সিলেটে নতুন ভোটাররা ভোট উৎসবের অপেক্ষায়
প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় ভোটারদের প্রত্যাশা বেশী
মবরুর আহমদ সাজু:
একাদশ নির্বাচন কে সামনে রেখে সিলেটে এখন নির্বাচনী উত্তাপ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অলি গলিতে র্নিবাচনী কথা আর কথা।চলছে পছন্দের পার্থী নিয়ে তুমুল বিশ্লেষণ। নির্বাচনী হাওয়ায় পছন্দেও প্রার্থী নিয়ে ও চলছে বিশ্লেষণ গেল নির্বাচনে অনেক জনপ্রতিনিধি রা, ভোটরদের প্রত্যাশার সাথে প্রতিশ্রুতির মিল নেই এমন অভিযোগ ওজানান ভোটাররা। তবে জনপ্রিতিনিধিরা এসব অভিযোগ মানতে নারাজ বলছেন উন্নয়ন হয়েছে যথেষ্ট । সংসদীয় আসনের ভোটাররা জানিয়েছেন এবার ভোট প্রয়োগে থাকবেন সচেতন। সঠিক উন্নয়নের স্বার্থে সঠিক প্রার্থীকে ৩০ তারিখ ভোট দেবেন তাঁরা। দেশের মানুষ দীর্ঘ ১০ বছর পর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন ভোটার হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম ভোট প্রদান করবে। এদিকে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (র.) এর সম্প্রীতির শহরে রাজনৈতিক কলহ নেই বললেই চলে। সেজন্য বরাবরের মতো এবার সংসদ নির্বাচনেও শান্তির ভোট প্রত্যাশা করছেন ভোটার এমনকি প্রার্থীরা ও । পাশাপাশি জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়া নিয়ে নবীন ভোটারদের রয়েছে দারুণ কৌতুহল। নতুন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে রয়েছে দারুণ কৌতুহল সঙ্গে রয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মতো সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোর উন্নয়ন হবে ও বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এমনটাই প্রত্যাশা তাঁদের। মৌলভীবাজার -১ সংসদীয় আসনের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ প্রত্যয় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মিফতাহ আহমদ রিটন বলেন জনপ্রতিনিধিদের নিকট প্রত্যাশা থাকবে আগামীতে যে দলের প্রার্থীরা সিংহাসনে বসবেন তারা তরুণপ্রজন্মর জন্য প্রচুর কর্মসংস্থান সৃস্টি করতে হবে এতে বেকারত্ব কমে আসবে,আইটি প্রশিক্ষনের সহজ ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন মৌলভীবাজার জেলার শিক্ষার হার ৫২.৬ এখানে পরিবর্তন করতে হবে। কারন এই আসনে ১৪টি চা বাগান রয়েছে এ জায়গায় শিক্ষার হার বাড়ানে অনেক জরুরী বলে মনে করি। হাকালুকি হাওড়উন্নয়ন,জলপ্রবাত,আগর-আতর শিল্প উন্নয়নে ভুমিকা পালন করতে হবে।সিলেট ফ্রিডম ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ ইমতিয়াজ কামরান তালুকদার বলেন
১৯৭১সালের ৩০লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে।২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত দিতে হয়েছে কিন্তু দুঃখের বিষয় আজকে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পরেও এই দেশের গণতন্ত্র সঠিক চর্চা চালু হয়নি।আমরা চাই উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিয়ে যেতে যে সরকার কাজ করবে তার পাশে আমরা সব সময় আছি। আমাদের ভাবনা দেশের উন্নয়ন দেশের রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট স্কুল কলেজ গরীব অসহায় মানুষের শিক্ষা বাসস্থান চিকিৎসা সবকিছুতেই সরকার তার নিজ গুণে অগ্রসর হবে।বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শ্রেণি বৈষম্যের সময়ে সেটা কতটুকু সম্ভব আসলে সময় এসেছে খতিয়ে দেখার।বিশেষ করে সাধারন জনগনের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে,দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।