আওয়ামীলীগে ঐক্য ঘর গোছাতেই ব্যস্ত বিএনপি জামায়াতের চ্যালেঞ্জ
অতিথি প্রতিবেদক:
সিলেট সিটি নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান দুই জোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মেয়র পদের লড়াই নিয়ে মুখোমুখি। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনী কৌশলে এগিয়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গণসংযোগ ও প্রচারণায় তারা ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএনপি এখনও পিছিয়ে। বিএনপির জন্য প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও জোটের শরিক জামায়াত। কেন্দ্রে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপি-জামায়াত উপস্থিত থাকলেও সিলেটের চিত্র ভিন্ন। সিলেটে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে মতবিনিময়ে বিএনপি-জামায়াত পরস্পরকে দাওয়াতই দিচ্ছে না। ফলে বিএনপির ডাকা জোটের বৈঠকে জামায়াত এবং জামায়াতের ডাকা মতবিনিময়ে বিএনপির কেউ যাচ্ছেন না।
শুধু তাই নয়, ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ করে চলছে জামায়াত। নাগরিক ফোরামের ব্যানারে প্রার্থী হওয়া মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে নিয়েই তারা ব্যস্ত। পাশাপাশি দলের সর্বোচ্চ ফোরাম বিএনপির কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পরও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে। খোদ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা বিদ্রোহী বদরুজ্জামান সেলিম নিজের প্রার্থিতা নিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে সক্রিয়। আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে নিয়ে ১৪ দল যেখানে সক্রিয় সেখানে বিরোধীদের দল ও জোটের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মাঠে তৎপর দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। ফলে বিদ্রোহী বদরুজ্জামান সেলিম ও জামায়াতের অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের তৎপরতা পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর জন্য।
নাগরিক পরিষদের ব্যানারে মেয়র প্রার্থী হওয়া মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, আমি ৩৯ বছর রাজনীতি করেছি, আর ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য চাপ নয়, আমার ওপর মহাচাপ যাচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু আমি অনঢ় আছি থাকব। দল চাইলে বহিষ্কার করতে পারে, করুক। দল ছাড়লেও মাঠ ছাড়ব না। তাছাড়া আমি বিএনপির পদে থাকলেও বিদ্রোহী নয়, নাগরিক পরিষদের ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ থাকতেই পারে। ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া এখনই শেষ নয়, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় হাতে রয়েছে। আগামী ৯ জুলাই মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। অপর এক সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপির সভা বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলেও বিদ্রোহী দমনে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর ও ২০ দলীয় জোট সিলেটের সদস্য সচিব হাফিজ আবদুল হাই হারুন বলেন, কেন্দ্রীয় ২০ দলীয় জোট বরিশাল ও রাজশাহীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলেও সিলেটের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তিনি বলেন, জামায়াত অনেক ছাড় দিয়ে গেছে, আর নয়। সিলেট আমরা চাই। এখন বিএনপি আমাদের অপেক্ষায় থাকা ঠিক নয়, আমরাই তাদের ছাড়ের অপেক্ষায় আছি। যদি তারা ছাড় নাও দেন তারপরও আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব না।
এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলে কোনো দ্বন্দ্ব-বিভক্তি বা ভুল বোঝাবুঝি নেই। সবাই একাট্টা। খোদ যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তারা দলের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে এখন মাঠে ব্যস্ত।
এদিকে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট যখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ঠিক এমন সময়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় বুধবার রাতে। এতে বক্তারা বলেন, সরকারের নির্বাচনী মূলার ফাঁদে পা দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন না করে এসব প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারের হাত শক্তিশালী করা হচ্ছে। জনগণ আর এসব দেখতে চায় না। জনগণের মনের ভাষা বুঝতে হবে। অক্টোপাসের নাগপাশ থেকে দেশ ও গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কঠোর আন্দোলন এখন মূল এজেন্ডা হওয়া উচিত। নগরীর মিরাবাজারে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান।
সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শেখ মোঃ মকন মিয়ার সভাপতিত্বে ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আজমল হুসেন রায়হান ও মতিউল বারী খুর্শেদের যৌথ পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন আশুক ও সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নাজিম উদ্দিন লস্কর মহানগর তাঁতীদনের সভাপতি ফয়েজ আহমদ দৌলত, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাউন্সিলর দিনার খান হাসু প্রমুখ।