একাদশ সংসদ নির্বাচন ৩০ অক্টোবরের পর তফসিল
আগামী ৩০ অক্টোবর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার পর যে কোনো দিন তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণার ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের পাশাপাশি ভোটার তালিকার সিডিও প্রস্তুত করা শেষ পর্যায়ে। ভোটকেন্দ্রও চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর ভোটার তালিকার সিডি মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে। আর আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ভোটার তালিকার মুদ্রণের কাজ শুরু হবে। সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী এনে তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যদিও আরপিও’র কোন কোন ধারায় কি কি সংশোধনী চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না কেউই।
সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আগামী ৩০ অক্টোবরের পর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যাবে। ৩০ অক্টোবরের পর যে কোনো সময় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হতে পারে। নির্বাচন কমিশনই এ নিয়ে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেবে।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসেবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত তফসিল ঘোষণার পর ৪৫ দিন সময় রেখে সংসদের ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। এই হিসাবে নভেম্বরের প্রথমভাগে তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষভাগে ভোট হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, ১০ কোটি ৪০ লাখের বেশি ভোটারের তালিকার কাজ শেষ হয়েছে। ভোটার তালিকার সিডি করার কাজ শেষ পর্যায়ে। গত ৫ আগস্ট ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। দাবি আপত্তি শুনানি শেষে ভোটকেন্দ্র নীতিমালা অনুসারে সব ঠিক করে ৬ সেপ্টেম্বর মাঠপর্যায়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এখন সেগুলো কমিশনে পাঠাবে। তারপর সেগুলো যাচাই-বাছাই করে নির্বাচনের ২৫ দিন আগে ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করা হবে। ইতোপূর্বে ইসি সচিব জানিয়েছিলেন, সংসদ নির্বাচনের ভোটের সময় ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ধরেই সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল সোমবার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ইসি সচিব বলেন, সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ ভোটকক্ষ থাকবে। এক্ষেত্রে ৪০ হাজার প্রিজাইডিং অফিসারসহ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়ে সাতলাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রয়োজন হতে পারে।
আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবনা নিয়ে নিরবতা
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-১৯৭২ এর কোন কোন ধারায় কি কি সংশোধনী চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তা বলতে পারছে না কেউই। এ নিয়ে নিরবতা পালন করছেন ইসির সংশ্লিষ্টরা। একজন নির্বাচন কমিশনারের আপত্তির মুখে গত ৩০ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করে ইসি। ইতিমধ্যে সংশোধনী প্রস্তাব ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাতে ব্যালটের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আর কি কি সংশোধনী ইসি চেয়েছে, তা পরিষ্কার করছে না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে গোপনীয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, কোনো গোপনীয় বিষয় নয়। আরপিও সংশোধন প্রস্তাব ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভেটিং অনুমোদন হলে মন্ত্রী সভায়, সংসদে পাস হবে। তারপর সবাই জানতে পারবেন। সবকিছু আগ থেকে জানাতে হবে, এমন তো কোনো প্রবিধান নেই। এর আগে গত ৩০ আগস্ট সিইসি সংবাদ সম্মেলনে ইভিএম ব্যবহারসহ আরপিও সংশোধনের ছোটখাটো কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, সংশোধনীর মধ্যে মূলত ইভিএম প্রবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইভিএমের সঙ্গে আনুষাঙ্গিক কিছু সংশোধনীর সিদ্ধান্ত হয়েছে। জরুরি উল্লেখ করার মত সংশোধনী নেই। সংখ্যা কত তাও তার মনে নেই; তবে আট থেকে দশটার বেশি হবে না।
ইসির নির্বাচনী সামগ্রী ক্রয়
ইসি সূত্রে জানা যায়, শুধু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই নয়, এ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা নির্বাচনের মালামালও একই সাথে কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সিল, গালা, কালি ও কলম কেনা হচ্ছে ২২ কোটি ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ টাকার। লাল সিলিং গালা কেনা হচ্ছে ১৭ হাজার ৪৪০ কেজি। সেল্ফ ইনকিং স্ট্যাম্প প্যাড কেনা হচ্ছে ছয় লাখ ১৯ হাজার ৫০০টি। আরো কেনা হচ্ছে অফিসিয়াল সিল পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার, মার্কিং সিল ১১ লাখ ৫৬ হাজার, ব্রাশ সিল ৮৭ হাজার ১০০, অমোচনীয় কালির কলম ছয় লাখ ৬৫ হাজার এবং ব্যালট বাক্সের সিল লক ৩৪ লাখ ৪০ হাজার।
ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ২০ লাখ
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪৩ লাখেরও বেশি ভোটার থাকবে। গত দশম সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার এক কোটি ২০ লাখ ভোটার বেড়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট রয়েছে ৬৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনার চেয়ে আড়াই-তিনগুণ ব্যয় হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়। ছবিসহ ভোটার তালিকার পর নবম সংসদ নির্বাচনে ৮ কোটি ১০ লাখ ও দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটার ছিলেন।