এমসি কলেজের শিক্ষার্থী,তাবাস্সুম তানহা বলেন আমি চাই ভোটের সময় যেভানে মানুষের প্রতিশ্রুতি দেন সেই প্রতিশ্রুতি যেন বাস্তবায়ন করেন সমাজকর্মী এম.এ.ওয়াহিদ চৌধুরী জানান, আমি একজন তরুন ভোটার। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে চাচ্ছি। সিলেটে বিগত দিনে যে উন্নয়ন হয়েছে, ভোটদানের মাধ্যমে আমরা সেই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে চাই। তাকেই ভোট দিবো যিনি আগামী দিনগুলোতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে। আল হুসাইন মাসুক জানান, নতুন ভোটার হলেও বিগত ১০ বছরে দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তা স্বাধীনতার পর থেকে উন্নয়নের মাত্রাকে অতিক্রম করেছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে যথাস্থানেই আমার মূল্যবান ভোট প্রদান করবো। আতিকুল ইসলাম হৃদয় জানান, বিগত দিনে সিলেট জেলায় যত সন্ত্রাস, রাহাজানি ও মাদকের বিস্তার ছিলো বর্তমানে তা কমে গেছে। এজন্য যাদের অবদান রয়েছে চিন্তাভাবনা করে তাদেরই ভোট দিবো। যাতে আমরা বিগত ১০ বছরের ন্যায় শান্তিপূর্ণ জেলায় বসবাস করতে পারি। নারী ভোটার সালমা আক্তার জানান, নতুন ভোটার হিসেবে আমার আকাঙ্খা এবং প্রত্যাশা দুটোই অনেক বেশি। অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং সুশৃঙ্খল একটি নির্বাচন প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি জেলার আরো উন্নতি দেখতে চাচ্ছি। আমরা নারীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। জেলার বিভিন্ন কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহণ অনেকটাই কম। নানান সেক্টরে নারীদের অগ্রসরতা দেখতে চাচ্ছি। এজন্য জেলা সদরে এমন একজন নেতাকে চাচ্ছি যিনি আসলে সৎ, ন্যায় পরায়ন, নীতিবান, আদর্শবান এবং কর্তব্য পরায়ন হবেন। যিনি আমাদের (নারীদের) প্রতিটি সেক্টরে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ দেবেন। সিলেটে অনেক সম্পদ ও সম্ভাবনা রয়েছে। যেগুলো উন্নয়নের ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফুটিয়ে তুলবে। পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং সুশৃঙ্খল একটি নির্বাচনের শতভাগ প্রত্যাশা করেন তিনি। মদন মোহন কলেজের শিক্ষার্থী রিমা খানম জানান, আমি নতুন ভোটার হিসেবে ভোট প্রদানের জন্য আমার মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। এমন একটা নির্বাচন হোক যে নির্বাচনে আমার মধ্যে যে আনন্দটা সে আনন্দটা নিয়েই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আবার নিরাপদে ফিরে আসতে পারি।শাবিপ্রবির নবীন জানান, আমাদের তরুন ভোটারদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ একটি ভোট উৎসবের। সুষ্ঠ, সুন্দর ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের বেকারত্বের সমস্যা যিনি দূর করবেন, শিক্ষা ক্ষেত্র এবং তৃণমূল রাস্তাঘাটের উন্নয়ন যিনি করবেন আমরা তাকেই ভোট দিবো। সুষ্ঠ-সুন্দরভাবে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফেরার প্রত্যাশা করেন তিনি। এছাড়াও নির্বাচিত সরকার যেন দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য কাজ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন নবীন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনে গত পাঁচ বছরে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৮ লাখ ৪০ হাজার ১৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৭৫ এবং নারী ভোটার বেড়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩১৭ জন।