সময়ের শ্রেষ্ঠ সিলেট গড়ার প্রত্যাশার কথা জানালেন কামারন

অতিথি প্রতিবেদক:

উন্নয়নের জন্যই মানুষ নৌকায় ভোট দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি বলেন, নগরবাসীর সেবা প্রদানে সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।তার আমলে নগরীতে করা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ‘কসমেটিক’ ও লোক দেখানো উন্নয়ন বলেও অভিহিত করেন তিনি। কামরান বলেন, একটি রাস্তার উন্নয়ন করলেই মহানগরীর উন্নয়ন নিশ্চিত হয় না।একজন মেয়রের কাজ হবে সিটি কর্পোরেশনের সামগ্রিক এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের নিত্যনৈমিত্তিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।কামরান আরও বলেন, সুন্দর একটি পরিবেশের মধ্য দিয়ে সিলেটে নির্বাচনী প্রচার জমে উঠেছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে সিলেটের মানুষের প্রত্যাশা। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক, অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করাটা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার।আওয়ামী লীগের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখল করে ভোট প্রদানের পরিকল্পনার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।১৪ দলীয় জোটের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় স্বার্থে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে চাঙ্গা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে- জোটের শরিকদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কামরান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে ১৪ দল গড়ে উঠেছে, একটি অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে। ‘জোটের স্বার্থ জলাঞ্জলি’র বিষয়টি যারা বলেন, জানি না তারা কোন দৃষ্টিতে বলেন। তবে আমি মনে করি যে আদর্শ নিয়ে জোটের জন্ম হয়েছিল সেই লক্ষ্যে অবিচল আছে।আরিফুল হক চৌধুরীকে বাদ দিয়ে কামরানকে কেন মানুষ ভোট দেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে ভোট দেবে এই কারণে যে, সিলেটের মানুষের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। তাদের সুখ-দুঃখে পাশে ছিলাম। বিগত দিনে আমি সিলেটে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছিলাম, পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হয়েছি। এই সিটি কর্পোরেশনকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার যে দায়িত্ব সেটি আমি সঠিকভাবে পালন করেছিলাম। মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছিলাম।নগরীর মানুষ আমাকে অত্যন্ত মায়ামমতা করেন, আমি তাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি।’ জামায়াতের প্রার্থী আওয়ামী লীগের ডামি কিনা জানতে চাইলে কামরান বলেন, আওয়ামী লীগ তার সংগঠন নিয়েই কাজ করে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের নিজ দলের দায়িত্বশীল পদে থাকার পরও আমার ডামি প্রার্থী হবেন কেন?নগরীর সন্ধ্যাবাজারে ছড়ার পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি ছড়ার অবৈধ স্থাপনা নয়। সিটি পরিষদের সভায় অনুমোদন নিয়েই স্থাপনা করা হয়েছিল। মেয়র থাকাকালে ছড়া-খাল সংস্কার ও উদ্ধারের উদ্যোগ না নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার সময়ে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল ছড়া-খাল উদ্ধার ও সংস্কারের জন্য। এর মধ্যে ৯ কোটি টাকা পেয়েছিলাম। যা দিয়ে প্রতিটি ছড়া-খাল জবরদখলমুক্ত করে সংস্কার করা হয়।প্রতিটি ছড়ায় রিটেইনিং ওয়াল ও আরসিসি পাইপ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছিলাম। যা সম্পন্ন হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী নিজে পরিদর্শন করেছিলেন। সদ্য সাবেক মেয়র এই প্রকল্পের ২শ’ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পাওয়ার পরও দেখা গেছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা নিসরন হয়নি।ফুটপাত হকারমুক্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফুটপাত সাধারণ মানুষের হাঁটার জন্য। মেয়র নির্বাচিত হলে ফুটপাত হকারমুক্ত থাকবে। প্রয়োজনে হকারদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ফুটপাতে হকারদের বসতে দেয়া হবে না। বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মেয়র থাকাকালে নির্মিত লালদিঘি হকার মার্কেট আরিফের ভেঙে ফেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অশুভ চিন্তা-চেতনা থেকেই লালদিঘি হকার মার্কেট ভেঙে দেয়া হয়েছে। নতুন মার্কেট করে ভাগ-বাটোয়ারার পরিকল্পনা ছিল তার।সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন ওসমানী শিশু উদ্যান ব্যক্তিমালিকানায় চলে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথম দফা লিজের পর একাধিকবার লিজের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ হাইকোর্টে একটি মামলা থাকায় সেটি লিজমুক্ত করা যায়নি।’মেয়র থাকাকালে কয়েকশ’ লোককে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই সিটি কর্পোরেশনে চাকরি দেয়া প্রসঙ্গে কামরান বলেন, আমার সময়ে একটি লোকও কাগজপত্র ছাড়া নিয়োগ দেয়া হয়নি। সিটি কর্পোরেশনের কোনো কর্মকর্তা, কর্মচারী মারা গেলে তার সন্তানকে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে কাগজপত্রে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।আমি শুনেছি সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফ ৩-৪ মাসে ৫-৬শ’ মানুষকে চাকরি দিয়েছেন যার কোনো রেকর্ড নেই। যাদের বেতন দেয়া হয় সিটি কর্পোরেশন থেকে। সম্প্রতি শুনেছি সিটি কর্পোরেশন ১৭০ জনের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে।ওসমানী হাসপাতালে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সভা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরা এটি আয়োজন করেছে। আমরা সেখানে গিয়েছি। নিজস্ব উদ্যোগে আমরা সেখানে কিছু করিনি। এখানে অচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু নেই। সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর টানা ৪টি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বড় রাজনৈতিক দল।সেখানে অনেক প্রার্থী রয়েছেন। যেহেতু দল একজনকেই মনোনয়ন দেন। সেটা আমি পেয়েছি। যারা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তারাই এখন নৌকার বিজয়ের জন্য একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। এটাই আওয়ামী লীগের মূল বিষয়।টানা দুইবার নির্বাচিত হওয়ার পর তৃতীয় নির্বাচনে পরাজয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত নির্বাচনের সময় জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটি একটু ভিন্ন ছিল। আর হঠাৎ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় আমার সঠিক প্রস্তুতিও ছিল না। তবে এবার আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছি।ইনশাআল্লাহ নৌকার বিজয় হবে। সংগঠনে কোনো বিরোধ নেই দাবি করে কামরান বলেন, ইতিমধ্যে সিলেটে নৌকার পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছেন। আমি মনে করি আমাদের নেতারা যেভাবে কাজ করছেন বাকি ক’টি দিন যদি এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে নির্বাচনটা আরও সহজ হবে।আসন্ন নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে কামরান বলেন, নির্বাচনী প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নগরীর আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছি, মানুষের বাসা-বাড়িতে যাচ্ছি, পাড়া-মহল্লায় যাচ্ছি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছি। বিভিন্ন পেশাজীবী নেতার সঙ্গে মতবিনিময় করছি। আশা করছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা সিলেটসহ সারা দেশে উন্নয়নের যে জোয়ার সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি মানুষ আস্থাশীল হয়ে নির্বাচনে ইতিবাচক সাড়া দেবেন।

এ বিভাগের অন্যান্য