ঐক্যফ্রন্টের আহ্বানে সাড়া দেয়নি ইসি তফসিল ৮ নভেম্বর ইভিএম থাকবে

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে আগামী ৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদা। ভাষণে নির্বাচনের বিস্তারিত তফসিল ঘোষণা করবেন তিনি। এর আগে চলমান সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট।

গতকাল রোববার নির্বাচন ভবনে কমিশনের পূর্বনির্ধারিত সভায় ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কমিশনার শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। তিনি আরও জানান, সভায় নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কতগুলো আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে শহর এলাকার কেন্দ্রগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এর আগে শনিবার ও গতকালের কমিশন সভায় প্রয়োজনীয় বিধিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে তা জারি করা হবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আপত্তি রয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর। তাদের এই আপত্তির মুখেই ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট ও দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সংলাপ চলছে। গত শনিবার ইসিকে দেওয়া চিঠিতে সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আহ্বানে গত ১ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপে বসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। সাত দফা দাবি জানান তারা। তাদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানান ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা। সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, ভোটে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার না করার দাবিকে সংবিধান-বহির্ভূত আখ্যা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই এগুলো মানা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তারা।

এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী জানান, ঐক্যফ্রন্ট চাইলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আবারও তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। সংলাপে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান ছিল তাদের।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আশাবাদী ইসি তাদের দাবি আমলে নিয়ে তফসিলের তারিখ পরিবর্তন করবে। তিনি বলেন, ‘ইসি তফসিল ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেছে মাত্র। এটার পরিবর্তনও হতে পারে। এরকম অনেক নজির ইতিহাসে রয়েছে।’

সমঝোতার জন্য ইসির অপেক্ষা করা উচিত ছিল বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্নেষক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনার পর সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। মানুষ স্বস্তিবোধ করছিল। আবারও সংলাপ হতে যাচ্ছে। ঐক্যফ্রন্ট তফসিল ঘোষণা না করার আবেদন করেছিল। এ অবস্থায় ইসি তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারত। তা না করে তফসিলের তারিখ ঘোষণা করায় সমঝোতার সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হলো। গণতন্ত্রের স্বার্থে ইসির দূরদর্শিতার পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল।

পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই গতকাল কমিশন সভায় বসে ইসি। সিইসি কে. এম. নুরুল হুদার সভাপতিত্বে এ সভায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী এতে উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে কমিশনের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। এ সময় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং জনসংযোগ পরিচালক যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

তফসিল পেছানোর আহ্বান জানিয়ে ইসিতে ড. কামাল হোসেনের পাঠানো চিঠি আমলে নেওয়া হয়েছে কি-না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে শাহাদৎ হোসেন বলেন, সব বিষয় বিবেচনা করেই কমিশন ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল।

ভোটের সম্ভাব্য দিনক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত সময়ের ব্যবধানের একটি মানদণ্ড রয়েছে। সাধারণত ৪৫ দিন বা তার কাছাকাছি সময়ের ব্যবধান রাখা হয়। তা মেনেই ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ৮ নভেম্বর সিইসি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিস্তারিত তফসিল ঘোষণা করবেন।

ইসি সংশ্নিষ্টরা জানান, ৪৫ দিনের ব্যবধানে ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারিত হয় আগামী ২২ ডিসেম্বর শনিবার। তবে সাধারণত শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে ভোট নেওয়া হয় না। তাই ২০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার অথবা ২৩ ডিসেম্বর রোববার ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারণ হতে পারে।

বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের কথা জানালেও কতদিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করা হবে তা নিশ্চিত করেননি শাহাদৎ হোসেন। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে নিষ্পত্তি হবে কি-না সে সিদ্ধান্ত কমিশন নেয়নি। তবে আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের বিষয় রয়েছে; বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শিগগিরই তা করা হবে।

বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।

৮ নভেম্বর ইসির তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত রাতে সমকালকে বলেছেন, এ ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

এবার ৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল :সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন সময় রেখে ভোটের তফসিল হয়েছিল। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম চালুর ৮ বছর পর প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে এ প্রযুক্তির ব্যবহার হবে।

ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে অধ্যাদেশ জারির চার দিনের মাথায় গতকাল মুলতবি সভায় বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে তা গেজেট আকারে জারি করবে ইসি সচিবালয়। ইভিএম বিধিমালা জারির মাধ্যমে নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের বিধি সংশোধন চূড়ান্ত হচ্ছে। ইভিএম বিধিমালা আইনি ভিত্তি পাওয়ায় সংসদ নির্বাচনে এর ব্যবহারের সার্বিক বিষয় চূড়ান্ত হলো।

নির্বাচন কমিশন বলছে, স্বল্প পরিসরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। তবে ঠিক কয়টি কেন্দ্রে তা ব্যবহার করা হবে তা কমিশনই চূড়ান্ত করবে। দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে এসব কেন্দ্র বাছাই করা হবে বলে জানিয়েছেন সিইসি।

এ বিভাগের অন্যান্য