নিরাপত্তার চাদরে মোড়া সিলেট, ভোটের অপেক্ষায় জনগণ
সিলেটের সময় ডট কম, প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ২:১১:৪৯ অপরাহ্ণ
মবরুর আহমদ সাজু:
নিরাপত্তার চাদরে মোড়া সিলেট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল রাত থেকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে সিলেট কে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব এবং পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। রাতে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে পল্লীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে একটি করে মোবাইল ফোর্স থাকবে। এছাড়া রয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্সও। এদিকে সিলেটে টানা রাত দিন প্রচারণার পর এখন কেবল অপেক্ষা। রাত পোহালেই ভোট। একাদশ সংসদ নির্বাচন, সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে মোট ৫ লাখ ৪২ হাজার ৯৩৬ জন ভোটার । নির্বাচন করবেন তাদের পছন্দের সংসদ সদস্য । প্রচারণা শেষ হওয়ার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে সিলেটে ১ আসন তথা ১৯ টিআসনে । টহলে নেমেছে,সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ। ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। আর টানা প্রচারণার পর প্রার্থীরা এখন চূড়ান্ত ভোটের হিসাব মেলাচ্ছেন। এদিকে ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়েও শঙ্কা রয়েছেন ভোটার ও প্রার্থীরা । সিলেট রিটার্নিং কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে- গতকালই তারা সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন। বিকালের মধ্যেই তারা সব কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেবেন নির্বাচনী সরঞ্জাম। প্রচারণার শেষ দিন সিলেট ছিল উৎসবমুখর। সেই সাত সকালেই জেগে উঠে সিলেট। প্রচারণার শেষ দিনে প্রার্থীরা সকাল থেকে নেমে পড়েন প্রচারণায়। দিনরাত উপেক্ষা করে পাড়া-মহল্লা থেকে পল্লী পর্যন্ত প্রচার মিছিল মিটিং ছিল মনে রাখার মতো। সবমিলিয়ে উৎসবমূখর পরিবেশের অপেক্ষায় ভোটাররা। এদিকে সিলেট বিভাগের ১৯ আসন৬৪ ভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ অধিক ঝুঁকিতে ৮ ভাগ জানাযায় সিলেট বিভাগের ২ হাজার ৮০৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ৬৪ ভাগ কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ৮ ভাগই ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’। আর অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সব কেন্দ্র মৌলভীবাজার জেলায়। এর সংখ্যা ২১২টি। তবে কেন্দ্রগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ বলতে নারাজ নির্বাচন কমিশন। তাদের ভাষায় এসব কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা পরিকল্পনা এখনও তৈরি হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যথাসময়ে নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সিলেটের কার্যালয় সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে ৬৬ লাখ ২২ হাজার ৫৬৫ জন ভোটার রয়েছেন। তারা ২ হাজার ৮০৫টি ভোট কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৪৯৬ ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় এসব কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ২১টি কেন্দ্র সাধারণ, ১ হাজার ৫৭২টি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ (ঝুঁকিপূর্ণ) ও মৌলভীবাজার জেলার ২১২টি কেন্দ্রকে ‘অধিক গুরুত্বপূর্ণ’ (অধিক ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ হিসাবে মোট ভোট কেন্দ্রের ৫৬ দশমিক শূন্য ৪ ভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭ দশমিক ৫৬ ভাগ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র। বাকি ৩৬ দশমিক ৪০ ভাগ সাধারণ ভোট কেন্দ্র। সিলেট জেলার ৬ আসনে ২২ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৪ ভোটার রয়েছেন। তাদের জন্য ৯৯২টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৫টি কেন্দ্র সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৬০৭টি কেন্দ্র রয়েছে। মোট ভোটকক্ষ ৪ হাজার ৭৫৪টি। সুনামগঞ্জে ৫ আসনে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫৬৬ ভোটার রয়েছেন। তাদের জন্য ৬৬৮টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫১টি কেন্দ্র সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৪১৭টি কেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষ ৩ হাজার ২৯১টি। মৌলভীবাজারে ৪ আসনে ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭১ ভোটার রয়েছেন। ৫১২টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৪টি সাধারণ, ঝুঁকিপূর্ণ ১২৬টি ও ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ ২১২টি কেন্দ্র। মোট ভোটকক্ষ ২ হাজার ৬০১টি। হবিগঞ্জে ৪ আসনে ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৪ ভোটার রয়েছেন। ৬৩৩টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১১টি সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ৪২২টি। মোট ভোটকক্ষ ২ হাজার ৮৫০টি। নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র আরও জানায়, ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে, প্রার্থীর পক্ষে কোনো গোষ্ঠী অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাতে পারে, ভোট কেন্দ্রের পাশে প্রার্থী বা তার নিকটাত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে এমন সব কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ভৌগোলিক অবস্থান, এলাকার রাজনৈতিক অবস্থা ও ভোট কেন্দ্রের স্থাপনাকেও এ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।’ ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বেশি থাকবে। সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকার্তা মোহা. ইসরাইল হোসেন জানান, সাধারণ ভোট কেন্দ্রগুলোয় দু’জন পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জন, হাওরাঞ্চলের কেন্দ্রগুলোয় ৩ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন ও শহরাঞ্চলের কেন্দ্রগুলোয়ও ৩ পুলিশ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কত সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন, তা এখনও আমাদের জানানো হয়নি। তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে দায়িত্ব পালন করবেন পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সমন্বয়ে গঠিত রিজার্ভ ফোর্স, কেন্দ্রভিত্তিক মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিরাপত্তায় থাকবে।