আওতায়ও আসে না।
সুনামগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় ২৮১ টি লেগুনার রেজিস্ট্রেশন আছে। অথচ সুনামগঞ্জ সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, অটো টেম্পু, ট্যাক্সিক্যাব মালিক সমিতির আওতাভুক্ত লেগুনার সংখ্যা ৩২০ টি। এই যানবাহনগুলোর এর চাইতেও বড় সমিতি রয়েছে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে। ওই সমিতিতে লেগুনার সংখ্যা সুনামগঞ্জের সমিতির চেয়ে অনেক বেশি হবে। একইভাবে সুনামগঞ্জ জেলায় সিএনজি চালিত অটো রিক্সার রেজিস্ট্রেশন রয়েছে ২৩০০ টি। অথচ কেবল সুনামগঞ্জ সিএনজি চালিত অটো রিক্সা, অটো টেম্পু, ট্যাক্সিক্যাব মালিক সমিতির আওতাভুক্তই রয়েছে ১২০০ টি। গোবিন্দগঞ্জ সমিতিতে এই সংখ্যা অনেক বেশি।
ঠিক একইভাবে সুনামগঞ্জে সিএনজি চালিত অটো রিক্সা, লেগুনা ও কার মিলিয়ে চালকের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ১৮১৮ টি। বাকী যানবাহনগুলো চালায় কারা, এঁদের লাইসেন্স কয় নম্বর? এই প্রশ্নের উত্তরও নেই।
রেজিস্ট্রেশন বিহীন এসব যানবাহন এবং লাইসেন্স বিহীন চালকরা অহরহ দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। কোন জবাবদিহিতা নেই তাদের।
শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির সহ-সাধারণ সম্পাদক, গণমাধ্যমকর্মী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল হাছান শাহীন বলেন, ‘সড়ক পথে লেগুনা, সিএনজিসহ কিছু কিছু যানবাহনের অরাজকতা চলছে। কাগজপত্র ছাড়া এগুলো চলে কীভাবে?’
তিনি বলেন, ‘শনিবার শহরের ওয়েজখালীতে লেগুনার ধাক্কায় মোটর সাইকেল আরোহী শ্রমিক নেতা শাহজাহান গাজী গুরুতর আহত হয়েছেন। তার বাম পায়ের কয়েক স্থানের হাড় ভেঙে গেছে। দুর্ঘটনার পর জানা গেছে, ওই লেগুনাটি নম্বর বিহীন ছিল। এমন অরাজক পরিস্থিতি মানা যায় কীভাবে?’
সুনামগঞ্জ সিএনজি চালিত অটো রিক্সা, অটো টেম্পু ও ট্যাক্সি ক্যাব মালিক সমিতির সভাপতি তাজিদুর রহমান বলেন,‘মৌলভীবাজারে ৩০ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা চলে, অথচ আমাদের জেলায় ২৩০০ সিএনজি’র রেজিস্ট্রেশন দেবার পরেই রেজিস্ট্রেশন না দেবার জন্য বাস মালিক সমিতিগুলো জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করে। আমি জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছি, আরও সিএনজি অটো রিক্সার রেজিস্ট্রেশন দেবার জন্য।’
সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মিয়া বলেন,‘সুনামগঞ্জে কতগুলো সিএনজি চলতে পারবে এটিও আইন অনুযায়ী নির্ধারণ হয়। সুনামগঞ্জের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে অন্য জেলায় সিএনজি চালায় এমন সিএনজি’র সংখ্যা অনেক আছে। আবার রেজিস্ট্রেশন ছাড়াও অনেক সিএনজি, লেগুনা সড়কে চলাচল করছে। এগুলো কীভাবে চলে?’
সুনামগঞ্জের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে বেশিরভাগ চালকেরই নকল লাইসেন্স।
সুনামগঞ্জ অটো টেম্পু, অটো রিক্সা ড্রাইভার্স ইউনিয়নে চালক রয়েছেন ৩৫০০ জন। গোবিন্দগঞ্জ অটো টেম্পু, অটো রিক্সা, বেবী ট্যাক্সি শ্রমিক ইউনিয়নে চালকের সংখ্যা এর চেয়ে বহুগুণ বেশি। অথচ. সারা জেলায় এই জাতীয় বৈধ পরিবহনের চালকের সংখ্যা ১৮৮৮ জন।
গোবিন্দগঞ্জ অটো টেম্পু, অটো রিক্সা, বেবী ট্যাক্সি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আপ্তাব উদ্দিন বলেন,‘চালকদের এক নম্বর লাইসেন্সের চেয়ে দুই নম্বর লাইসেন্স বেশি এটি সত্য। বিআরটিএ’র যন্ত্রণায় এই অবস্থা হয়েছে। বেশির ভাগ চালক অশিক্ষিত, এরা পড়াশুনা জানে না। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না। কিন্তু ব্যবহারিক পরীক্ষায় চালকরা খুবই ভাল করে। এই বিষয়টি বিবেচনায় না নিলে, দুই নম্বর বা নকল লাইসেন্স হতেই থাকবে। এছাড়াও ঘুষ বা উৎকোচের যন্ত্রণাতো আছেই।’
সুনামগঞ্জ বিআরটি’এর মোটরযান পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) সফিকুল ইসলাম রাসেল বলেন,‘সুনামগঞ্জে ২৮১ লেগুনা এবং ২৩০০ সিএনজি’র রেজিস্ট্রেশন আছে। কারসহ এই জাতীয় পরিবহনের চালকের লাইসেন্স আছে ১৮৮৮ জনের।’
রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি, এগুলো আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আমরা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’ চালকদের হয়রানি বা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।