সিলেট সিটি কর্পোরেশন নিয়ে স্বপ্ন অনেক নগরবাসীর কাছে বাস্তবতা ভিন্ন।

 

মবরুর আহমদ সাজু

সিলেট সিটি কর্পোরেশন ২০০১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৭ সালে পৌরসভা গঠনের প্রায় ১৩৫ বছর পর ২০০২ সালে নগরীর মর্যাদা পায় সিলেট। ২০০৯ সালে মহানগরীতে উন্নীত হলেও আয়তনে তেমন একটা বাড়েনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই মহানগরী। সিসিক সূত্র জানায়, তৎকালীন পৌরসভার সীমানা আয়তন ২৬.৫০ বর্গকিলোমিটার নিয়েই ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয়। সে অনুযায়ী উত্তর সুরমায় ২৪টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমায় ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে ২০০২ সাল থেকে চলছে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় (সিসিক) ১৮৭ দশমিক ১২ বর্গকিলোমিটার আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে। জানাযায় ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। এরপর কেটে গেছে প্রায় দেড় যুগ। এখনো দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই চলছে নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ড। ২০১০ সালে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মেয়র থাকাকালে নগরীর উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) গ্রহণ করা হয়। তবে এই মহাপরিকল্পনাকে ত্রুটিপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত নয় দাবি করে গেলো পাঁচ বছরে সেটি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেননি সদ্যবিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ফলে কোনো মহাপরিকল্পনা ছাড়াই নগরীতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে দাবি করে নগরপরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এতে নগরবাসী সুফল সাময়িক পেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা দূর্ভোগেরই কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে সিলেট নগরীতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। এই সময়ে সড়ক সম্প্রসারণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল উদ্ধার, পানির সংকট দূর করতে উৎপাদন নলকূপ স্থাপনসহ নাগারিক সেবা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয় সিসিক। তবে বিরাট অংকের এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নেওয়া হয়নি কোনো সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা। ফলে এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের কার্যকারীতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নতি করার পর থেকেই এই নগরীর উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সচেতন নাগরিকরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মেয়র থাকাকালে ২০১০ সালে শেলটেকের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সিসিক সূত্রে জানা যায়, এই মহাপরিকল্পনায় সিলেটে কোনো সড়ক কতটুকু বড় হবে। কোথায় আবাসিক এলাকা হবে, বাণিজ্যিক এলাকা কোন দিকে গড়ে উঠবে। জলাশয়, খেলার মাঠের অবস্থা কেমন হবে সব উল্লেখ আছে। তবে পরিকল্পনাটি গ্রহণের পর আরও তিন বছর মেয়রের দায়িত্বে থাকলেও বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এটি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেননি। ২০১৩ সালের নির্বাচনে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সিসিকের মেয়র হন আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি পূর্বতন মেয়র গৃহিত মহাপরিকল্পনাকে ক্রটিপূর্ণ, বাস্তবায়ন অযোগ্য ও বাস্তবসম্মত নয় দাবি করে এটি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেননি। নতুন কোনো মহাপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়নি আরিফের মেয়াদে। ফলে পরিকল্পনা ছাড়াই চলেছে উন্নয়ন কাজ।প্রায় ২৭ বর্গ কিলোমিটারের সিলেট নগরীতে দিনদিন বাড়ছে জনসংখ্যা। সেই সাথে বাড়ছে নাগরিক চাহিদার পরিমাণ। তাই আগামী ৫০ বছরের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখনই সময়োপযোগী মহাপরিকল্পনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুর প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ৮ বছর আগে যে মহাপরিকল্পনাটি গ্রহণ করা হয়েছিলো তা তখনই বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন ছিলো। পরিকল্পহীনভাবে নগর বেড়ে উঠা ও উন্নয়নের ফলে এখন আর ওই মহাপরিকল্পনায় কাজ হবে না। কারণ গত আট বছরে নগরীর চেহারা অনেক বদলে গেছে। লোকসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ হয়ে গেছে। এখন দরকার নতুন মহাপরিকল্পনা। এখনই তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আবার যতক্ষণ পর্যন্ত নতুন মহাপরিকল্পনা হচ্ছে না তার পূর্বপর্যন্ত আগের মহাপরিকল্পনাটিই অনুসরণ করা দরকার। নইলে আমরা আরও পিছিয়ে যাবো।

আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। সাবেক দুই মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এবং আরিফুল হক চৌধুরী এবারও মেয়র পদে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি। নগরীর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে কি ভাবছেন তারা?

বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ২০১০ সালে যে মহাপরিকল্পনাটি অনুমোদন হয় সেটি ছিলো একেবারে অবাস্তব ও অপরিকল্পিত। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সাথে আমি এটি নিয়ে পরামর্শ করেছি। তাঁরা সকলেই বলেছেন এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নযোগ্য নয়।তিনি উদহারণ দিয়ে বলেন, ওই মহাপরিকল্পনায় উল্লেখ্য আছে আম্বরখানা-কোর্টপয়েন্ট সড়ক হবে ৮০ ফুট প্রশস্ত ও গোলচত্বরগুলো হবে ১২৫ ফুট প্রশস্ত। এখন এটি করতে হলে সিলেট নগরীর বেশিরভাগ বাণিজ্যিক ভবনই ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এটা কিভাবে সম্ভব?তিনি বলেন, এই মহাপরিকল্পনাটি পুণর্বিবেচনার জন্য আমি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিউত্তর পাইনি। এবার নির্বাচিত হলে আমি একটি বাস্তবসম্মত, আধুনিক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবো। এবং সে অনুযায়ীই উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাবো।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, অনেক শ্রম ও সময় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে আমি একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করি। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমি সেটি বাস্তবায়নের সুযোহগ পাইনি। গত নির্বাচনে যিনি বিজয়ী হন তিনিও এই মহাপরিকল্পনা অনুসরণ করেননি। আগামী ৫০ বছরের কথা ভেবে এই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিলো দাবি করে কামরান বলেন, এটি বাস্তবায়ন করা গেলো সিলেট নগরী একটি নতুন রূপ নিতো। আগামীতে নির্বাচিত হলে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন কামরান।

এ বিভাগের অন্যান্য