৪০টি উপজেলা, একটি সিটি করপোরেশন, ১৯টি পৌরসভা এবং ৩৩৮টি ইউনিয়ন নিয়ে সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসন। সিলেট বিভাগের চার জেলার ১৯টি আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৬৬ লাখ ২০ হাজার ৬০৬। এর মধ্যে পুরুষ ৩৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৫ জন এবং নারী ভোটার ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ২০১ জন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ১৯ আসনে মোট ভোটার ছিল ৫৭ লাখ ৮০ হাজার ৪১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৫৩০ এবং নারী ভোটার ছিলেন ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৮৪ জন। সিলেটের একটি সিটি করপোরেশন, ১৩ উপজেলা, ৪ পৌরসভা ও ১০৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার ২২ লাখ ৫২ হাজার ২৯৪ জন। এর মধ্যে ১১ লাখ ৫১ হাজার ৬৪৪ পুরুষ এবং ১১ লাখ ৬৫০ জন নারী ভোটার রয়েছে। কয়েক বছরে সিলেটের ভোটার বেড়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ২৫৫ জন।
মৌলভীবাজারের চার আসন সাত উপজেলা, ৫টি পৌরসভা ও ৬৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬ লাখ ৫১ হাজার ৭৯৫ এবং নারী ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৭৬ জন।সুনামগঞ্জের ৪টি পৌরসভা ১১টি উপজেলার ৮৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৫টি সংসদীয় আসন। এখানে ভোটার সংখ্যা ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ২২ হাজার ৬০৭ এবং নারী ভোটার ৮ লাখ ২৩ হাজার ৪৭০ জন।হবিগঞ্জে ৯ উপজেলার ৬টি পৌরসভা ও ৭৮ ইউনিয়ন নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন। এখানে ভোটার ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৪ জন। এর মধ্যে ৭ লাখ ১০ হাজার ৩৫৯ পুরুষ ও ৭ লাখ ১৫ হাজার ২০৫ জন নারী ভোটার রয়েছে।স্বাভাবিকভাবে নতুন ভোটাররা উল্লসিত। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে ও সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগ করা গেলে নতুন ভোটাররাই পার্থক্য গড়ে দিবে। সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আফজাল হোসাইন এই প্রতিবেদক কে বলেন মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠি বিচার করে তরুণ সমাজকে কাজে লাগাতে হবে।তরুণরা আজ হতাশ। শুধু বলা হয় তরুণরা সরকারি চাকরির আশা না করে উদ্যোক্তা হয় না কেন? কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শ্রেণি বৈষম্যের সময়ে সেটা কতটুকু সম্ভব আসলে? সময় এসেছে খতিয়ে দেখার। সময় থাকতে উদ্যোগ গ্রহণ না করলে একটা সময় তরুণদের সেই ক্ষোভের বিস্ফারণ ঘটবেই, সে যেই সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছরের নামে তরুণদের মেরুদণ্ড বাঁকা করে রাখা হয়েছে। দ্রুত এ ধরনের কালো আইন দূর করে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে তরুণদের বিভিন্ন দাবি দাওয়ার সাথে অবশ্যই সরকার বা বিরোধী জোটের সমর্থন দেয়া সময়ের দাবি বলে। তরুণ সংগঠক উত্তম দাস বলেন আমরা যারা নতুন ভোটার তারা দেশের কল্যাণ কামনা করি আমরা চাই স্বাধীনতার পক্ষের সংগঠন এবং গত দশ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে আওয়ামীলীগ সরকার আবার দরকার দেশের জন্য। এ বিষয়ে সিলেট আওয়ামী লীগের নতেৃবৃন্দরা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ইশতেহারের কাজ চলছে। অতীতের মতোই এবারো নতুন ভোটারদের নিয়ে পরিকল্পনা থাকবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল বাংলাদেশ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি নতুন প্রজন্মকে নাড়া দিয়েছিল। তারা আওয়ামী লীগের দিকে ঝুঁকেছে। সিলেটের ১৯ আসনে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ নতুন ভোটারদের টানতে বিভিন্ন কৌশল নেওয়া হয়েছে