যেভাবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করলেন আরিফ
অবশেষে দ্বিতীয় মেয়াদে সিসিকের মেয়র হলেন আরিফ
স্টাফ রিপোর্টার
১৮৭৮ সালে পৌরসভা গঠনের মধ্যদিয়ে সিলেট শহরের যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয় ১২৪ বছর বয়সী সিলেট পৌরসভা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে অর্থাৎ ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সিলেট পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ইতিহাসের একটি বিশেষ ধারাবাহিকতা রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা আরিফুল হক চৌধুরীর “নিশ্চিত জয়ে” রক্ষা হলা।ইতিহাসের এ ধারাবাহিকতা হচ্ছে, পৌরসভা চেয়ারম্যান ও সিটি মেয়ররা সবসময় তাদের আসন হারাতে হয়েছে নিজেদের অধীনস্থ কমিশনার ও কাউন্সিলরদের কাছে। আর কমিশনারদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া পৌর চেয়ারম্যানরা পরবর্তীতে আর কখনো বিজয়ী হয়ে পুনরায় ফিরতে পারেননি পৌরসভার শীর্ষ চেয়ারে। পৌরসভার ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অব্যাহত ছিল। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী বেসরকারিকভাবে বিজয়ী হয়েছেন। শনিবার সিসিকের স্থগিতকৃত দুটি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণ শেষে গণনার পর আরিফের বিজয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এ দুই কেন্দ্রের মোট ৪৭৮৭ ভোটের মধ্যে ১৬২ ভোট পেলেই আরিফের জয় নিশ্চিত হয়ে যেতো। তবে আরিফ দুই কেন্দ্র মিলিয়ে পেয়েছেন ২১০২ ভোট।সব কেন্দ্র মিলিয়ে প্রাপ্ত ফলাফলে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি থেকে ৬ হাজার ২০১ ভোট বেশি পেয়ে আরিফ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।নির্বাচনে সকল কেন্দ্র (১৩৪) মিলিয়ে ধানের শীষ প্রতিকে আরিফ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৮ ভোট।আরিফের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। নৌকা প্রতিকে তিনি পেয়েছেন ৮৬ হাজার ৩৯৭ ভোট।এদিকে, আজ পুনঃভোটে গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ২২২১ জন। এর মধ্যে আজ ভোট পড়েছে ১৩১২টি। তন্মধ্যে ধানের শীষে আরিফ পেয়েছেন ১০৪৯ ভোট, নৌকায় কামরান পেয়েছেন ১৭৩ ভোট।হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধানের শীষে আরিফ পেয়েছেন ১০৫৩ ভোট, নৌকায় কামরান পেয়েছেন ৩৫৪ ভোট।নির্বাচনের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান বলেন, ‘আজ পুনঃভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’গেল ৩০ জুলাই সিসিকের চতুর্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ১৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে অনিয়মের কারণে দুটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল। বাকি ১৩২টি কেন্দ্রে কামরানের চেয়ে ৪৬২৬ ভোটে এগিয়ে ছিলেন আরিফ। তবে স্থগিতকৃত ২৪নং ওয়ার্ডের গাজী বুরহান উদ্দিন গরম দেওয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ২৭নং ওয়ার্ডের হবিনন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র মিলিয়ে ভোট সংখ্যা ৪৭৮৭ হওয়ায় আরিফকে বিজয়ী ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা সিদ্ধান্ত নেয় পুনরায় ওই দুই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের।৩০ জুলাইয়ের ভোটে এগিয়ে থাকার পরও তাই অপেক্ষায় ছিলেন আরিফ। আজ অনুষ্ঠিত হওয়া ওই দুই কেন্দ্রের পুনঃভোট নিয়েও অনেকটাই নির্ভার ছিলেন তিনি। কেননা, বড্ড জটিল সমীকরণের মধ্যে আরিফকে টপকে জয় পাওয়া কামরানের জন্য রীতিমতো অসম্ভবই ছিল।
যেভাবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা রক্ষা করলেন আরিফ
