ঝেটিয়ে বিদায় করার চেয়ে অবসর ভালো: মুহিত
মন্ত্রীর পদ থেকে নিজেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। বলেছেন, ‘অবসর না নিয়ে ঝেঁটিয়ে বিদায় হয়ে যাওয়া, সেটার থেকে তো রক্ষা পেয়েছি।’
মন্ত্রী হিসেবে শেষ কার্যদিবস সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মুহিত। আগের দিনই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তিনি আর মন্ত্রী থাকছেন না, দায়িত্ব পাচ্ছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।
শেষ কার্যদিবসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয় মুহিতকে।
১০ বছর অর্থ মন্ত্রণালয় সামলানোর পর নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ জানিয়েছেন, তিনি অবসর সময়ে বই পড়বেন ও লেখালেখি করবেন।
এবার ভোটের আগেই মুহিত জানিয়েছেন তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছেন। তবে ভোটের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, শেখ হাসিনা চাইলে আরো এক বছর দায়িত্ব পালন করতে আপত্তি নেই।
যদিও রবিবার বাছাই করা মন্ত্রীদের তালিকায় মুহিতের নাম ছিল না। বিদায়ী অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটি আমার খুব আনন্দের বিষয়, আমাকে বিদায়-টিদায় করতে হয়নি, আমি নিজে নিজেই বিদায়টা নিয়ে নিয়েছি। সেজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে জয়ের পর ৬ জানুয়ারি শপথ নেওয়া মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন মুহিত। সেই থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন তিনি। একটানা দিয়েছে ১০টি বাজেট।
মুহিত বলেন, ‘আমাকে বিদায় করা হয়নি। আমি নিজ ইচ্ছায় অবসরে যাচ্ছি। এটি একটি বিরল সম্মান ও সৌভাগ্যও বটে।’
৮৫ বছর বয়সে পা দিতে যাওয়া বিদায়ী অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ বয়সে আল্লাহ আমাকে এমন রেখেছেন যে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো একটি জটিল মন্ত্রণালয়ে একটি জটিল দেশে পরিচালনা করেছি। এখন তো আমার অবসর নেওয়ার দরকারই।’
নিজের কাজের ওপর দারুণ তৃপ্ত মুহিত। বলেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশ একটি পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এই ১০ বছর সুচারুভাবে সরকার পরিচালনা করেছি। এক সময় বাংলাদেশের পরিচয় ছিল ভিখারি দেশ হিসেবে। আজ বাংলাদেশ সে অবস্থানে নেই।’
‘আল্লাহর রহমত এবং সহকর্মীদের সহযোগিতা এই দুর্লভ কাজ করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ যে অবস্থানে যাবে এবং বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সূচিত হবে সেখান থেকে নামিয়ে আনার সাধ্য কারও হবে না।’
অবসরে কী করবেন- এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের মুহিত বলেন, ‘এখন থেকে অবসর সময়ে বই পড়ব ও লেখালেখি করব। আমার কালেকশানে ৫০ হাজার বই আছে। এগুলো সব পড়া হয়নি। চিন্তা করছি অবসরে গিয়ে এগুলো কিছু কিছু পড়তে শুরু করব।’
‘আরেকটি কাজ আমি করব। সেটা হচ্ছে এই পড়ার ওপরে আমি লেখালেখি করব। আর আমি ৩৪টি বই লিখেছি। এর মধ্যে ১২টি ইংরেজি, আরও বই লিখব।’
অনুষ্ঠানে ছিলেন নতুন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান যিনি গত পাঁচ বছর মুহিতের ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় এতদিন দায়িত্ব পালন করেছি। আগামীতেও দায়িত্ব পালন করার জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।’
অর্থ সচিব আব্দুর রওফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী প্রতিমন্ত্রী এবং নতুন মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পাওয়া পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সিজিএ মুসলিম চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এ সময় উপস্থিত ছিলেন।