মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ পদে রদবদলের পরিকল্পনা
মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ পদে রদবদলের পরিকল্পনা
নপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদে রদবদলের পরিকল্পনা নিয়ে সরকারে কাজ চলছে। এই রদবদল স্বাভাবিক প্রক্রিয়ারই অংশ বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন। সূত্র বলছে, রদবদলের প্রক্রিয়ায় মূলত আগামী নির্বাচনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত মাঠ প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত থাকেন সেসব কর্মকর্তার পদে ক্ষেত্রবিশেষে পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতি) হারুন অর রশিদ ইত্তেফাককে বলেন, রদবদল পরিকল্পনা আছে। তবে এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে আছেন, বদলির সময় হয়েছে বা কেউ যদি এলাকায় বিতর্কিত হয়ে পড়েন, এমন কর্মকর্তাদের শনাক্ত করে রদবদল করা হয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, অতীতেও সব নির্বাচনের আগে, সব সরকারের আমলে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কিছুু পদে রদবদল করা হয়েছে।
জানা গেছে, ৪৯৫টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের কার্যক্রম এবং তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ইতোমধ্যে যাচাই বাছাই করা হয়েছে। কিছু কিছু ওসির জীবন বৃত্তান্তও সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকদের বিষয়টিও বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কিছু কর্মকর্তা প্রত্যাহার ও কিছু নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তবে এ পরিকল্পার বিপক্ষেও মতামত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন নির্বাচনের মাত্র দুই মাস বাকি থাকতে এমন করা হলে নতুন কারো পক্ষে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি, পরিবেশ বুঝে কাজ করা কঠিন হতে পারে। পাশাপাশি রদবদলের প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে অস্থিরতাও তৈরি হতে পারে।
অবশ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, মাঠ পর্যায়ে কিছু কর্মকর্তার পদে রদবদল হবে। সেটি কবে নাগাদ শুরু হবে বা কাদেরকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া বা প্রত্যাহার করা হবে সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে বর্তমান সংসদের অনেক এমপি যারা আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন এমন কেউ কেউ ইউএনও-ওসি বদলের চেষ্টায় বেশ তত্পর রয়েছেন। অনেক এমপিকে ফোনে বা সশরীরে এসে তদ্বির করতেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে কারো কথায় কিছু এখন পর্যন্ত করেনি, করবে বলে আশ্বাসও দিচ্ছে না। অনেকটাই পেশাদারিত্ব দেখিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্র বলছে, কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং তা প্রমাণিত না হলে কারো কথায় বা সুপারিশে কাউকে পদায়ন ও বদলি করা হবে না। তবে যেসব সুপারিশ আসছে সেগুলো নিজেদের মতো করে তারা পর্যালোচনা করছেন। নির্বাচনী সুবিধা পাওয়ার আশায় কোনো সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে না বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে যেসব কর্মকর্তা অতিমাত্রায় অপ্রয়োজনে দলীয় কাজে সম্পৃক্ত হয়েছেন তাদের বিষয়টি শৃঙ্খলাভঙের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করা হবে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন যদি কোনো কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয় সেক্ষেত্রে যাতে তাত্ক্ষণিকভাবে ওই আদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, সেজন্য উপযুক্ত কর্মকর্তার তালিকাও প্রস্তুত করে রাখার কাজ চলছে। পাশাপাশি নির্বাচনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, পর্যবেক্ষণ টিমের কর্মকর্তাদের তালিকাও প্রণয়নের কাজ চলছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, সংবিধান অনুযায়ী ইসি যে কোনো কর্মকর্তার প্রত্যাহার চাইতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারের জন্য সে আদেশ পালনের আবশ্যকতা রয়েছে।