একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ)

দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং ও প্রচারনায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
মিসবাহ উদ্দিন,(সিলেট)বিয়ানীবাজার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় তিন মাস বাকি। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা ইতোমধ্যে মাঠ গরম করে রেখেছেন। গণসংযোগ, পথসভা,পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীতার জানান দিচ্ছেন। সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে ইতোমধ্যে প্রায় ৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট ও বিএনপি সমর্থিত ২০ দলীয় জোট মিলে প্রধান দু’টি জোটের পক্ষ থেকে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দলের হাইকমান্ডে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ান না পেলেও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ন হতে পারেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,নির্বাচনে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) সংসদীয় আসনে প্রধান চারটি রাজনৈতিক দলই যোগ্য প্রার্থী দেবে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তো আছেনই। তবে তার বিপরীতে লড়তে ইতোমধ্যেই মাঠ প্রর্যায়ে প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন দলের সম্ভাব্য আরো কয়েকজন প্রার্থী। তারা হচ্ছেন তৃণমূল থেকে উঠে আসা কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেড নাসির উদ্দিন, যুক্তরাজ্য লন্ডন ছাত্র লীগের প্রতিষ্টাতা সাধারণ সম্পাদক ও লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফসার খান সাদেক, উপজেলা আওয়ামীলীগ এ সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজে ছাত্র সংসদরে সাবেক এ.জি.এস মোহাম্মদ জাকির হোসেন । তারা সকলেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। সরকার বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঘরেবসে নেই। এ দল ও একক প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা করছে। তবে দলের সম্ভাব্য প্রায় অর্ধডজন প্রার্থী বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। বিএনপির প্রার্থীরা হচ্ছেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা রশীদ আহমদ, সাবেক এমপি ড. মকবুল হোসেন, জাসাস কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী চিত্রনায়ক হেলাল খান, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহব্বায়ক শিল্পপতি ফয়ছল আহমদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ্এর সাংগঠনিক সম্পাদক এম.এন. শাওন সাদেকী তিনি তার দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে মোঠফনে জানান। এদিকে যুদ্বাপরাধের মামলায অভিযোযুক্ত জামায়াতে ইসলামী থেকে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের শুরা সদস্য সিলেট জেলা দক্ষিণ আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, জাতীয় পার্টি থেকে সেলিম উদ্দিন এমপি, সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ।
সম্ভাব্য প্রার্থীরা আসনের জন্য দুই উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন। নিজেদের দখলে মাঠ রাখতে প্রচারনায় নেমেছেন তারা। গনসংযোগ, উঠোন বৈঠক, বিয়ে-ধর্মীয়, সামাজিক অনুষ্ঠান সবখানেই পরিলক্ষিত হচ্ছে আংশিক প্রার্থীদের উপস্থিতি। অনেকেই শুধু প্রার্থী তালিকায় নাম প্রচারের জন্য ফন্দি-ফিকির করলেও অনেকে নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর পদে আসীন এই নেতা । স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় এই আসনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দুই যুগ আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সাবেক জেলা সভাপতি মরহুম লুৎফুর রহমান। এরপর বিভিন্ন জোটের শরিকদের জন্য বিএনপি এই আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল। তবে এবার বিএনপি নেতারা শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবার তারা নির্বাচন করতে পারবেন। এর কারণ হিসেবে তারা দেখছেন দুই উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীদের যোগফল ছিল সবার ওপরে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ও বিএনপি’র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয়কে তারা ইতিবাচক মনে করছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম দলের সভাপতি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এই আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে আসছেন। গত ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদের নিকটতম প্রতিদ্বদœী ছিলেন চারদলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান। নির্বাচনে পরাজিত হলেও বিগত দিনগুলোতে মাঠ ছাড়েননি তিনি। দলের সভা-সমাবেশ ছাড়াও ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকান্ডে- তার উপস্থিতি লক্ষণীয়। দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন জোটগত নির্বাচন হোক আর দলীয় হোক মাওলানা হাবিবুর রহমানই হবেন এই আসনের আগামী দিনে আওয়ামী প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। জাতীয় পার্টি থেকে বিগত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসন থেকে সংসদ সদস্য হন জাপা চেয়ারম্যন এরশাদের উপদেষ্টা বিয়ানীবাজারের সেলিম উদ্দিন। এই নির্বাচনের আগে থেকেই তিনি গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় পাটির মনোনয়ন চেয়ে কাজ করে আসছিলেন। দলের চেয়ারম্যান এরশাদ গোলাপগঞ্জে এক পথসভায় তাকে সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সিলেট-৫ আসন থেকে দলীয় টিকিটে এমপি হলেও বিগত দিনগুলোতে তিনি ছাড়েননি সিলেট-৬ আসনের এমপি হওয়ার প্রত্যাশা। তাই তিনি জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের পাশাপাশি গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারেও দলীয় এবং নির্বাচনী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে তিনি জাপার মনোনয়ন চাইবেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) থেকে এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার গুঞ্জন থাকলেও দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত কোন কোন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে পারেন ,এমন সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিতে পারছে না পর্যবেক্ষক মহল।

এ বিভাগের অন্যান্য