এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন প্রাথীর্রা

ভাটি অঞ্চলের রাজনৈতিক সচেতন এলাকা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ-২ দিরাই-শাল্লার হাওরাঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জোটের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পথসভা ও গণসংযোগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তারা।

জোট-মহাজোটের বিভিন্নস্তরের নেতাকমীর্র সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মহাজোটের রয়েছেন একাধিক নবীন-প্রবীণ প্রাথীর্। তাদের অনেকে মাঠে কাজ করছেন।

বতর্মান সংসদ সদস্য প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধমির্র্ণী ড. জয়াসেন গুপ্তা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে সবার সহযোগিতা চাচ্ছেন।

অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী নিবার্চনকে সামনে রেখে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে পথসভা-গণসংযোগ ও জনসভা করছেন।

এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব যুক্তরাজ্য প্রবাসী মওলানা শুয়াইব আহমদ দেশে অবস্থান করে দলীয় ব্যানারে মিছিল-মিটিং করে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, নাছির উদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল। তিনি সমথর্কদের দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য মাঠে রয়েছেন সিলেট আইন মহাবিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ তালেব উদ্দিনের ছোট ভাই, সিলেট জজ কোটের্র অতিরিক্ত পিপি শামসুল ইসলাম। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নিবার্চন করার আশায় জনমত গড়ে তুলতে ত্রাণ বিতরণ, মসজিদ,-মাদ্রাসা-মন্দিরে মতবিনিময় ও বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগসহ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অবনী মোহন দাস, যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগ কাযর্করী সভাপতি সামছুল হক চৌধুরী, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার অনুক‚ল তালুকদার ডালটন, সিলেট এমসি কলেজের সাবেক ভিপি যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইকবাল হোসাইন ও প্রবাসী ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন।

অপরদিকে মহাজোট শরিক দল বাসদ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী আজহার, গণতন্ত্রী পাটির্ সিলেট জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক গুলজার আহমদ।

এ ব্যাপারে সামছুল হক বলেন, তিনি ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদশের্র রাজনীতি করে আসছেন। প্রবাসে থাকলেও দিরাই-শাল্লার মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থেকেছেন। তাদের প্রিয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর উপনিবার্চনে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন, কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। আগামী সংসদ নিবার্চনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন ’৯৬ সালের সংসদ নিবার্চনে জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পরাজিত করে দিরাই-শাল্লাবাসী এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল, আগামী নিবার্চনেও তারা ধানের শীষে ভোট দিয়ে অবহেলিত দিরাই-শাল্লাবাসীর সেবা করার সুযোগ দেবেন। এর আগে প্রিয় দিরাইবাসী তাকে দুইবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিবাির্চত করেছিলেন।

তিনি বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে নিবার্চন জমে উঠত, এবার জয়া সেনগুপ্তার সঙ্গে নিবার্চন খুব একটা জমে উঠবে না।

মওলানা শুয়াইব আহমদ বলেন, প্রবাসে থাকলেও ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি দিরাই-শাল্লার মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন, তার কষ্টাজিৃত অথর্ দিয়ে এলাকার গরিব-অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন, বিশেষ করে ২০০৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ফসলহারা কৃষকের সহায়তায় নিজেকে নিবেদিত করেন। এর আগেও তিনি ২০-দলীয় জোটের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, জোটের স্বাথের্ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এবার তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তার বিশ্বাস, জোট তাকে মনোনয়ন দেবে।

বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী আজহার বলেন, দিরাই-শাল্লা ছিল বাম রাজনীতির ঘঁাটি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নাছির উদ্দিন চৌধুরীসহ এই এলাকার অনেক নেতাই ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। অসা¤প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা ওই আসনে মহাজোটের প্রাথীের্ক নৌকা দিবেন; এ তাদের বিশ্বাস। ইকবাল হোসাইন বলেন, তিনি কলেজজীবনে সিলেট এমসি কলেজের ভিপি নিবাির্চত হয়েছিলেন, তার পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদশের্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তিনি দিরাই-শাল্লার গ্রাম-গ্রামান্তর চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, তাদের বতর্মান এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তার সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি ভদ্র ও ভালো মানুষ, কিন্তু পশ্চাতপদ অবহেলিত ভাটি অঞ্চলের মানুষের প্রতিনিধি করার মতো উদ্যম ও শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে বলে এলাকার সাধারণ জনগণ মনে করেন না।

অ্যাডভোকেট সামছুল ইসলাম বলেন, তিনি হাওরপাড়ের সন্তান হিসেবে দিরাই-শাল্লার মানুষের সঙ্গে রয়েছে তার আত্মার সম্পকর্। জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের হাত ধরে দিরাই-শাল্লা চষে বেড়িয়েছেন। প্রিয় নেতার মৃত্যুর পর নেতার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ করে যাওয়ার লক্ষ্যে গত উপনিবার্চনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। অবশেষে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিদেের্শ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।

সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ তালেবের ছোট ভাই শামসুল ইসলাম আরও বলেন, বড় ভাই হারানোর বেদনাকে বুকে ধারণ করে ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদশের্ রাজনীতি করে আসছেন। দলের দুঃসময়েও আদশর্ থেকে বিচ্যুতি হননি। তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

দিরাই-শাল্লার বতর্মান সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, দিরাই-শাল্লার মানুষ তাদের প্রিয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বার বার এমপি বানিয়েছেন। তাকেও তারা গত উপনিবার্চনে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, দিরাই-শাল্লার মানুষের সেবায় নিজেকে নিবেদিত রাখবেন।

তাহির রায়হান চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই দিরাই-শাল্লা উন্নয়নবঞ্চিত, হাওরের জনপদ দিরাই-শাল্লার উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নিবাির্চত হবেন। তিনি উন্নয়নবঞ্চিত দিরাই-শাল্লাবাসীর সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চান।

এ বিভাগের অন্যান্য