১৮৭৮ সালে পৌরসভা গঠনের মধ্যদিয়ে সিলেট শহরের যাত্রা শুরু হয়। ২০০২ সালে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয় ১২৪ বছর বয়সী সিলেট পৌরসভা। দেশ স্বাধীনের পর থেকে অর্থাৎ ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সিলেট পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ইতিহাসের একটি বিশেষ ধারাবাহিকতা রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা আরিফুল হক চৌধুরীর “নিশ্চিত জয়ে” রক্ষা হলা।ইতিহাসের এ ধারাবাহিকতা হচ্ছে, পৌরসভা চেয়ারম্যান ও সিটি মেয়ররা সবসময় তাদের আসন হারাতে হয়েছে নিজেদের অধীনস্থ কমিশনার ও কাউন্সিলরদের কাছে। আর কমিশনারদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া পৌর চেয়ারম্যানরা পরবর্তীতে আর কখনো বিজয়ী হয়ে পুনরায় ফিরতে পারেননি পৌরসভার শীর্ষ চেয়ারে। পৌরসভার ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অব্যাহত ছিল। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিজয়ী ঘোষণা করা না হলেও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন কামরানের চেয়ে চার হাজার ৬২৬ ভোট বেশি পেয়ে এগিয়ে আছেন সিসিকের সদ্যসাবেক মেয়র ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।সিটি কর্পোরেশনের প্রথম পরিষদে আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদের অধীনে নগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। পরে ২০১৩ সালে কামরানকে পরাজিত করে মেয়র হন আরিফ। এই নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ায় ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় থাকল সিলেট সিটি কর্পোরেশনে।১৯৭৩ সালে কামরানের নির্বাচনী রাজনীতি শুরু। ওই সময় তিনি সিলেট পৌরসভায় কমিশনার পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। তখন পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন বাবুল। এ দফায় দায়িত্ব পালন করে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান কামরান। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনেও পৌর চেয়ারম্যান হন বাবুল। দেশে ফিরে ১৯৮৩ সালে ফের নির্বাচন করে কমিশনার হন কামরান, চেয়ারম্যান হন অ্যাডভোকেট আ ফ ম কামাল। ১৯৮৮ সালে কামরান আবারও কমিশনার হন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সেই কামাল।১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ওই সময় তার সাথে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বাবরুল হোসেন বাবুল ও আ ফ ম কামাল। এই দুজনের অধীনে পূর্বে কমিশনার ছিলেন কামরান। তবে বাবুল ও কামাল এই দুজনকেই পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন কামরান।সিটি কর্পোরেশন হিসেবে সিলেট মর্যাদা পাওয়ার পর ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সাথে আ ফ ম কামালও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু এখানেও কামালকে পরাজিত করে মেয়র হন কামরান। ২০০৮ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনেও কামরান বিজয়ী হন, পরাজয় বরণ করেন কামাল।বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী ২০০৩ সালে সিটি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তখন মেয়র পদে ছিলেন কামরান। নির্বাচনী এ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কামরান যাদের অধীনে কমিশনার ছিলেন, পরবর্তীতে তাদেরকে পরাজিত করে তিনি পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন।
কামরানের অধীনে আরিফ কাউন্সিলর ছিলেন, পরবর্তীতে কামরানকে পরাজিত করেই মেয়র হন আরিফ। এটাও দেখা যাচ্ছে, যেসব পৌর চেয়ারম্যান নিজের পূর্বের অধঃস্থন (কমিশনার) ব্যক্তির কাছে পরাজয় বরণ করেন, সেসব চেয়ারম্যান আর কখনোই এক সময়কার ওই অধঃস্থন ব্যক্তিকে পরাজিত করতে পারেননিএছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে সিলেট পৌরসভায় বাবুল ও কামাল দু’বার করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে দু’বার মেয়র হন একমাত্র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানই।