সেপ্টেম্বরে ২১ আগস্ট মামলার শুনানি শেষের আশা
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার শুনানি এবছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে বলে আশাবাদী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। গত বছরও একই ধরনের আশাবাদের কথা শুনিয়েছিলেন তারা, কিন্তু হয়নি। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে এই মামলার রায় হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান জানিয়েছেন, “অচিরেই আমরা প্রতীক্ষিত এই দুই মামলার রায় পাচ্ছি।”
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন।
সন্ত্রাসবিরোধী ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
এ ঘটনায় পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
মামলার অন্যতম প্রধান আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হলেই রায়ের তারিখ আসবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা।
সৈয়দ রেজাউর বলেন, “বাবরের আইনজীবীর পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানির পর আমরা ল পয়েন্টে শুনানি করব। এর পরই রায়ের তারিখ আসবে।”
এই মামলার শুনানির পরবর্তী তারিখ ২৭, ২৮, ২৯ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত রয়েছে। বাবরের পক্ষে শুনানি করবেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম।
এই মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের পাশাপাশি আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরীর পাশাপাশি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার ও আব্দুর রহিমও এই মামলার আসামি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে এই মামলাটির তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে, যা পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে। জোট সরকার আমলের তিন তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন, মুন্সি আতিকুর রহমান ও আব্দুর রশীদ এখন আসামির তালিকায়।
থানা পুলিশ, ডিবির হাত ঘুরে সিআইডি এই মামলার তদন্তভার পায়। ঘটনার চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন মোট ২২ আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারও শুরু হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩ জুলাই আসামির তালিকায় আরও ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।
২০১২ সালের ১৮ মার্চ তারিখে তারেকসহ সম্পূরক অভিযোগপত্রের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। তারেককে পলাতক দেখিয়ে তখন অভিযোগ গঠন হয়েছিল। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউকও এই মামলার আসামি।
আসামিদের মধ্যে ভিন্ন মামলায় জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বাকি ৫০ আসামির মধ্যে বাবর, পিন্টুসহ ২৩ জন রয়েছেন কারাগারে; জামিনে আছেন সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম ও সাবেক ৩ আইজিপিসহ আটজন। তারেক, কায়কোবাদসহ পলাতক আসামি ১৯ জন।
খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক ডিসি (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান, সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ এই মামলায় আসামি।
আসামির তালিকায় থাকা জঙ্গিরা হলেন মাওলানা তাজউদ্দিন, শেখ আব্দুস সালাম, মো. আব্দুল মাজেদ বাট ইউসুফ, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ, আব্দুর রউফ ওরফে আবু ওমর হোমায়রা, আব্দুল হান্নান সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল বাবু।
পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে এই মামলার শুনানি নিচ্ছেন এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুরুদ্দিন। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলা দুটিতে রাষ্ট্রপক্ষে ৪৯১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।