ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা, আমরা বনাম তোমরা য

যাদের ‘আত্মীয়রা’ এবার বিশ্বকাপে খেলছে, মানে যারা নিজেদের ব্রাজিল আর্জেন্টিনা বা জার্মানির আত্মীয়-স্বজন ভাবতে পছন্দ করেন তাদের বলব ফুটবলের যে স্প্রিরিট, সেটা একটু বুঝে শুনে খেলা দেখলে আর সমর্থন করলে ভালো হয়। আমাদের আচরণ দেখে ‘আত্মার আত্মীয়’ না ভেবে আর পারা গেল না। কারণ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না হলে আমরা অতি কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে এভাবে মারামারি করতাম কি?

বলা বাহুল্য আমিও একটি দলের সমর্থক, কিন্তু তাই বলে পাগল কিংবা ছাগলের মতো আচরণ করাকে সমর্থন করতে পারি না।

আমি মনে করি মেসি, নেইমার, রোনালদোরা খেলে বলেই ফুটবল খেলা দেখতে আনন্দ। যদি সৌদি আর পানামা ফাইনাল খেলে তাহলে কতজন খেলা দেখবে?

খেলার উদ্দেশ্য হলো ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব। যেকোনো খেলা মানুষকে উন্নত হতে শেখায়, ভালো হতে শেখায়। আমাদের উন্মত্ততা, উম্মাদনা, গালাগালি অমন অসহনীয় পর্যায়ে গেছে যে মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না আমরা খেলা থেকে কি কিছু শিখি? নাকি মাঝে মধ্যেই আমাদের ভেতরকার জানোয়ারটা থলে থেকে বেরিয়ে আসে শুধু একটু উপলক্ষ পেয়ে।

সত্যিকার অর্থেই ভাবনার বিষয়, আমাদের মনোজগতের কাঠামো নিয়ে। আমরা যার প্রেমে পড়ি তাকেই কখনো কখনো এসিড মারি, ধর্ষণ করি। ভিন্ন মত পোষণ করলে বন্ধুত্ব ত্যাগ করি। শুধু তাই নয়, বন্ধুত্ব নিমিষেই শত্রুতায় পরিণত হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিঃশেষ করা নিশ্চিহ্ন করাই রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য হয়ে গেছে এমনটাই মনে হয় যেন।

কোথায় ব্রাজিল, কোথায় আর্জেন্টিনা। আর আমরা প্রতিবেশী ভাই বোন বন্ধুর সঙ্গে কামড়া-কামড়ি করছি। হাতাহাতি, মারামারির মতো ঘটনাও ঘটছে। আর এর মধ্য দিয়ে এত বড় একটা আনন্দঘন উৎসবের আমেজটুকু তেতো করে দিচ্ছি।

আসেন যার যার দলকে সমর্থন করি, তাই বলে অন্য কাউকে হেয় করে গালাগাল দিয়ে অপমান করে তাদের সমর্থক আপনার ভাই বন্ধুদের হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে বিরত থাকি। তবেই এই উৎসব আমেজে সবাই একসঙ্গে শিশুর মতো আনন্দে উদ্বেলিত হতে পারব, উপভোগ করতে পারব। খেলা একটি নির্মল আনন্দের বিষয়, এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।

এ বিভাগের অন্যান্য